X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তনু এবং গণমাধ্যমের পরাধীনতা

তুষার আবদুল্লাহ
২৬ মার্চ ২০১৬, ১৩:২১আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৬, ১৩:২১

তুষার আবদুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবারও জয়ী হলো। মূলধারার গণমাধ্যম নতজানু হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে। সোহাগী জাহান তনুকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে,এই খবরটি নিজে থেকেই অনেকটা হজম করে নিতে চেয়েছিল মূলধারার গণমাধ্যম। অপ্রকাশ্য ইশারা- ইংগিতে তনু হত্যার খবরের হত্যা হয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে। খবরটি সাধারণের কাছে পৌঁছে ফেইসবুকের মাধ্যমে। সারাদেশ তনু হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয় ফেইসবুকের মাধ্যমেই। দেশের সচেতন বা সংস্কৃতমনা শ্রেণীর দাবিদার গোষ্ঠীও প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিলনা, এই পরিস্থিতিতে কোন পক্ষে যাবে। বিশেষ করে ঘটনাটি যখন ঘটেছে সেনানিবাস এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসনও মৌনতা অবলম্বন করেছিল। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তনু হত্যার প্রতিবাদের যে সুনামি বইতে শুরু করে, সেই সুনামি শক্তি যোগায় স্থানীয় প্রশাসনকে যেমন, তেমনি সচেতন ও সংস্কৃতিমনা দাবিদার গোষ্ঠীকেও। ফলে প্রতিবাদ ফেইসবুক থেকে রাজপথে গড়ায়।
মূলধারার গণমাধ্যম বরাবরই নানা দিকের সংকতের অপেক্ষায় থাকে। সবুজ, হলুদ, লাল দেখে অবস্থান নেয়। তনু হত্যার পর মূলধারার গণমাধ্যমের হলদে অবস্থান ছিল। অনেকে একেবারেই খবরটি হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার দুই-একটি গণমাধ্যম দায়সারাভাবে খবরটি প্রকাশ করে। যদি এই ঘটনাটি সেনানিবাস এলাকার বাইরে ঘটতো তাহলে, খবরটি যেভাবে উপস্থাপন করা হতো, গণমাধ্যমের কণ্ঠ যতোটা সোচ্চার থাকতো, সেই তুলনায় তনু হত্যার ঘটনায় মূলধারার গণমাধ্যমকে মৌনই দেখা গেছে। তবে সেই মৌণতা ভেঙেছে ফেইসবুকের ঝাঁকুনিতে।
আমি অবাক হয়েছি তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা দেখে। ঘটনাটি না হয় সেনানিবাস এলাকাতেই ঘটেছে। ঘটনার সঙ্গে সেনাসদস্যদের কেউ জড়িত থাকতে পারে। এই দায়তো কেবল সেনানিবাস বা সেনা কর্তৃপক্ষের নয়। সেনানিবাসের দেয়ালের ভেতরে এবং বাইরে নষ্ট মনের মানুষ থাকতেই পারে। তাদের সনাক্ত করা জরুরি। যে বা যারা তনুকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে, তাদের যদি চিহ্নিত করে শাস্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি সাধারণকে দ্রুত জানানো হতো, তাহলে প্রশাসনের প্রতি বা দেয়ালে ঘেরা এলাকাটির প্রতি মানুষের আস্থা আরো বেড়ে যেতো। কারণ. সাধারণ জনগণের অনেক সংকটের সময়ও তারা পাশে এসে নিরাপত্তা দেন। সুতরাং তাদের প্রতি আস্থা হারানোর কোন কারণ ছিলনা। আমি এখনো মনে করি, সময় ফুরিয়ে যায়নি। কর্তৃপক্ষ দায়ী ঘাতককে জনসম্মুখে এনে ভেতর-বাইরের অপরাধিদের সতর্ক করবে।

ফেইসবুকে যেমন তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে সমাজের নানা শ্রেণী ও মতের মানুষ সোচ্চার, তেমনি একটি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কও চলছে। ঐ বিতর্কে খুব কম মানুষ যোগ দিয়েছে তা বলা যাবেনা। তনু হিজাব পড়তো। একটি পক্ষ বলার চেষ্টা করছে, হিজাবও ঘাতক, ধর্ষকদের কাছ থেকে রক্ষা করতে পারেনি তনু'কে। তবে কেন যৌন নিপীড়ন এড়াতে হিজাবের দিকে ঝুঁকছে মেয়েরা। আমি মনে করি, মেয়ে কোন পোশাক পড়ছে বা পড়বে তা বিবেচনার বিষয় নয়। যে বা যারা মেয়েদের যৌন নিপীড়ন করার কথা ভাবে, তারা যে কোনও পোশাকে আচ্ছাদিত মেয়েকে একই দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এই বিতর্ক তুলে দোষী ঘাতককে প্রকাশ্যে আনা এবং শাস্তি দেওয়ার দাবিকে লঘু করার সুযোগ নেই। পোশাক কথাটির আগে বরাবরই পরিশীলিত বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। সেদিকে খেয়াল রাখলেই হবে। অবশ্য তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছ সকলের চোখ পরিশীলিত করা।
অনেক বিতর্ক, দ্বিধা রাখার পরেও এখনও কেন যেনো স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে-প্রচলিত মূলধারার গণমাধ্যম এখন আর গণমানুষের নেই। ফেইসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেই জায়গাটি নিয়ে নিয়েছে। হয়তো এখানে দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন গণমাধ্যম বোদ্ধারা।

স্বাধীনতা দিবসে গণমাধ্যমের এই পরাধীনতা,আমাকে পীড়িত করছে। আপনাকে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ