X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

একবছর আগে নিখোঁজ হয় জয়পুরহাটের জঙ্গি আমিমুল

আলমগীর চৌধূরী, জয়পুরহাট
১২ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৪৭আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৪০

গাজীপুরের হাড়িনালে নিহত জঙ্গি আমিমুল এহেসান অপু

ঠিক এক বছর আগে ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে বগুড়ায় নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয় আমিমুল এহেসান অপু। তার খোঁজে বাবা আব্দুল গাফফার থানায় জিডি করেছেন, ছেলের চিন্তায় চিন্তায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছেন কিন্তু ছেলের কোনও খোঁজ পাননি। সেই খোঁজ তিনি পেলেন র‌্যাবের হাতে ছেলে নিহত হওয়ার পর। গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুরের হাড়িনাল এলাকার একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই অভিযানে আমিমুল এহেসান অপুসহ দুই জঙ্গি নিহত হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর মঙ্গলবার তার পরিচয় নিশ্চিত হয় তারা। গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশের পর জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামের বাড়িতেও ঘটনাটি জানতে পারে অপুর পরিবার।

বুধবার সকালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামে নিহত অপুর বাড়িতে গেলে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তার বাবা আব্দুল গাফফার আক্ষেপ করতে করতে বলেন, ‘আমার বড় দুই ছেলেকে ঢাকায় পড়িয়েছি। কিন্তু সেশন জটে যাতে না পড়ে সেজন্য অপুকে ভর্তি করিয়েছিলাম বগুড়ার একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। ওখানে গিয়েই খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে বিপথে গেল ছেলেটা।’ আক্ষেপ আর হাহাকার মেশানো কণ্ঠে এভাবেই পুড়ছেন গাজীপুরের হাড়িনালে নিহত জঙ্গি আমিমুল এহেসান অপুর বাবা আব্দুল গাফফার।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় জঙ্গি আমিমুলের বাড়ি

এদিকে, শোকে মূহ্যমান অপুর মা তাহেরা বেগম বিলাপের মধ্যে ছেলের মরদেহ ফেরত চাইছেন বারবার।   

পুলিশের তথ্যানুযায়ী, এক বছর থেকে নিখোঁজ ছিল আমিমুল এহেসান অপু। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আমিমুল ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। ছুটি কাটিয়ে ৪ অক্টোবর বগুড়ায় যায়। সেদিন বগুড়ায় পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে একবার কথা বলে অপু। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পায় তার পরিবার। উদ্বিগ্ন বাবা ওই রাত এবং পরদিন তাকে একাধিকবার ফোন দিয়েও যখন আর তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না তখন বগুড়াতেও খোঁজ নেন। সেখানেও তাকে না পেয়ে দুদিন পর ৬ অক্টোবর কালাই থানায় ছেলে নিখোঁজের তথ্য দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আব্দুল গাফ্ফার। অপুর বড় ভাই আতাউর রহমান ঢাকার একটি ইলেক্ট্রনিক কম্পানিতে বড় পদে চাকরি করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনিও বাড়ি এসেছেন। নিহত আমিমুলের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে তিনিও ভেঙে পড়েছেন। তিনি গণমাধ্যমে তাঁর কর্মস্থলের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানান।

ছেলে আমিমুল জঙ্গি হওয়ায় বাবা আব্দুল গাফফারের আক্ষেপ

বুধবার সকালে নিহত জঙ্গি আমিমুলের বাড়ি কালাইয়ের বেগুনগ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মা তাহেরা বেগম বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছেন। নিহত অপুর  এক বছর ধরে ছেলের সঙ্গে কোনও কথা না হওয়ায় অঝোরে কান্নাকাটি করছেন আর বলছেন ‘আমার ছেলের লাশ যেন আমাকে দেওয়া হয়।’ এসময় যারা তার ছেলেকে বিপথে নিয়ে গেছে তাদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।

জঙ্গি অপুর বাবা আব্দুল গাফ্ফার ছেলের চিন্তায় প্রায় আড়াই মাস আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। হুইল চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ পর পর ছেলের জন্য ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন তিনি। ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অন্য দুই ছেলে ঢাকায় পড়ালেখা করেছে। তারা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে চাকরিও করছে। কিন্তু, আমিমুলকে বগুড়ায় ভর্তি করানো আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বগুড়ার নোংড়া পরিবেশ ছেলেকে ভুল পথে নিয়ে গেছে। যা আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমিমুলের মরদেহ গ্রহণ করার জন্য তার মেজ ছেলে আশিকুর রহমান গাজীপুর গেছেন। সরকারের কাছে ছেলের মরদেহ ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।’

জঙ্গি হয়ে র‌্যাবের গুলিতে নিহত হওয়ায় আমিমুলের মায়ের আহাজারি

এদিকে, পরিবারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, শান্ত স্বভাবের আমিমুল যেন সেশন জটে না পড়ে এজন্য তাকে বগুড়ার জলেশ্বরীতলার বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ ইনস্টিটিউশনে (সিএসবিএসআই) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করানো হয়। আমিমুল সেখানে অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। কিন্তু সেখান থেকেই ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর নিখোঁজ হয় সে।

গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য প্রতিবেশী শেখ শাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, অপুকে শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবেই চিনতেন তিনি। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত নিয়মিত। আদব কায়দাও ভাল ছিল। সেই ছেলে যে এভাবে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িয়ে নিহত হবে টেলিভিশনের মাধ্যমে এটি জানার পর পুরো গ্রামের মানুষ হতবাক হয়ে গেছে।

আরেক প্রতিবেশী আহসান চৌধুরী বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমিমুলের ক্রিকেট খেলার নেশা ছিল। স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে সে নিয়মিত খেলাধুলা করত। সেই ছেলে কখন যে জঙ্গি হয়ে গেছে আমরা বুঝতেই পারলাম না।’ তিনি আমিমুলকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে আমিমুল এহসানের নিহতের খবর নিশ্চিত হয়ে মোবাইল ফোনে তার বড় ভাইদের বিষয়টি জানানো হয়।  পরিবারের পক্ষ থেকে তার মেজ ভাই আশিকুর রহমান মরদেহ নেওয়ার জন্য বুধবার গাজীপুর গেছেন।

/টিএন/

আরও পড়ুন: কোচিং করতে এসে জঙ্গি হয়ে ওঠে সাইফুল

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী