X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাজ চান টাম্পাকোর শ্রমিকেরা

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর প্রতিনিধি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৬:৩২আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৬:৪৬

টাম্পাকো রবিবার নবমদিনে পড়লো গাজীপুরের টাম্পাকো ফয়েলস অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি লিমিটেডের দুর্ঘটনা। শনিবার অষ্টম দিন কারখানার ধ্বংসস্তূপ সরানো ও উদ্ধার কাজ অব্যাহত ছিল। এদিন বিকেল পর্যন্ত আর কোনও মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, কারখানার অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে কারখানায় আসেন। কারখানার ভবন এখনও ধংসস্তূপে। সে কারণে ফের কর্মসংস্থান মূল দাবি এখন শ্রমিকদের। তবে শ্রমিকেরা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে কারখানা মালিককে তারা কাছে পেতে চান।

টাম্পাকোর ঘটনায় এখনও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের লোকজন কারখানার ধংসস্তূপের আশপাশে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে এখনও ঘোরাফেরা করছেন।

মাগুরা জেলার ছনপুর গ্রামের নিখোঁজ আজিম উদ্দিনের (৩৬) স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশ হলেও আমি চাই। লাশ না নিয়ে আমি বাড়ি ফিরবো না।’

দু’দিনে কোনও আশার খবর পাইনি

ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দিদারুল্লাহ গ্রামের জেবল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। টাম্পাকোর ঘটনায় তিনিও নিহত হন ঘটনাস্থলেই। তার ছোট ভাই বজলুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি কারখানা মালিকের পক্ষ থেকে। ঈদের আগের দিন মরদেহ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেছি। একটা ঈদ গেল টেরই পাইনি। পরিবারের একটা লোক ঈদের দুদিন আগে চলে গেলে সে পরিবারে ঈদ থাকে না।’

বজলুর রহমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের দাফনের পর কেউ কোনও খোঁজখবর নেয়নি। শুক্র ও শনিবার দুদিন কারখানার সামনে ঘুরে এসেছি। দেখি, তার পরিবারকে কোনও ধরনের সহযোগিতা সরকার বা কারখানা কর্তৃপক্ষ করে কিনা! কিন্তু দুদিনে এমন কোনও আশার খবর পাইনি।

সোলেমানের বউ-বাচ্চা আমার বাড়িতে থাকে, খায়

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার আনোহা গ্রামের করিম বক্সের ছেলে সোলেমান (৩২)।১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হন।

সোলেমানের চাচাতো ভাই তাহের মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোলেমানের মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার জন্য মালিকের পক্ষ থেকে ১২ হাজার টাকা অ্যাম্ব্যুলেন্স ভাড়া পেয়েছিলাম। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে জানতে পেরেছি, হতাহতদের পরিবারকে সাহায্য করা হবে। সোলেমানের এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী এখন পর্যন্ত আমার বাড়িতে খায়, থাকে। ঈদ চলে গেল, কাউকে কোনও খোঁজখবর নিতে দেখিনি।’

তাহের বলেন, ‘২০১০ সালে সোলেমান টাম্পাকোতে যোগ দেয়। বউ, বাচ্চা নিয়ে টঙ্গীতেই থাকতো। গ্রামের বাড়িতে থাকার মতো তার কোনও ঘর-দুয়ারও নেই। বৃদ্ধ মা-বাবাকে যতটুকু পারতো, ততটুকু সাহায্য করতো। সোলেমানের দুই ভাইও সহজ-সরল। তারা নিজেরাই চলতে-ফিরতে পারে না। ভাইয়ের বউ বাচ্চা কীভাবে চালাবে! তার পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য কারখানা মালিক ও সরকারের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত স্থায়ী কোনও সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।

আশা রাখি মালিক সদয় হবেন শ্রমিকদের প্রতি

টাম্পাকো কারখানার লেমিনেশন বিভাগের সহকারী অপারেটর রানা বলেন, ‘প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন-ভাতা, ওভারটাইম পেয়েছি। বিগত দিনের মতো এত বড় একটা ঘটনার পর এবারও শ্রমিকদের প্রতি মালিক সদয় হবেন বলে আমরা আশা রাখি। যতদিন চাকরি করেছি, এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য কর্তৃপক্ষের কোনও অনাগ্রহ দেখিনি।’

টাম্পাকো

কাজ ফেরত চান টাম্পাকোর শ্রমিকেরা

সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুরা গ্রামের হেলাল আহমেদের ছেলে মো. হাসান আহমেদ কারখানার ফয়েল সেকশনে ১৬ বছর ধরে কাজ করেন। এ কারখানায় কখনও শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি। কারখানাটি শুধু মালিকের নয়, এটি এখন আমাদেরও প্রতিষ্ঠান। মালিকের কাছে আমরা যখন যা দাবি করেছি, তা তিনি পূরণ করেছেন। আমরা সরকার, কারখানা মালিক এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের দাবি, আমাদের কর্ম ফেরত চাই।’

হাসান আহমেদ বলেন, ‘যারা নিহত হয়েছেন, তারা বেঁচে থাকলে আর্থিকভাবে যেভাবে চলতেন, ঠিক সেভাবেই যেন তাদের পরিবারের সদস্যরা ভবিষ্যতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন, এ ব্যবস্থার নিশ্চয়তা চাই। আমাদের যেসব সহকর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ চাই।’

অন্তরটা ফেটে যায় সহকর্মী, তাদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য

রাতের শিফটে কাজ শেষে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুরা গ্রামের কামরুল হাসান ১০ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ৬টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে দেখেন, গ্যাস পাইপ ফুটো হয়ে গ্যাস বেরুচ্ছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। এতেই সব শেষ। সামান্য আহত হয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নেন।

কামরুল বলেন, ‘এখন বেঁচে আছি তবে মনের ভয় কমেনি। শুক্রবার বাড়ি থেকে কারখানায় এসেছি। শনিবারও দেখি উদ্ধার কাজ চলছে। অন্তরটা ফেটে যায় সহকর্মী, তাদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য। নিজের হয়ত সেরকম কিছু করার সক্ষমতা নেই, কিন্তু মালিককে হতাহতদের জন্য একটা কিছু করতেই হবে।’
ঘটনার কারণ কী!

জাকির হোসেন কারখানার শ্লেটিং শাখার কর্মী। তিনি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জের সুন্দিশাইল গ্রামের বাসিন্দা। জাকির হোসেন বলেন, ‘সব ধরনের পরিবেশ আমাদের ভালোই ছিল। আমরা বেশ শান্তিতেই কাজ করছিলাম। কী কারণে এমন একটা ঘটনা টাম্পাকোকে ধ্বংস করে দিলো এর কারণ অবশ্যই আমরা জানতে চাই। তবে এর আগে আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের কর্ম চাই।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে চাই এবং তিনি যেন কারখানাটি আবার আগের মতো দাঁড় করিয়ে আমাদের কর্মের ঠিকানা ফিরিয়ে দেন। আমাদের বিশ্বাস, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাউকে নিরাশ করবেন না। আমরা হতাহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারখানা মালিকের কাছে দাবি করবো যেন তিনি সবাইকে উপযুক্ত সহযোগিতা করেন। এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সহযোগিতা চাই।’

টাম্পাকোর শ্রমিকেরা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তিতাস গ্যাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন

মালিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তিতাস গ্যাসের বিরুদ্ধে টাম্পাকো শ্রমিক-কর্মচারীদের মানববন্ধন

টঙ্গীতে টাম্পাকো ফয়েলস অ্যান্ড প্যকেজিং লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের জন্য কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কারাখানাটির শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা টাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকেই বরং দায়ী করেছেন।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতুর নিচে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে শ্রমিক-কর্মচারীরা স্লোগান দেন- ‘টাম্পাকো পুড়লো কেন, তিতাস গ্যাস জবাব চাই’, ‘টাম্পাকো পরিবার বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই’, ‘টাম্পাকো বাঁচলে টাম্পাকো পরিবার বাঁচবে’, ‘সুখে ছিলাম-দু:খে আছি, আমরা টাম্পাকোকে ভালোবাসি’,‘টাম্পাকোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই, করতে হবে’।

টাম্পাকোর শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আধাঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- অপারেটর জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, লিটন, মজিবুর রহমান, আব্দুর রহিম প্রমুখ।

১০ সেপ্টেম্বর সকালে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েলস অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এ সময় কারখানিার চারটি ভবনের মধ্যে তিনটি ধসে পড়ে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন।

/এবি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়