চট্টগ্রামে কালুরঘাট রেল সেতুতে ধাক্কা দিয়েছে এমভি সমুদা-১ নামে একটি লাইটার জাহাজ। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে ভেসে আসা লাইটার জাহাজ কালুরঘাট সেতুর মাঝখানে ধাক্কা দেয় এবং সেখানে আটকে যায়। এতে সেতুটির বিভিন্ন অংশে ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটিতে সংস্কার কাজ পরিচালনা করে আসছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম প্রান্তের এ কে খান ডক ইয়ার্ড থেকে এমভি সমুদা-১ নামের লাইটার জাহাজটি ভেসে আসে। কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা দিয়ে সেখানেই জাহাজটি আটকে যায়।
এ ঘটনার পর খবর পেয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত ও সেতুর সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি লাইটার জাহাজ ভেসে এসে কালুরঘাট রেল সেতুতে ধাক্কা দেয়। জাহাজটি সেতুর সঙ্গে আটকে গেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও দেখছেন সেতুটির কোথায় কি ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি দেখার পর কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. একরাম উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তীব্র বাতাসের কারণে লাইটার জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি নাবিকরা। এটি সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে আটকে গেছে। সেতুর একটি এঙ্গেল বাঁকা হয়ে গেছে। তেমন কিছু ক্ষতি হয়নি। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা ক্ষতির বিষয়টি দেখছেন।’
ওসি আরও বলেন, ‘জাহাজটি উদ্ধারের জন্য একটি টাগবোট (উদ্ধারকারী জাহাজ) পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
গত বছরের ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন যোগাযোগ চালুর আগে থেকেই ৯৩ বছরের পুরোনো সেতুটির শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্কার করা হচ্ছে। বর্তমানে সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুর নিচে ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির সংস্কার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। বুয়েটের পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিছুদিন না যেতেই সেতুটির অবস্থা পুনরায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করতো।