X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে লড়ছে ভাই-ছেলে, শাজাহান খান বললেন, ‘পরিবারের ঐতিহ্য’

মাদারীপুর প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৩০আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৩০

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাদারীপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে থেকে গেছেন মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান এবং চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান খান শফিক। সোমবার (২২ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তারা কেউই প্রত্যাহার করেননি। ফলে উপজেলা নির্বাচনে চাচা-ভাতিজার লড়াই হবে।

আসিবুর রহমান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য ও পাভেলুর রহমান এই উপজেলার দুবারের চেয়ারম্যান ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। 

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে মাদারীপুরের তিন উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এগুলো হলো সদর, রাজৈর ও শিবচর। তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাচন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছেলে ও চাচাতো। আর কোনও প্রার্থী না থাকায় দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তাদের প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে আসিবুর রহমান খান পেয়েছেন আনারস আর পাভেলুর রহমান খান পেলেন মোটরসাইকেল প্রতীক।

প্রতীক পেয়ে আসিবুর রহমান খান বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবো। এই নির্বাচনে আমি বিজয়ী হবো বলে শতভাগ আশাবাদী।’

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে আসিবুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতারা আমাকে প্রার্থী করেছেন। জনসেবায় জনগণের আস্থা রয়েছে আমার পরিবারের ওপর। আমাদের পরিবার ১৯২১ সাল থেকে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবা করছে। তাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’

পাভেলুর রহমান খান বলেন, ‘আমি কোনও এমপির ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না। দুবার এই উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমার সঙ্গে যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে না। ভোটে আমার ধারে-কাছেও থাকবেন না তিনি।’

দলীয় সিদ্ধান্তে এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলা হলেও কেন করেননি জানতে চাইলে পাভেলুর রহমান, ‘আমি এমপির স্বজন হিসেবে নির্বাচন করছি না। মানুষ আমাকে অনেক ভালোবেসে প্রার্থী করেছেন। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো এবং আবারও বিজয়ী হবো।’

গত ১৮ এপ্রিল দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সারা দেশে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা গত এক সপ্তাহ ফোনে তাগাদা দেন তাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিবৃতি দিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজনদের সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান। এরপরও তাদের স্বজনরা ভোটের মাঠে থেকে গেছেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বজনদের ভোটের মাঠে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দলীয় প্রতীক থাকবে না। সে অনুযায়ী, যে যার মতো প্রার্থী হয়েছেন। অন্য উপজেলার বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে মাদারীপুর সদর উপজেলারটা এভাবে বলতে চাই, আমাদের খান পরিবারের জনপ্রতিনিধিত্বের একটা ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য আছে। ১৯২১ সালে আমার মেজো চাচা পঞ্চায়েতের সদস্য হন। ১০৩ বছর ধরে আমাদের পরিবারে জনপ্রতিনিধিত্বের ঐতিহ্য রয়েছে। আমার বাবা, ভাই, চাচা, চাচাতো ভাইসহ পরিবারের লোকজন রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার বাবা রাজনীতি করেছেন উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, ‘একসময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আমার বাবা। তিনি ১৯৫৪, ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সাতবার নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। একবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি। আটবারই নির্বাচিত হয়েছি। এতে বুঝতেই পারছেন, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য জনগণের সেবা করা। এবার আমার ছেলে ও চাচাতো ভাই প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে যদি তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হয়, তাহলে দুজনকেই সরে দাঁড়াতে হবে। এতে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে করণীয় কী, তা দলীয়ভাবে বলা হয়নি। কাজেই আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক অধিকার সবার আছে। সবাই প্রার্থী হওয়ার অধিকার রাখে। বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিবেচনায় রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মনোনয়নপত্র কেনার আগে আমরা দলীয় নির্দেশনা পাইনি। শাজাহান খানের ছেলে ও চাচাতো ভাই আগেই মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এখন প্রত্যাহার করলে শূন্যতা তৈরি হবে। আবার একজন সরে গেলে আরেকজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাবেন। ফলে নির্বাচন ছাড়া বিকল্প পথ দেখছি না।’  

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পাভেলুর রহমানকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এমপির ছেলে প্রার্থী হওয়াটা সম্পূর্ণ তাদের পারিবারিক সিদ্ধান্ত। এতে রাজনৈতিক কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’

মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, ‘মাদারীপুর সদর, রাজৈর ও শিবচর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ তাদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে তাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও প্রচারণা
দলবল নিয়ে উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
সর্বশেষ খবর
এখনও উদ্ধার হয়নি পুলিশের অস্ত্র, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সহিংসতাএখনও উদ্ধার হয়নি পুলিশের অস্ত্র, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
কঙ্গোর বাস্তুচ্যুত শিবিরে হামলা, নিহত ৯
কঙ্গোর বাস্তুচ্যুত শিবিরে হামলা, নিহত ৯
প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও প্রচারণা
প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও প্রচারণা
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা