X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে জঙ্গি হলো মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আহসান

নওগাঁ প্রতিনিধি
১৪ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৫৩আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ০৯:০০

নওগাঁয় শোভনদের বাড়ি

বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আহসান হাবীব উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি বড় কর্মকর্তা হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ালেখা শেষে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহীতে। চান্সও পায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে। ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করে আহসান।

বাবা মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কখনো ভাবেননি তার এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। স্বজনদের মতো প্রতিবেশীদেরও চাওয়া ছিল বড় হয়ে বাবার মতো লাল সবুজের পতাকার জন্য, দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে আহসান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি জঙ্গির খাতায় নাম লিখিয়ে বনে যায় জঙ্গি আহসান। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে র‌্যাবের এক অভিযানে নিহত হয় আহসান হাবিব শোভন।

১২ অক্টোবর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার বাবা, স্বজন আর প্রতিবেশীরা এসব কথা জানান। 

বাবা আলতাফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নওগাঁর রানীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে তাদের পৈত্রিক বাড়ি, ভিটা আছে। বছর দশেক আগে সেখান থেকে সপরিবারে নওগাঁয় এসে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। নওগাঁ জজকোর্ট এলাকায় এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবির সেরেস্তায় মহুরির কাজ করেন তিনি।

খেয়ে-না খেয়ে অর্থের যোগান দিয়ে নওগাঁর স্বনামধন্য কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করান আহসানকে। কোচিং করান। সেখান থেকে এসএসসি পাস করার পর নওগাঁ সরকারি কলেজে পড়ে আহসান। এইচএসসি পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠানো হয় রাজশাহীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও মেসে থাকতো সে।

ছেলের ছবি হাতে আহসানের মা ও বাবা

স্বজনরা বলেন, পরিবারের সকলের অজান্তেই আহসান রাজশাহীতে শিবিরের খাতায় নাম লেখায়। নাশকতা চালানোর সময় অস্ত্রসহ আটকের পর বিষয়টি জানতে পারেন তারা। এরপর থেকে অনেকটাই আড়ালে আড়ালে থাকতো জঙ্গি আহসান। জামিন নিয়ে নওগাঁয় বাড়িতে এসেও বাড়ির বাইরে বের হতো না। শান্ত প্রকৃতির মেধাবী আহসান কিভাবে জঙ্গির খাতায় নাম লেখালো, এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তার আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, এলাকাবাসীর পরিমণ্ডলে।

এ প্রসঙ্গে আহসানের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, হঠাৎ একদিন মোটরসাইকেল নিয়ে রাজশাহী থেকে নওগাঁয় আসে আহসান। বাইকের কথা জিজ্ঞেস করতেই সহপাঠীর বলে বাবা মায়ের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু পরে সেটি আর গোপন থাকেনি। শিবিরের ক্যাডাররা তাকে ওই মোটরসাইকেল দিয়েছিল দলের হয়ে নাশকতা চালাতে।

বাবা জানান, অস্ত্র মামলা থেকে জামিন নিয়ে ২০১৫ সালের মে মাসে বাড়িতে আসে জঙ্গি আহসান। কিন্তু হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী থেকে সহযোগীরা এসে নিয়মিত পড়ালেখা ও ক্লাস করার নাম করে নিয়ে যায় তাকে। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের লোকজনের। ফোন করেও পাওয়া যায়নি বেশ কিছু দিন।

সহযোগীরা নিয়ে যাবার পর থেকে আহসান হাবিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিবারের কেউ যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ হতো না। বার্তা পাঠানো হলেও জবাব আসেনি। হঠাৎ একদিন ফোন ধরে অনেক বিপদে থাকার কথা জানায় আহসান। তখন ফেসবুকে যোগাযোগ রাখতে বলে। কিন্তু ফেসবুকে পাঠানো লেখার ভাষাগুলো ওর মনে হয়নি স্বজনদের কাছে। মনে হয়েছে অন্য কেউ পাঠাচ্ছে।

নিহত জঙ্গি আহসান হাবিব শোভন কিছুদিন পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফোন বন্ধ পেয়ে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি জিডি করেন বাবা।
ছেলে আহসান ছিল সহজ সরল, মেধাবী। জঙ্গিবাদের গডফাদাররা মগজ ধোলাই করে, লোভে ফেলে এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে দলে ভিড়তে বাধ্য করেছে বলে মনে করেন আলতাফ হোসেন। স্থানীয়রা বলেন, শেষবার বাড়িতে এসে স্থানীয় মসজিদে একবার নামাজে ইমামতিও করেছে আহসান হাবিব। তখন তার আচরণে অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে।
আহসানের ছোট চাচা শরিফ উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিল ভাতিজা আহসান। পরিবারের আদর্শের বাইরে গিয়ে জঙ্গি বনে যাওয়ায় হতবাক হয়ে পড়েছেন তারা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জঙ্গির গডফাদাররা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ মানুষদের ক্ষতি করতে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ক্ষতি করতে পরিকল্পনা করে গোপনে আহসানকে দলে ভিড়তে বাধ্য করেছে।

প্রতিবেশী জরিনা বিবি নামে এক বৃদ্ধা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আহসান হাবিবকে ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে হিসেবে আমরা জানি। কিন্তু আমরা ভাবতেই পারিনি সে এমন পথে পা বাড়াবে।

রানীনগর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ২০১৪ সালের শেষের দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানায় অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয় আহসান। এর কিছুদিন পর জামিনে মুক্ত হয়ে নিখোঁজ হয় সে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে রাজশাহী বোয়ালিয়া থানায় জিডি করা হয়।

এদিকে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গত বুধবার জঙ্গি আহসানের লাশ গ্রহণ করে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
তীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগতীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া