X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংস অভিযান নাকি সমঝোতা, কীভাবে উদ্ধার হবে এমভি আবদুল্লাহ?

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
২০ মার্চ ২০২৪, ১০:০০আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১০:০০

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক-ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা চাইছে জাহাজ মালিক ও বিমাকারী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান। তবে জাহাজের নাবিক-ক্রুদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে এমন কোনও অভিযানে সমর্থন নেই বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ।

এদিকে, জাহাজে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। এর বাজারমূল্য ৬৬ লাখ ডলার বা ৮০ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময়ে কয়লা বুঝে না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমদানিকারক।

জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে জানতে চাইলে কবির গ্রুপের মুখপাত্র ও মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের সহিংস অভিযানে আমাদের সমর্থন নেই। জাহাজের প্রতিটি নাবিক-ক্রুর জীবন আমাদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রত্যেককে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘জাহাজে সহিংস অভিযানে সরকারেরও সমর্থন নেই। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা আছে। এর আগেও আমাদের একটি জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়েছিল। প্রায় ১০০ দিন পর সব নাবিক-ক্রুদের আমরা সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, এবারও অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সব নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’ 

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আতিক উল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাহাজে কোনও সহিংস অভিযান পরিচালনা করুক সেটা আমরা চাই না। সহিংস অভিযান হলে আমার ছেলেসহ প্রত্যেক নাবিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। আমার ছেলেসহ জাহাজের সব নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই- প্রধানমন্ত্রী ও জাহাজ মালিকের কাছে এটাই আমার আবেদন।’

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিই হচ্ছে আতিক। দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকে তার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে একপর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। তিন মেয়ে সবসময় বাবার কথা বলেছে। ছেলেকে নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।’

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। ভাড়ায় মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এমভি আবদুল্লাহর।

সূত্র জানিয়েছে, জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার মূল্য প্রায় ৬৬ লাখ ডলার বা ৮০ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ডলার কয়লার দাম ১১০ থেকে ১২০ ডলারে ওঠানামা করছে।

এ প্রসঙ্গে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজটিতে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে। এর মূল্য কত হবে তা আমার জানা নেই। এসব কয়লা বহন করে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনার কারণে কয়লা পৌঁছানো যায়নি সেহেতু আমদানিকারকও উৎকণ্ঠায় আছেন। তারা হয়তো এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করছে।’

বাংলাদেশি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে দস্যুদের সঙ্গে কয়েকটি গ্রুপ জড়িত আছে। একটি দস্যু গ্রুপ জাহাজ আটক করেছে। এরপর নিয়ন্ত্রণের ভার তুলে দেওয়া হয় আরেকটি দস্যু গ্রুপের কাছে। সমঝোতা করার দায়িত্ব পাবে আরেকটি দস্যু গ্রুপ।’

তিনি বলেন, ‘দস্যুরা এখনও কোন দাবি-দাওয়া জানায়নি। তবে সমঝোতার জন্য প্রস্তুত আছে- জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান এবং জাহাজের মালিকপক্ষ। দস্যুরা হয়তো জাহাজটিকে নিয়ে এখনও স্থিতিশীল হতে পারেনি। স্থিতিশীল হওয়ার পর তারা দাবি-দাওয়া জানাবে।’

এই ক্যাপ্টেন আরও বলেন, ‘গত শনিবার ভারতের নৌবাহিনী মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন নামের ছিনতাই হওয়া জাহাজ জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করেছে। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ১৭ নাবিককে জীবিত উদ্ধার করেছে। আত্মসমর্পণ করেছে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সোমালিয়ার ৩৫ জলদস্যু। এ ঘটনার পর বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর স্থান পরিবর্তন করে দস্যুরা। অর্থাৎ তাদের সেফ জোনে নিয়ে গেছে জাহাজটি। এ কারণে মনে হয় দস্যুরা স্থিতিশীল হতে পারেনি। যে কারণে এখন পর্যন্ত জাহাজ মালিকের কাছে কোনও দাবি-দাওয়া জানায়নি।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৫ হাজার টন কয়লা আছে। এসব কয়লা দুবাইয়ের আমদানি কারকের এলসির অনুকূলে সরবরাহ করেছে মোজাম্বিকের রফতানি কারক। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ভাড়ার বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ক্যারিয়ার মাত্র। মাঝপথে এ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার কারণে কয়লার মালিককে অপেক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রস্তুত। তারা সব নাবিকদের অক্ষত ফেরত চাইছে।’

গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কর্মকর্তারা। জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার অফকোস্টে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটিতে মোট ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক আছেন।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

/এফআর/
সম্পর্কিত
রবিবার দুবাই থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে এমভি আবদুল্লাহ
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জিম্মিদশার দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা জানালেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিক
সর্বশেষ খবর
পঞ্চম বারের মতো কমলো সোনার দাম
পঞ্চম বারের মতো কমলো সোনার দাম
নেত্রীর জন্য জান দেবেন আর সিদ্ধান্ত মানবেন না, সেটা উচিত না: দীপু মনি
নেত্রীর জন্য জান দেবেন আর সিদ্ধান্ত মানবেন না, সেটা উচিত না: দীপু মনি
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে: আব্বাস
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে: আব্বাস
টেন মিনিট স্কুলে বিকাশ পেমেন্টে ক্যাশব্যাক
টেন মিনিট স্কুলে বিকাশ পেমেন্টে ক্যাশব্যাক
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে