সিলেট বিভাগে টিসিবি ডিলারের মোট সংখ্যা ৪০। এদের মধ্যে পণ্য তুলেছেন ১২ জন, তোলেননি ২৬ জন। বিভাগের ডিলারদের সাধারণ অভিযোগটি হলো, চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবারহ বেশ কম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি বাজার নিয়ন্ত্রণের অন্তরায়। এক জেলার ডিলারদের অভিযোগ, টিসিবি পণ্যের দর ক্ষেত্রবিশেষে বাজার দরের সমান হয়ে পড়ে। তাই তারা পণ্য তুলতে আগ্রহী হননি। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে প্রাপ্ত চিত্রটি নিম্নরূপ:
সিলেট
জেলা প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিসিবির মোট ডিলার সংখ্যা ৮ জন। এর মধ্যে গাড়ির ডিলার ৫ জন এবং দোকানি ৩ জন। ডিলারদের সকলেই পণ্য তুলেছেন।
নগরীর মির্জা জাঙ্গাল এলাকার টিসিবির ডিলার বিজয় চক্রবর্তী জানান, তাদেরকে এখন পর্যন্ত যেসব মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোর মান খুব ভালো। তিনি চাহিদা অনুযায়ী মাল পাচ্ছেন। তবে, খাতা মেইনটেইন করতে গিয়ে তাকে সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বাজার সাব কমিটির আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম জানান, সিলেটে টিসিবির জোরালো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এখানে তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
হবিগঞ্জ
জেলা প্রতিনিধি মো. নূর উদ্দিন জানিয়েছেন, জেলায় দুইজন ভ্রাম্যমাণ ডিলার রয়েছেন। একজনও পণ্য ওঠাননি। হবিগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিলেট বিভাগীয় অফিসার জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হবিগঞ্জ জেলায় আপাতত টিসিবি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এটি মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। তবে ঈদের পর যদি কার্যক্রম শুরু হয় তাহলে সবাইকে জানানো হবে।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি হিমাদ্রী শেখর ভদ্র জানিয়েছেন, টিসিবির ২৮ জন ডিলার রয়েছেন। জেলার ১১ টি উপজেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২, দোয়ারাবাজারে ৪, জগন্নাথপুরে ৬ , ধর্মপাশায় ১ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ২ জন, দিরাইয়ে ২ জন, ছাতকে ৭ জন, শাল্লায় ১ জন, জামালগঞ্জে ১ জন টিসিবি ডিলার রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জন পণ্য উঠিয়েছেন অবশিষ্ট ২৬ জন করতে পারেননি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালী বাজারের টিসিবি ডিলার তোফায়েল আহমদ বলেন, টিসিবি থেকে মাল তোলার জন্য ট্রাক নিয়ে শেরপুর টিসিবির গুদামে গিয়েছিলাম কিন্তু মাল সংকটের জন্য খালি গাড়ি নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার কেউনবাড়ি বাজার এলাকার টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর আলম জানান, টিসিবির পণ্যের দর ও বাজারের দর সমান হওয়ায় মাল তোলেননি। অন্যদিকে, চিনির গুনগতমান ভালো নয়।
ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকার টিসিবি ডিলার আমজাদ আলী বলেন, টিসিবির গুদামে মালামাল সংকটের কারণে মাল তুলতে পারেননি। দোয়ারাবাজার উপজেলার টিসিবি ডিলার বিনয় ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, বাজার দর ও টিসিবির দর সমান থাকায় পণ্য তুলে লোকসান গুনতে হয়। এছাড়া গুদাম থেকে মাল ওঠাতে পরিবহন খরচ বেশি হয়। তাই মালামাল তুলিনি।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, জেলার ২৮ জন ডিলারের মধ্যে মাত্র ২ জন ডিলার মালামাল উত্তোলন করতে পেরেছেন। অবশিষ্ট ২৬ জন ডিলার টিসিবির পণ্য সংকটের কারণে মাল উত্তোলন করতে পারেননি।
সিলেট বিভাগের জেলাভিত্তিক টিসিবি ডিলার ও তাদের কার্যক্রম
জেলা | ডিলার সংখ্যা | পণ্য তুলেছেন | পণ্য তোলেননি |
সিলেট | ৮ | ৮ | ০ |
হবিগঞ্জ | ২ | ০ | ২ |
মৌলভীবাজার | ২ (ভ্রাম্যমাণ) | ২ | ০ |
সুনামগঞ্জ | ২৮ | ২ | ২৬ |
মৌলভীবাজার
জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৌলভীবাজারে ২ জন ডিলার রয়েছেন। প্রথম দফায় পণ্য তোলা হয় ২৯ মে। ৮ জুন পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন সড়কে এ পণ্য বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আর পণ্য তোলা হয়নি।
মৌলভীবাজারের শেরপুরে টিসিবির আঞ্চলিক গুদাম কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলা সদরে রমজান আসার আগে থেকে আমাদের টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মৌলভীবাজারে টিসিবির দুইজন ডিলার রয়েছেন। তারা হলেন খালেক এণ্টারপ্রাইজের মো. খালেক মিয়া ও শেরপুরের তাজ এন্টারপ্রাইজের মো. মোস্তফা মিয়া। আমাদের ডিলাররা ৯দিনে সর্বমোট ১৮ ট্রাক মাল বিক্রি করেছে।
টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, উপর মহলের নির্দেশে পণ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হেড অফিস যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে আমার করার কিছু নেই।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কিছুদিন পণ্য বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে বিক্রয় বন্ধ রয়েছে।
/এইচকে/বিটি/
এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
রোজায় ১৮ জেলায় পৌঁছায়নি টিসিবি’র পণ্য
রংপুর অঞ্চলের ডিলারদের অভিযোগ: ব্যাপক চাহিদা তবুও বন্ধ করা হয়েছে পণ্য সরবরাহ
চট্টগ্রামের ৬ জেলার মানুষ পাননি টিসিবি’র কোনও পণ্য
খুলনা অঞ্চলে পণ্য তুলেছেন মাত্র ২৩ শতাংশ ডিলার, দেওয়া হয়নি তেল-খেজুর