X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার গৌরব ম্লান হচ্ছে যে দুই কারণে

আনিস আলমগীর
১২ এপ্রিল ২০১৬, ১২:০৭আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৬, ১২:১৯

আনিস আলমগীর কাঁদানে গ্যাসে আওয়ামী লীগের চোখ ফুটেছে, তাকে আন্দোলন, সংগ্রাম শেখাতে যাওয়া মূর্খতা। আন্দোলন সংগ্রামে তার কখনও কোনও ক্লান্তি ছিল না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানুষ দেখেছে দলটির কর্মীরা হেসে খেলে জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি। যা বলেছে তাই করেছে। বিরোধী ভূমিকায় আওয়ামী লীগ বাদশা। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল না।
আওয়ামী লীগের যারা প্রতিষ্ঠাতা তাদের মাঝে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৩ মাস। আতাউর রহমান খানের ওজারতী দু’বছর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন তিন বছর আট মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তিনি কুচক্রকারীদের হাতে স্বপরিবারে নিহত হন। স্বল্প সময়ের কারণে শাসক হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতারা কেমন তা  বুঝে ওঠা কঠিন ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু তিন বছর আট মাসের মধ্যে দেশকে শাসনতন্ত্র প্রদান, বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন ভারতের সৈন্য ভারতে ফিরিয়ে দেওয়াসহ বহু উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পেরেছিলেন। সারা বিশ্বের উন্নত অনুন্নত অনেক দেশের স্বীকৃতি ছিল না। তবুও তিনি সীমিত সাহায্য সহানুভূতি দিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশকে পুনঃগঠনে সফল হয়েছিলেন।
চীন বিপ্লবের পরে চীনে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তাতে দু’কোটি লোক মারা গিয়েছিল। বাংলাদেশেও স্বাধীনতার পর ছোট একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। চরমপন্থীরা এটা নিয়ে বহু রাজনীতি করেছেন। সফলও হয়েছেন। মিডিয়ার বৈরিতাও কম ছিল না। ইত্তেফাকে বাসন্তি নামের এক মেয়ের ছবি ছাপানো হলো- কাপড়ের বদলে জাল পরেছে সে। অথচ তখনকার বাজারে জালের দাম ২৫০ টাকা আর শাড়ির দাম বড়জোর ৩৫ টাকা। এত কিছু তলিয়ে দেখার সময় কোথায়! উত্তেজনা সৃষ্টির সব হাতিয়ারই ব্যবহার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে। তাতে কেউ কারও ক্ষেত্রে অসফল হয়নি।

আওয়ামী লীগের বিরাট এক অংশ সমাজতন্ত্রের বিষয়ে এতো বেশি উৎসাহী হলেন যে শাসনতন্ত্রের মূলনীতি স্থির করার সময় শাসনতন্ত্রে সমাজতন্ত্র রাখার পরও তারা আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্র দল গঠন করে বসেছিলেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিলেন। গণবাহিনী গঠন করলেন। পুরনো বামপন্থীদের সঙ্গে মিলে মিশে অরাজকতাও সৃষ্টি করলেন উল্লেখযোগ্যভাবে। অথচ সোভিয়েত ইউনিয়নে তখন সমাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে অর্ধ শত বছর হয়ে গেছে। চীনে সমাজতন্ত্রের বয়স তখন ২২ বছর। উভয়দেশে মার্কস-এর দর্শন হুবহু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রয়োগে বহু জটিলতার উদ্ভব হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন: লোপাটের পথে তিন ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকা

কার্ল মার্কস যখন তার জীবনকালে রুশ ভাষা শিখতেছিলেন এবং রাশিয়ার গ্রামীণ জীবনের বহু তথ্য নিয়ে নাড়াচাড়া করতে শুরু করেছিলেন তখন পশ্চিম ইউরোপের ইতিহাসের ভিত্তিতে গড়া তার সনাতন তত্ত্বের প্রযোজ্যতা নিয়ে নিজেই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। এ সময় একাধিক মার্কসবাদী মার্কসকে এ সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মার্কস তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করেন দেশকাল বিবেচনায় তার মূল তত্ত্বের পরিশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। এক সভায় মার্কস যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন তার শিষ্যরা মার্কসবাদ থেকে তার বিচ্যুতির কথা বলতে ছিলেন। তখন মার্কস বলেছিলেন তোমরা মার্কসবাদী হতে পার আমি কিন্তু নই।

সমাজতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাঙনের সময়েই সমাজতন্ত্র মুমূর্ষু একথা বলবো না তবে এ কথা বলা যায় যে সমাজতন্ত্র তখন রোগাক্রান্ত। গত শতাব্দীর শেষ দশকে সমাজতন্ত্র রাশিয়া বা চীন কোনওখানে আর অবশিষ্ট থাকেনি। আওয়ামী লীগের ভাঙন, জাসদের সৃষ্টি- বঙ্গবন্ধুকে দুর্বল করে দিয়েছিল আর তার শত্রুকূলের পোয়াবারো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর সফলতা খাটো করে দেখার কোনও অবকাশ ছিল না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। আওয়ামী লীগের তিন নেতা আওয়ামী লীগের ৪৭ বছর বয়সের মাঝে সাত বছর নয় মাস মাত্র ক্ষমতায় ছিলেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। পূর্ণ পাঁচ বছর শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতে এসে সরকার গঠন করেছে এবং শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপি জামায়াত যত প্রকারের অরাজকতা সৃষ্টি করতে হয় তত প্রকারের অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। তাই নির্বাচনটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে জাতি নির্বাচন নিয়ে কোনও বাড়াবাড়িতে যায়নি।

আরও পড়তে পারেন: ইউপি নির্বাচন: সহিংসতার মূলে বিদ্রোহী প্রার্থী!

 এবারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে শেখ হাসিনাই হবেন আওয়ামী লীগের একমাত্র নেত্রী যিনি সূদীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবেন। বর্তমান তিনি দুই মেয়াদে দশ বছর আর তৃতীয় মেয়াদের দুই বছর অতিক্রম করেছেন। শাসক হিসাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার সফলতার বর্ণনা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং বলবো অন্তত দুটিখাতে সরকারকে সতর্ক হতে। একটি গ্রহণযোগ্য ইউপি নির্বাচন আর বাকিটি ব্যাংকিংখাত। একের পর এক ব্যাংকের টাকা লুটপাট এবং তার কোনও প্রতিকার না হওয়া শেখ হাসিনার সরকারের জন্য সবচেয়ে খারাপ দিক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিজার্ভ ব্যাংকের টাকার সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা। যতদিন পর্যন্ত ব্যাংকের টাকা লুটপাটের হদিস হবে না, লুটেরারা সাজা পাবে না- শেখ হাসিনার গৌরবে এটি কাঁটা হয়ে থাকবে।

আরও পড়তে পারেন: সবার বুকে ছিল নৌকার ব্যাজ: গুলিবিদ্ধ শুভ ছটফট করলেও পুলিশ নিরাপদে দোতালায় ছিল

এখন দেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। দলীয়ভিত্তিতে দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে তাই গোলযোগটা এখন গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। গ্রামের শান্তিটা বিনষ্ট করল দলীয় ভিত্তিতে এ নির্বাচনটা। প্রত্যক দলে বিভক্তি আছে এখন সে বিভক্তিটাও ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হলো। শেষ পর্যন্ত এ রীতিটা ভাল ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি।

পশ্চিম বাংলায় গ্রাম-পঞ্চায়েতের নির্বাচন হয় দলীয় ভিত্তিতে। পশ্চিম বাংলায় এ ব্যবস্থাটা সফল হয়নি। নির্বাচন পরিচালনা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমাদের দেশের মানুষ সরকার আর নির্বাচন কমিশনের তফাৎটা উপলব্ধি করে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই দফা ১৭ জন আর ২১ জন মানুষের মৃত্যু শত শত মানুষ আহত হওয়া আর ব্যালটবাক্স ছিনতাই সব কিছুতেই সরকারের হাত আছে বলে মানুষ মনে করে। এ নির্বাচনটাতে কোনও স্বচ্ছতা আছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন না। আর মানুষও দেখছে যে বিষয়টা নিয়ে সরকার নীরব, নির্বিকার। আমরা হয়ত এ বিষয়টার পুরো অভিঘাত বুঝতে পারছি না- কিন্তু এর ফল যে কী সুদূরপ্রসারী হবে অচিরেই হাড়ে হাড়ে আমরা টের পাবো। এই নির্বাচনটা সরকারকে ক্রেডিবিলিটি ক্রাইসিসে ফেলছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে বড় ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা আশা করবো অবশিষ্ট নির্বাচনে সরকার মনোযোগী হবেন। দৃঢ় হস্তে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে নির্বাচনকে কালিমা থেকে রক্ষা করবেন।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ