X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার এখন যা করা দরকার

আনিস আলমগীর
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:১৪আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:১৯

আনিস আলমগীর গত ১৯ মার্চ বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে। কাউন্সিলর ছাড়াও ডেলিগেটসহ হাজার হাজার কর্মী এ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন।তারা উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্লাবিত ছিলেন।১৯ মার্চের  সম্মেলনটা বিএনপিকে পুনঃজীবন এনে দিয়েছে। ২০১৩ সালের শেষ চার মাস এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামাতের আন্দোলন দলটিকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিলো। আমরা আমাদের লেখায় বেগম খালেদা জিয়াকে বারবার পরামর্শ দিয়েছিলাম উগ্রতাকে পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিকতায় ফিরে আসতে।প্রশংসার বিষয় তিনি লন্ডনে গিয়ে তিন মাস নিজের চিকিৎসা করানোর পর দেশে ফিরে এসে নিয়মতান্ত্রিক পথে সংগঠন গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করেছেন।
কাউন্সিলের পরে খালেদা জিয়া এখন কমিটি গঠনের কাজে ব্যস্ত আছেন।কয়েক দফায় মিলিয়ে মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক পদ মিলিয়ে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু পদ পূরণ করেছেন। কাউন্সিলে কমিটি গঠন না করায় অনেকে বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেছেন। আগেও একদিন বলেছি, তিনি চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের অনুমোদন কাউন্সিল থেকে নেওয়ার পর মহাসচিবের পদটিরও অনুমোদন নিতে পারতেন। কারণ বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সততা, ত্যাগ তিতিক্ষা, আনুগত্য সব কিছুইতো তার ছিলো এবং শেষ পর্যন্ত তার নামই মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার নাম কাউন্সিলে ঘোষণা করে অনুমোদনটা কাউন্সিল থেকে নিলে হয়তোবা কর্মীরাও সন্তুষ্ট হতেন, কাউন্সিলের সৌন্দর্যও বাড়তো।

যাক, বিএনপিকে একা দায়ী করলে হবেনা। এ উপমহাদেশের রাজনীতিতে দলীয় কাউন্সিলে কখনও পুরো কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনকি এ উপমহাদেশের প্রাচীনতম দল কংগ্রেসেও কখনও নির্বাচন হয়নি। সাবজেক্ট কমিটি আলোচনায় বসে সভাপতি ঠিক করতেন এবং তার নামই ঘোষণা করা হতো। তখনকার সময়ে কংগ্রেসের সভাপতিকে রাষ্ট্রপতি বলা হতো। ত্রিপুরী সম্মেলনে সাবজেক্ট কমিটি রাষ্ট্রপতি ঠিক করেছিলো সীতারামাইয়্যাকে কিন্তু বেঙ্গলের কাউন্সিলররা তাকে মেনে নেননি।তারা রাষ্ট্রপতির প্রার্থী করলেন সুভাষ বসুকে। তাই ত্রিপুরী সম্মেলনে নির্বাচন হয়েছিলো এবং ভোটে জিতে সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কংগ্রেসের ইতিহাসে এটিই একমাত্র নির্বাচন।

এ উপমহাদেশে এখন দলীয় নেতৃত্ব, রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব সবই পারিবারিক গণ্ডির মাঝে ঢুকে গেছে।পাকিস্তানে বেনজির ভুট্টো পিন্ডির জনসভায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর তার ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।তখন বিলওয়াল ভুট্টো নাবালক।তার পিতা আসিফ আলী জার্দারী কো-চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। নাবালক রাজার রিজেন্ট-এর মতো।

আরও পড়ুন শফিক রেহমানকে গ্রেফতার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধুয়া

 

ভারতে কংগ্রেস-এর চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী। ভাইস-চেয়ারম্যান হচ্ছেন রাহুল গান্ধী। এ প্রবণতাকে রোধ করার চেষ্টা কেউ করেননি, বা কেউ চেষ্টা করলেও সফল হতেন না। সে ধারাবাহিকতায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বহু মামলার আসামি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে লন্ডনে অবস্থান করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও বহু মামলা রয়েছে। তার কিছু কিছু মামলা রায় প্রদান পর্যায়ে এসেছে এবং কোনও কোনও মামলায় সাজাও হতে পারে। তখন তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে যাবেন। সম্ভবতো সে কারণেই নব নির্বাচিত মহাসচিব বলেছেন যে, বিএনপির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় সাজা হলে তারা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের নেতৃত্বে চলবেন। কিন্তু তারেকের বিরুদ্ধেওতো বহু মামলা রয়েছে।এমনও মামলা রয়েছে যে মামলায় ফাঁসির আদেশ পর্যন্ত হতে পারে।এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তখন বিএনপিওয়ালারা রাজা রামের সিংহাসনে কার পাদুকা রাখবেন- মির্জা আলমগীর সে বিষয়টা খোলাসা করেননি।বঙ্গোপসাগরের সম্পূর্ণ পানি শরবত হলে আমার কি- আমি যদি পান করতে না পারি! বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার মনোভাব যদি সে রকম কিছু না হয়, তবে সাজা তাদেরকে সংগঠন করা, রাজনীতি করা বা দলকে দিয়ে নির্বাচন করানো- কোনও কিছুরই পথে সংকট সৃষ্টি করবে না।

প্রসঙ্গক্রমে লালু প্রসাদ যাদবের কথা বলতে হয়। লালু প্রসাদ যাদব যখন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ১২ শ’ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি হয়েছিলো। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালু প্রসাদ যাদবের ১০ বছর সাজা হয়েছিলো। বেশ কিছুদিন তিনি জেলেও ছিলেন। ট্রায়াল কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে তিনি হাই কোর্টে আপিল করার পর জামিনে বের হয়ে আসেন। তিনি তার দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সভাপতি পদে বহাল আছেন। ২০১৫ সালের বিহার বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তার দল নিতীশ কুমারের দলের সঙ্গে ফ্রন্ট করে নির্বাচন করেছে এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে জিতে এসেছে। বর্তমানে নিতীশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এবং লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে উপমুখ্যমন্ত্রী।নির্বাচনে লালুর দল আসন পেয়েছে ৭৩টি, নিতীশ কুমারের দল আসন পেয়েছে ৮০টি, আর কংগ্রেস পেয়েছে ৪০টি। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি পেয়েছে ৬০টি আসন। বিএনপির ভাগ্য লালুর মত হলে লালুর পথ অনুসরণ ছাড়া উপায় কি?

একাদশ সংসদ নির্বাচন যদি ২০১৯ সালেও হয় আর বিএনপি যদি কোনও আন্দোলন ছাড়াই শুধু স্বাভাবিক দলীয় কর্মকান্ড করে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছায়, তবে নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের জন্য খুবই কঠিন হবে। কারণ দীর্ঘ দশ বছর একনাগাড়ে ক্ষমতায় থাকলে কঠিন প্রতিষ্ঠানিক বিরোধিতার সম্মুখিন হতে হয়। আর ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সে বিরোধিতার মোকাবেলা করতেই হবে।

বিএনপিকে নিয়মতান্ত্রিক পথেই চলতে হবে। অহেতুক আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে, কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হবে না। আমি আমার লেখায় পূর্বেও বলেছি এখনও বলছি- মানুষ এখন আর জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন চায় না। পূর্বে সমাজ ছিলো রাজনীতি প্রভাবিত সমাজ কিন্তু এখন সমাজ হয়ে গেছে বাণিজ্য প্রভাবিত সমাজ। সাধারণ মানুষ এখন সমাজে কোনও উৎপাত কামনা করে না। কোনও উৎপাতে অংশ নিতেও আগ্রহী নয়। এখনকার সমাজ দেশে বহু রাজনৈতিক দল থাকুক সেটাও চায় না। সমাজটা ধীরে ধীরে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই আগ্রহী। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিলে দ্বি-দলীয় কাঠামোর ভিত্তিটা সুষ্ঠুরূপ নিতো।

আরও পড়ুন বেদনার সব কথা মানুষ বলে না!

বেগম খালেদা জিয়া এখন বিএনপিকে সুন্দর কাঠামো প্রদানে ব্যস্ত। এটাই দলীয় প্রধানের মৌলিক কাজ। এরপর তার জন্য সঠিক কাজ হবে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সুষ্ঠু কাঠামোর ওপর দাঁড় করানো। দলের ভিত্তি যখন মজবুত হবে তখন তাকে কেউ টুটি চেপে ধরতে সাহস পাবে না। আর জাতির মঙ্গলের জন্য প্রেরণাদায়ক কর্মসূচিও প্রদান করতে হবে।ভিশন ২০৩০ বলে ঘরে বসে থাকলে হবে না। সেটা কী জানাতে হবে তরুণদের, যারা আগামীতে ক্ষমতার খেলার রায় প্রদানে বড় ভূমিকা রাখবে।  এর মধ্য দিয়ে জাতির সামনে একটা স্বপ্ন তৈরি হবে।স্বপ্ন ছাড়া জাতি, দল, কিছুই উজ্জীবিত হয় না।স্বপ্ন ছাড়া জাতি বাঁচতে পারে না। এমনকি টিকে থাকতেও পারে না। এমন কাজগুলো করতে পারলে বেগম জিয়ার সফলতা আসবেই।

 লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, মোকাবিলায় কী করছে ডিএনসিসি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ