X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

আনিস আলমগীর
২৬ মার্চ ২০১৬, ১৬:৪০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৬, ১৭:১৬

আনিস আলমগীর কঠোর পরিশ্রম যে একজন লোকের জীবনের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, আর সে লোকটি যদি কোনও জাতির নেতৃত্বে থাকে, তবে সেই লোক জাতির ভাগ্য ফেরাতে পারে- তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩৬ বছর ধরে তিনি একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের প্রধান। সভাপতি হিসেবে তিনি গঠনমূলক রাজনীতির সূচনা করার চেষ্টা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৩ বছর ধরে দেশকে গঠনমূলক ধারায় পরিচালিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তাতে সাফল্য এসেছে অচিন্তনীয়ভাবে। শেখ হাসিনা তার কাজের জন্য বার বার বিশ্বের দরবারে নিজেও প্রশংসিত হয়েছেন আবার দেশকেও উচ্চভাবে মূল্যায়ন করার জন্য তৈরি করে বিশ্বদরবারে পেশ করেছেন।
রাজনীতিতে বিরোধী শক্তি থাকবে- গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই নিয়ম। বিরোধীশক্তি আর ক্ষমতাসীনশক্তি উভয়কেই গঠনমূলক আচরণ করতে হয়। এর ভিন্নতা হলে জাতির উন্নয়নের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমরা মাঝে মাঝে সেরকম একটি অচলায়তনের সম্মুখীন হই। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতির একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে সফল হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজ ছিল রাজনীতি প্রভাবিত সমাজ। রাজনীতি সমাজটাকে পরিচালিত করতো। এখন কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সমাজটাকে প্রভাবিত করার অস্ত্রটাকে ভোতা করে দিয়েছেন। এখন সমাজকে প্রভাবিত করছে ব্যবসা। ব্যবসাই ধীরে ধীরে সমাজটাকে পরিচালনার চেষ্টা করছে। শতাংশে সফল না হলে এই কাজে ব্যবসা সিংহভাগ সফলতা পেয়েছে বলে আমার ধারণা। ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে প্রচণ্ড হিংসাত্মক আন্দোলন হলেও সমাজের মানুষ তাতে অংশ নেয়নি, ময়দানে আসেনি। অথচ ৫ বছর আগেও আমাদের সমাজে রাজনীতির সুড়সুড়ি এতো প্রখর ছিল যে, মানুষ রাজনীতির ছোঁয়ায় ময়দানে এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিত।

রাজনীতি যারা বিশ্লেষণ করেন, সম্ভবত তেমন কারও পরামর্শে অথবা বিরোধীশক্তি নিজেই উপলব্ধি করছে যে, বাংলাদেশের সমাজ নিয়ন্ত্রণের অনুঘটকের পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতির স্থলে সেখানে ব্যবসা এসেছে। যে কারণে বিরোধী বিএনপি গত ১৯ মার্চ তাদের ৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে উথাল-পাথাল সৃষ্টির কোনও বাড়াবাড়িতে জড়িত হওয়ার অভিলাষ ব্যক্ত করেনি। জাতি কারও একার নয়। সামগ্রিক জাতীয় উন্নতির প্রচেষ্টায় শাসক গোষ্ঠী আর বিরোধী গোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রয়াসে উন্নয়ন বেগবান হয়। এই উপলব্ধি সবার মাঝে সৃষ্টি হলে জাতীয় উন্নতি সহজতর ও দ্রুততর হবে।

শেষ হাসিনা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। গত ২৫ মার্চ পত্রিকায় খবর বের হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম গ্রুপের বাণিজ্যিক ম্যাগাজিন ‘ফরচুন’ এক জরিপের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের ৫০ জন সেরা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল এক নম্বরে, মায়ানমারের অংসান সূচি তৃতীয় নম্বরে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দশম স্থানে রয়েছেন। উপমহাদেশের থেকে ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালেরও সেখানে স্থান হয়েছে, তবে মোদি স্থান পাননি।

আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। তার কর্ম উদ্যোগের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন এই কামনাও করি।

শেখ হাসিনা বৈশিষ্ট যে তিনি শৃঙ্খলার সঙ্গে গুছিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেন। কোনটা আগে আর কোনটা পরে করবেন সে ব্যাপারে তার টাইম সেন্স প্রখর। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি সবার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যখন জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হন তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল। উপজাতিদের ‘অপরাধ’ ছিল তারা সেখানে অ-উপজাতিদের বসতির বিরোধিতা করেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, পার্বত্য এই নৃগোষ্ঠীকে নিজ এলাকায় সংখ্যালঘুতে পরিণত করার জন্য বাঙালিদের বসতির ব্যবস্থা করেছিল সরকার। এজন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। উপজাতিদের এই আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করেছেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কয়েকশত হ্যাডম্যানকে দাওয়াত দিয়ে হত্যার অভিযোগ ছিল তার সরকারের বিরুদ্ধে। তখন হাজার হাজার উপজাতি ভারতে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ ১০ বছর তারা ভারতের মাটিতে অবস্থান করে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় সর্দার প্যাটেল পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতভূক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু চারমা, লারমা, মারমা রাজার ইচ্ছে অনুযায়ী তারা পূর্ব বাংলার সঙ্গে থেকে যান।  আর স্বাধীন বাংলাদেশে এসে তাদেরকে বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হলো। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে তার সরকার উপজাতিদের সংগঠন জনসংহতির সঙ্গে এক সফল চুক্তি সম্পাদন করে এবং উপজাতি উদ্বাস্তুদের ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশ সরকার পুনঃর্বাসনের জন্য তাদের পরিবার প্রতি ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেছিল।

এতোদিন যদি সমস্যাটি জীবিত থাকতো হয়তোবা ঘাত-প্রতিঘাতে এটি ফিলিস্তিনের সমস্যার মতোই সমস্যা হয়ে দাঁড়াতো আমাদের জন্য। বাংলাদেশের উন্নয়ন পিছিয়ে যেত। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের উদ্যোগের কারণে এবং উদ্যোগ সফলকাম হওয়ায় সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হয়নি। এই সমস্যা সমাধানের পর অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো শেখ হাসিনাকে নোবেল প্রাইজ প্রদান করা হবে। কারণ এর চেয়ে ছোট ঘটনায়ও অতীতে নোবেল প্রাইজ প্রদান করা হয়েছে।

যাক, যেভাবে অগ্রসর হচ্ছেন তাতে জনতার নোবেল এবং প্রকৃত নোবেল একসঙ্গে পাবেন তিনি। আমরাও তাই কামনা করি। নোবেল যারা পাচ্ছেন তারা তৃতীয় গ্রহের কেউ নন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দূর্যোগের যেই ঘণঘটা বাংলাদেশের দরজায় কড়া নাড়ছে, যেই সরকার সফলতার সঙ্গে এই দূর্যোগটা মোকাবেলা করতে পারবে সেই সরকারের প্রধানতো নোবেল প্রাইজ আশা করতেই পারেন।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ