X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
২৬ জুন ২০১৬, ১৯:৫৪আপডেট : ২৬ জুন ২০১৬, ২১:০৭

অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গেছে। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে আসছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য। জেলা সদর, দামুড়হুদা ও জীবননগরসহ জেলার প্রতিটি ছোট-বড় দোকান, বিপণি বিতান এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। ভারত থেকে আনা লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, স্যান্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জেলার বাইরেও প্রতিটি উপজেলা ও মফস্বল শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। পাশাপাশি অবৈধভাবে আনার ফলে সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এর ৮০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। কিন্তু এসব পণ্য বৈধ পথে আসেনি। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা সীমান্তসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় পণ্য। আর এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডিতে এবং বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে।

জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশের শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট এ কাজে জড়িত। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় ভারতীয় পণ্য এ জেলাসহ সারাদেশে বাজারজাতকরণে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার

অভিযোগ উঠেছে, জেলার সীমান্তে নিয়োজিত কতিপয় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চোরাচালানি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ সিন্ডিকেট এখন আরও সক্রিয়। দেদারসে দেশে ঢুকছে ভারতীয় পোশাক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদ পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তের ৭টি রুট দিয়ে অবৈধভাবে ঢুকছে ভারতীয় শাড়ি, থান কাপড়, সুতা, থ্রি-পিস, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, শাল ও জুতা-স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন কসমেটিকস। জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে চোরাচালানিদের লাগেজ পার্টি বলা হয়। এ পার্টির মূল মালিক বা মহাজনরা অধিকাংশই ঢাকা, পোড়াদহ ও ঈশ্বরদীর। তারা বৈধ পথে কলকাতায় গিয়ে লাখ লাখ টাকার পণ্য কিনে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকার নির্দিষ্ট ব্যক্তির হেফাজতে রেখে আসে। পরে সময় সুযোগ বুঝে ভারত ও বাংলাদেশের দালালরা কমিশনের মাধ্যমে ওইসব পণ্য ৫০০ টাকা জোন (লেবার/কামলা) হাজিরায় সড়ক ও রেলপথে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়। অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ মালামালের অলিখিত বৈধতা দিচ্ছে কতিপয় অসৎ বিজিবি-পুলিশ সদস্য ও কাস্টমসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। লাগেজ প্রতি বিজিবির নামে তোলা হয় ৩ হাজার টাকা, পুলিশের নামে ১ হাজার ২৫০ টাকা, কাস্টমসের নামে ১ হাজার ৫০০ টাকা। চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৫টি থেকে ৫০টি পর্যন্ত লাগেজ আসে। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার

সূত্র আরও জানায়, সপ্তাহে তিনদিন শনি, রবি ও মঙ্গলবার যখন মৈত্রী ট্রেনে যাত্রীরা ভারত থেকে বাংলাদেশের দর্শনা রেল স্টেশনে অবস্থান করে তখন বর্তমান কাস্টমস সুপার মোস্তফা কামাল ও তার সহযোগী ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেনের নেতৃত্বে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মধ্যে এক শ্রেণীর লাগেজ পার্টিকে অবৈধ সুযোগ দেওয়ায় চোরাই পণ্য হরহামেশাই তারা নিয়ে আসছে। এসব অবৈধ মালামাল আটক করে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে কাস্টমস-এর এ দুই কর্মকর্তা ৩টি কক্ষে রেখে দেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই সমস্ত যাত্রীরাও অবৈধ সুযোগের জন্য কৌশলে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি অতিরিক্ত ভ্যাট কর্তন ও আটকের ভয়ভীতি দেখিয়ে লাগেজ প্রতি (১৫-২০ টি থ্রি-পিস/শাড়ি) দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আদায় করে থাকে। কিন্তু সরকারি আইনগত জটিলতার হাত থেকে বাঁচতে মাঝে মধ্যে কিছু মালামাল আটক দেখিয়ে এই দুই কর্মকর্তা সর্বনিম্ন ও লোক দেখানো (৪.৫ ডলার শাড়িতে এবং ৩ ডলার থ্রি-পিসে) ভ্যাটও কাটেন যা অতি নগণ্য। কিন্তু আইনি জটিলতা এড়িয়ে তখন শাড়ি বা থ্রি-পিসের পিস হিসাব বাদে ব্যাগ হিসাবে ডিএম করে থাকে এবং ব্যাগ হিসাবে ভ্যাট গ্রহণ করে বাকিগুলোর জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে ছেড়ে দেয়। এভাবেই কাস্টমস-এর দুই কর্মকর্তার পকেটভর্তি হয়। উল্লেখ্য, ট্যাক্স রশিদের বেশিরভাগই কাটা হয় সর্বনিম্ন ভ্যাট যার প্রমাণও রয়েছে। মাঝে মধ্যেই এ ধরনের অনৈতিক কাজের খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকার শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা আকস্মিক অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে মালামাল আটক করে সঠিক ডি.এম করে রেখে যায়। বর্তমানে এ অসাধু কাস্টমস সুপার ও ইন্সপেকটর এ ধরনের অভিযান হওয়ার আগেই লাগেজ পার্টিদেরকে সতর্ক করে অবৈধ মালামাল আউটডোরে পাচার করে দিচ্ছেন ফলে ম্যাজিস্ট্রেটরাও এসে অনেক সময়ই ফিরে যাচ্ছেন। সম্প্রতি গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাগেজ পার্টিকে দর্শনা কাস্টমস অবৈধভাবে উৎকোচ গ্রহণ করে ছেড়ে দেওয়ার ফলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে প্রায় কোটি টাকার উপরে ভারতীয় উন্নতমানের শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস ও ইমিটেশন গহনা জব্দ করে। মৈত্রী ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা যদি ৩শ থেকে ৪শ জন হয় তাহলে বেশিরভাগ যাত্রীই এ কাজে জড়িত এবং জনশ্রুতি রয়েছে এ দুজন কর্মকর্তাই তাদেরকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করছে।

দর্শনা কাস্টমস সহকারী কমিশনার আবুল হোসেন জানান, যাত্রীরা অতিরিক্ত ভারতীয় পণ্য আনলে শুল্ক আদায় করা হয়। কেউ অবৈধ ভারতীয় পণ্য আনলে আমরাসহ বিজিবি আটক করে থাকি। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পণ্যে ছেয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মো. রশীদুল হাসান জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, লাগেজগুলো প্রথমে বাংলাদেশি সীমান্তবর্তী দর্শনা পৌরসভার জয়নগর গ্রামের সিন্ডিকেটের হোতা জামাই বাবলু ওরফে বাবলু বাঙ্গাল ও শহিদুলসহ তার লোকজন সেখান থেকে জন (লেবার/কামলা) হাজিরায় পুরুষ ও মহিলারা বস্তায় ভরে এসব পণ্য দর্শনা হল্ট স্টেশন হয়ে ট্রেনে বা সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। স্থানীয়রা জানান, মালামালের মূল মালিকরা এখানে কেউ থাকেন না। ব্যবসাটা চলে বিশ্বাসের ওপর কমিশনের মাধ্যমে।

চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক মোহাম্মদ আমির মজিদ বিজিবির কোনও সদস্য এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিজিবি সদস্যদের সকল কার্যক্রম দেখাশোনার জন্য রয়েছে তিন স্তর বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। এরপরও যদি কোনও বিজিবি সদস্য এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।

/বিটি/টিএন/আপ-এআর/

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ:

রোজায় ১৮ জেলায় পৌঁছায়নি টিসিবি’র পণ্য

রংপুর অঞ্চলের ডিলারদের অভিযোগ: ব্যাপক চাহিদা তবুও বন্ধ করা হয়েছে পণ্য সরবরাহ

চট্টগ্রামের ৬ জেলার মানুষ পাননি টিসিবি’র কোনও পণ্য

খুলনা অঞ্চলে পণ্য তুলেছেন মাত্র ২৩ শতাংশ ডিলার, দেওয়া হয়নি তেল-খেজুর

সিলেট বিভাগে টিসিবি’র পণ্যের দর ‘বাজার দরের সমান’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!