X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘সেলিম তো আল্লাহর ওলি হয়ে গেছো’

তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
২৬ মে ২০১৬, ২০:০৫আপডেট : ২৬ মে ২০১৬, ২০:২১

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানে ধরে ওঠবোসের ঘটনার ব্যাপারে গত মঙ্গলবারই সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। কিন্তু সেদিন তাকে বাধা দিয়েছিলেন তার দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ সেদিন সেলিম ওসমানকে বলেন, ‘সেলিম তো আল্লাহর ওলি হয়ে গেছো। দেশের কোটি কোটি মানুষ তোমার জন্য দোয়া করছে। সংবাদ সম্মেলন করে কী হবে।’ 

বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান

সেলিম ওসমান যিনি একই সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছেন, ‘ওই ঘটনায় আমি সেলিম ওসমান রাজনৈতিক শিকার। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার পর মেধা খাটিয়ে পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টা হতে পৌনে ৭টা পর্যন্ত ওই মতবিনিময় সভায় তিনি একটানা বক্তব্য রাখেন। নামাজের বিরতির পর ৭টা হতে আবারও মতবিনিময় সভাটি শুরু হয়।

সভায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, ব্যবসায়ী সমাজ, সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতা, স্থানীয় সকল জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতি, নারায়ণগঞ্জ মহিলা সংস্থা ও মহিলা নেতৃবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শুরুর আগে অনেক এলাকা থেকেই দলীয় স্লোগানে সভায় যোগ দেয়।

সভায় মঞ্চে একটি মাত্র চেয়ারই ছিল যেখানে সেলিম ওসমান একা বসেন। সভার শুরুতে কোরআন তেলোয়াত, গীতা পাঠ, ত্রিপিঠক পাঠ করা হয়।

এর আগে ১৯ মে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পিয়ার সাত্তার স্কুলে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনা প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বলেন, ওই শিক্ষককে (শ্যামল কান্তি ভক্ত) কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি কার কাছে ক্ষমা চাইবো, যিনি আল্লাহকে কটূক্তি করেছেন? তবে আমি লজ্জিত এবং সমাজের কাছে দুঃখিত যে তারা এমন একটি ভিডিও দেখেছেন যাতে তারা আমাকে ভুল বুঝেছেন।

পরে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন আহবান করলেও সেটা পরে স্থগিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার সেলিম ওসমান মতবিনিময়ে বলেন, ‘আমার কাছে অনেক প্রমাণ ছিল। সেগুলো আমি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। আমি গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলেও আমার দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্দেশে সেই সংবাদ সম্মেলন থেকে বিরত থাকি। এরশাদ স্যারের কাছে আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেলিম তো আল্লাহর ওলি হয়ে গেছো।দেশের কোটি কোটি মানুষ তোমার জন্য দোয়া করছে। সংবাদ সম্মেলন করে কী হবে। তোমার জন্য মানুষ দুই হাত তুলছে। তোমার সঙ্গে দেশের মানুষ আছে, তোমার সঙ্গে আমি আছি, জাতীয় পার্টি আছে, আল্লাহ আছে। তুমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আছো ও থাকো। এখন এসব নিয়ে কথা বলতে যেও না।’

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন সেলিম ওসমান। বলেন, ‘১৩ মে রাতে আমার থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যেতে পারি নাই। আমার ওষুধ শেষ, মেডিক্যাল চেকআপ করানো প্রয়োজন, করতে পারছি না। আমি জমজমের পানি খেয়ে ওষুধের কাজ চালাচ্ছি। যতোদিন পর্যন্ত বন্দরের ঘটনার পরিপূর্ণ সুরাহা না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি জমজমের পানি খেয়েই ওষুধের কাজটি চালাবো।’

স্কুল শিক্ষককে কানে ধরে উঠবসের ঘটনায় আবারও ‘দুঃখ ও লজ্জা’ প্রকাশ করে সেলিম ওসমান বলেন, আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। কিন্তু পেছনের ঘটনা কেউ প্রকাশ করেনি। শিক্ষককে যখন আমি জনরোষ থেকে রক্ষা করেছিলাম তখন ওই শিক্ষক নিজেই অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছিল। আমি সে কাজটিই করেছি। সেই শিক্ষককে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুনর্বহাল করেছে তাতে আমার কোনও আপত্তি নাই।’

তিনি বলেন, ‘এখনও পঞ্চায়েত, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। বন্দরের ঘটনায় স্থানীয় সবাই আমাকে চাপ দিয়েছিল। সে কারণে আমি একজন নাস্তিকের বিচার করেছি। এ বিচারের জন্য যদি আমাকে ফাঁসির কাষ্ঠেও যেতে হয় তাহলেও আমি যেতে প্রস্তুত।’

নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত জনতার একাংশ

তদন্তের বিষয়ে সেলিম ওসমান বলেন, ‘বার বার স্কুলের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নিয়ে তাদের টর্চারিং করা হচ্ছে। তাদেরকে মিথ্যেবাদী বানানো হচ্ছে।’

তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘আমি শিক্ষককে কানে ধরে উঠ বস করানোর কারণে যদি অন্যায় করে থাকি তাহলে এক ছাত্রকে মারধর করেও তো শিক্ষক অন্যায় করেছে। কই এখন তো হাইকোর্ট কিছু বলে না। এখন তো কেউ বলে না শিক্ষার্থী প্রহারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করা হচ্ছে। বিচার কী শুধু একটাই?’

বক্তব্যে তিনি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন। বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। তাই তো আমি বলি আমার বিএনপি, আমার জাতীয় পার্টি, আমার আওয়ামী লীগ।’

বন্দরের ঘটনার পর সর্বত্র আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুনেছি ২৭ মে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন মাদ্রাসার লোকজন আন্দোলন করবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো এখন থেকে সব আন্দোলন কর্মসূচি বাদ দিয়ে দোয়া করুন আমার জন্য। আমি সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানাচ্ছি।’

সেলিম ওসমান বলেন, এত বড় ঘটনা ঘটে গেল অথচ আমার সংসদের কোনও বন্ধুই আমাকে টেলিফোন করে ঘটনাটা জানতে চাননি। কোনও আলোচনা করেননি। তারা তো আমাকে ডাকতে পারতেন, শাসন করতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটি তারা করলেন না।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমি শ্যামল কান্তি ভক্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। ভারতের ভেলোরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলাম। পকেট খরচের জন্য ২০ হাজার টাকাও দিয়েছি। কিন্তু উনি ফোন করে জানালেন, তার তিন মেয়ের বিয়ে বাবদ ৩০ লাখ করে ৯০ লাখ ও তাকে আরও ১০ লাখ মোট এক কোটি টাকা দিতে হবে। এ প্রস্তাব পাওয়ার পর থেকেই আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।

 /টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!