বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল ও মাছসহ দ্রুত পচনশীল পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে। হঠাৎ করে সন্ধ্যার পর এই জাতীয় পণ্য বেনাপোল বন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের। হঠাৎ এভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাস সামনে রেখে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ, ক্যাপসিকাম, আতা, টমেটো, ইত্যাদি আমদানি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। রমজান মাস এলেই বন্দরের আমদানিকৃত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিদিন বন্দর দিয়ে দেড় শতাধিক ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি হয়।
ভারত থেকে প্রতিদিন পচনশীল পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো সাধারণত বিকাল থেকে বন্দরে প্রবেশ করতে থাকে। বেনাপোল বন্দরে সব ট্রাক প্রবেশ করতে রাত হয়ে যায়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাতে কোনও ফল ও মাছের ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা বলছে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফল মাছসহ সব ধরনের দ্রুত পচনশীল পণ্য বন্দরে প্রবেশ করাতে হবে। তা না হলে রাতে এই জাতীয় পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে দেবে না তারা। বেনাপোল বন্দরে আমদানিকারক ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, দ্রুত পণ্য বাজারজাতকরণ ও রাজস্ব আয়ের গতি ফেরাতে বেনাপোল বন্দর ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২৪ ঘণ্টা বন্দরে আমদানি-রফতানি চালু রাখার কথা বলা হলেও বেনাপোল বন্দরে সেটা মানা হচ্ছে না। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ ধরে পচনশীল পণ্য সন্ধ্যা ৬টার পর বন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বর্তমানে বেনাপোল দিয়ে দিনে ৪৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে আছে ফল, মাছ, ক্যাপসিকাম, আতা ও টমেটোসহ বিভিন্ন পচনশীল পণ্য। সন্ধ্যার পর বন্দরে ঢুকতে না দেওয়ায় ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে নষ্ট হচ্ছে পচনশীল পণ্যের চালানগুলো।
আমদানিকারক রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ‘আমি ভারত থেকে ফল ও মাছ আমদানি করি। এই পণ্যগুলো সন্ধ্যার পরে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কোনোভাবেই এ ধরনের নির্দেশনা দিতে পারে না তারা। সরকার থেকে বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার নির্দেশনা থাকলেও সময়টা কমিয়ে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যা অযৌক্তিক।’
এ বিষয়ে বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, ‘কাস্টমস এবং বন্দর মিলিয়েই এই রমজান মাসে সময় বৃদ্ধি করে রাত ৯টা পর্যন্ত করা হলে দ্রুত পচনশীল পণ্য খালাস নিতে পারবো আমরা। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব বাড়বে অন্যদিকে এসব পণ্য বাজারে দ্রুত বাজারজাত করা সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘বন্দর দিয়ে সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারত থেকে ৫৫ ট্রাক ফল ও মাছ জাতীয় পচনশীল পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে কাস্টমসের বিধিনিষেধের কারণে সন্ধ্যার পর পচনশীল কোনও পণ্য বন্দরে প্রবেশ করেনি।’
সন্ধ্যার পর পচনশীল পণ্য বন্দরে প্রবেশে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কেন বাধা দিচ্ছে জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ফল, মাছ, ক্যাপসিকাম, আতা ও টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই বন্দরে প্রবেশ করতে হবে। রাতে এই জাতীয় পণ্য বন্দরে প্রবেশ করলে অনেকে সন্দেহ করে। রাতে নানা ধরনের অনিয়মেরও সুযোগ থেকে যায়। এসব কারণে রাতে এসব পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’