মুক্তিপণের বিনিময়ে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে ছাড়া পাওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিক দেশে ফিরছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১৩ কিংবা ১৪ মে জাহাজটি নোঙর করবে চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে। এ খবরে আনন্দের বন্যা বইছে নাবিক ও তাদের পরিবারের মধ্যে।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হ্যালো কাছের মানুষজন, আল্লাহর রহমতে অবশেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছি এমভি আবদুল্লাহসহ আমরা ২৩ নাবিক। সব ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ আগামী ১৩ বা ১৪ মে চট্টগ্রাম পৌঁছাবো।
‘জিম্মি হওয়ার পর শুধু এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করতাম। আর এই দিনের কথা ভেবেই মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতাম। ইনশাআল্লাহ, আর কিছু দিন পরেই আসছে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। সত্যিই, আমি এই এক্সাইটমেন্ট কখনও ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। প্রিয় মুখগুলো আবার দেখবো, তাদের সঙ্গে আবার কথা বলবো, সুখ-দুঃখের অনুভূতি ভাগাভাগি করবো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি আবার আমাকে সুযোগ দিয়েছেন।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিক মো. শামসুদ্দিনের স্ত্রী রিমা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের তিন মেয়ে বাবাকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করেছে। তাদের বাবা ফিরে আসছেন, এ খবরে তারা মহাখুশি। জাহাজ থেকে আগেরবার ফেরা আর এবারের ফেরার মধ্যে পার্থক্য আছে। এবার তারা অনেক বড় একটা বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে আসছেন। মালিকপক্ষের চেষ্টায় আমার স্বামীসহ ২৩ নাবিক জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন।’
এমভি আবদুল্লাহর বহরে আছেন নাবিক হোসেন মো. সাজ্জাদ (২৯)। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. তাজু মিয়ার ছেলে। সাজ্জাদের মেজ ভাই মোশাররফ মীর বলেন, ‘সাজ্জাদ জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে এখন দেশে ফিরছে। দস্যুদের কবলে পড়ার পর আমার পুরো পরিবার অনেক টেনশনে ছিল। এখন আমরা অনেক আনন্দিত।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। গত ৩০ এপ্রিল ভোর রাত ৪টার দিকে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ মেট্রিক টন চুনাপাথর নিয়ে রওনা দিয়েছে। এটি আগামী ১৩ কিংবা ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। বর্তমানে এমভি আবদুল্লাহ ভারত মহাসাগরে আছে।’
সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে দীর্ঘ একমাস পর গত ১৩ এপ্রিল সোমালিয়ার সময় রাত ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। ২১ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল হারমিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজটি। জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাস করা হয়। পরে আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর লোড করা হয়। এসব পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছে এমভি আবদুল্লাহ।
এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। প্রায় এক মাস পর মুক্তিপণের বিনিময়ে জাহাজসহ ২৩ নাবিক মুক্ত হন।
এসআর শিপিংয়ের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম এমভি আবদুল্লাহ।