X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান: লাহোর থেকে শিক্ষা নিন

নাদীম কাদির
৩০ মার্চ ২০১৬, ২১:০১আপডেট : ৩০ মার্চ ২০১৬, ২১:০৪

নাদীম কাদির বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করতে ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে জড়ো হয়েছিলেন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ। এর কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের ৪৬ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এটা একটা বার্ষিক  অনুষ্ঠান।
এক পাশে আসন গ্রহণ করেন বাংলাদেশের কূটনীতিক ও হাই-কমিশনের কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন নির্বাচিত অতিথি আর শিশু গায়কদল। সামান্য দূরত্বেই ছিলেন বাকিরা। কিন্তু শিশু গায়কদল যেভাবে গাইছিল তাতে আমাদেরও উঠবস করতে হয়েছিল। আহ্! কী শান্তি! আমি সেখানে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতি দেখেছি। অন্ততপক্ষে কিছু মুসলিম এবং একটা বড় সংখ্যক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ ‘সর্বশক্তিমান প্রভু’র দরবারে একটি অপেক্ষাকৃত ভালো জীবন এবং একটি অপেক্ষাকৃত ভালো  পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করেছেন।
আমরা যদি এখানে লন্ডনে এটা করতে পারি, তাহলে বিশ্বের অন্যত্র কেন নয়? বিশেষ করে লাহোরে; যেখানে কাপুরুষোচিত বোমা হামলায় প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিলেন নিষ্পাপ শিশু।
পাকিস্তানের একটি গ্রুপ দায় স্বীকার করে বলেছে, খ্রিস্টানদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের ১৯৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এটা ছিল স্টার হলিডে এবং তারা ইসলামের নামে শিশুদের হত্যা করেছে। খ্রিস্টানরা বা তাদের শিশুরা তোমাদের কী করেছে? এটা দুঃখজনক যে, তারা তাদের অনেক মুসলিম ভাইকেও হত্যা করেছে।
পাকিস্তানে প্রায়ই কঠোর ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা নিরোধ আইন) আইনে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন দেশটির খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। ওই আইনে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
ওপেন ডোরস নামের একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার হিসাবে, দুনিয়ার যেসব দেশে খ্রিস্টানরা ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন দেশগুলোর তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান ৬ষ্ঠ।
লাহোরে মায়েরা যখন কাঁদছিলেন তখন আমার মায়ের কথা মনে পড়ছিল; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে স্বামীর মৃত্যুর পর আর কখনও যার কান্না থামেনি। আমার মনে পড়েছিল আমার ছোট ভাইয়ের বেদনার কথা, তার যখন জন্ম হয় তখন বাবা তার পাশে ছিল না। মনে পড়ে কীভাবে বাবাহীন অবস্থায় পৃথিবীতে একটি শৈশব ও যৌবন হারিয়েছি আমি।
একমাত্র সুখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের রয়েছে বাংলাদেশ। তবে আমরা এখনও পাকিস্তানপন্থী উপাদানগুলোর সঙ্গে লড়াই করছি যাদের ১৯৭১ নিয়ে কোনও অনুভূতি নেই এবং তারা স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে লাভবান হচ্ছেন। এই তথাকথিত জিহাদিরা পাকিস্তানি ভাবাপন্ন এবং তাদের মতাদর্শ ওই দেশটি কর্তৃক বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এটা প্রমাণিত হয়েছে। তারা ইসলামের নামে এবং তাদের ধাঁচের রাজনীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে একটি তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
এ হত্যাকাণ্ডে সমবেদনা জানিয়ে নিজের পাকিস্তানি সমকক্ষ নওয়াজ শরিফের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নওয়াজ শরিফ দ্রুত তার ক্ষমতার কেন্দ্র লাহোরে ছুটে গেছেন। অশ্রুসিক্ত পরিবারগুলোকে তিনি সান্তনা দিয়েছেন। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি এসব মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য তার ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত।
ব্রুকলিনভিত্তিক ধর্মীয় সংস্থা এইড টু দ্য চার্চ ইন নিড-এর জন পন্টিফেক্স বলেন, পাকিস্তান সরকার যদি চরমপন্থাকে নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে ‘পাকিস্তান শিগগিরই খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় যুক্ত হবে।’

পাকিস্তান এখনও বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেনি এবং ওই দেশের জনগণের পক্ষ থেকে ক্ষমাও চায়নি। যতদিন পর্যন্ত ইসলামাবাদ ক্ষমা না চাইবে এবং অন্যত্র, বিশেষ করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ রফতানি করা বন্ধ না করবে ততদিন পর্যন্ত ১৯৭১-এর প্রেতাত্মা সেখানে বিচরণ করবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা বাংলাদেশে তাদের প্রভাব হারিয়েছে।

একটা ভবিষ্যদ্বাণী? একদমই না। এটা অপরাধ ও ভুলগুলোর ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্লাহ’র শিক্ষা। বাংলাদেশের ৩০ লাখ শহীদ হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের কথা তারা ভুলে যাননি। শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাদের ‘দুঃখিত’ বলার বোধোদয় হয়। তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধাপরাধের দায়ে এখন যারা বিচারে শাস্তি পাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ