X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কল্পনা চাকমার অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান পরিবারের

রাঙামাটি প্রতিনিধি
১৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:৩৭আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:৩৮

কল্পনা চাকমা আলোচিত কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবারও প্রত্যাখান করেছেন কল্পনার বড় ভাই ও অপহরণ মামলার বাদী কালিন্দী চাকমা। মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এ নিয়ে গত ২০ বছরেও মামলার কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোও। এজন্য তারা ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১১ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় ‘তদন্তকালে ভিকটিমের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও ভিটটিম কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার এবং মামলা-রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে কল্পনা চাকমা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া গেলে বা তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলে যথানিয়মে মামলাটির তদন্ত পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’  
বাদীর আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কল্পনা অপহরণ মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। ওই তদন্ত রিপোর্টের ওপর বাদী কালিন্দী চাকমা নারাজি আবেদন করার পর পুনরায় তদন্তের জন্য রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কল্পনার বড় ভাই ও অপহরণ মামলার বাদী কালিন্দী চাকমা বলেন, আমি যে তথ্য দিয়েছি তার ষোল আনার এক আনাও প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়নি। আমি প্রত্যেকের নাম ঠিকানা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলার পরও কেন তিনি তা তার প্রতিবেদনে দেননি তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। ওই রাতে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র দল কল্পনা চাকমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় সশস্ত্র দলের সঙ্গে থাকা তিনজনকে আমি ও আমার ভাই লাল বিহারী চাকমা চিনতে পেরেছিলাম। আমাদেরকেও সেই সময় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আমরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। আমরা এই তদন্ত প্রতিবেদনটি মেনে নিতে পারছি না।  

তিনি আরও বলেন, আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কি করা যায় পরবর্তীতে সেই বিষয়ে সিন্ধান্ত নেয়া হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন হিল উইমেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি চনচনা চাকমা বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। আমরা এখনো বাদীর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। বাদী ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলবো। যদি সন্তোষজনক না হয়, অবশ্যই দলীয় ফোরামে আলোচনা শেষে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। সরকারকে অবশ্যই আপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-তথ্য ও প্রচার  সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, এতো বছর পরও কল্পনার হদিস এবং তার বিচার নিশ্চিত করতে না পারায় পুলিশ, গোয়েন্দা, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সরকারে ব্যর্থতা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। এই অপহরণ ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় তা ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করবে। সরকারের আগ্রহ যদি থাকে অবশ্যই কল্পনা চাকমার হদিস এবং তার অপহরণকারী খুঁজে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে হয়।

ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা এক বিবৃতিতে রাঙামাটি পুলিশ সুপার প্রদত্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এটিও পূর্বের তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর মতোই পুরোপুরি সাজানো, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং স্পষ্টতই চিহ্নিত অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।’

নেতৃদ্বয় অপহরণের ব্যাপারে ‘গণতদন্ত কমিশন গঠন’ এবং চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ঘটনার পর থেকেই সরকার ও আইনশৃংখলাবাহিনীর পক্ষ থেকে অপহরণকারীদের রক্ষার মরিয়া চেষ্টা লক্ষণীয়।’

ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সমন্বয়ক বাবুল চাকমা বলেন, নতুন বোতলে পুরাতন মদ। অর্থাৎ পুরাতন রিপোর্টাই নতুন করে দেওয়া হয়েছে। শুধু পার্থক্য হচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তারা পরিবর্তন। সরকারের সদিচ্ছার অভাবে মামলাটি এগিয়ে যাচ্ছে না। কালক্ষেপণ তদন্ত কর্মকর্তার মূল উদ্দেশ্য বলে তিনি অভিযোগ জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, ১৯৯৬ সালের এজাহারে কারও নাম উল্লেখ ছিল না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম শোনা গেলেও আমরা তদন্তের সময় কারো নাম পায়নি। সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মতো তথ্য প্রমাণ  পাওয়া যায়নি।

কল্পনার ভাই কালিন্দী চাকমার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার যেভাবে সময় দেয়া দরকার সেভাবে সময় দেয়া হয়নি। মাডার ও ধর্ষণ মামলার সরাসরি কোন চাক্ষুষ সাক্ষী থাকে না, পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর মাধ্যমে মামলার রায় দেয়া হয়। মুখ্য বিচারিক হাকিম ২০১৩ সালে যেভাবে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছিল বাদী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাদের জিজ্ঞাসবাদ করা যেতে পারে। কিন্তু তাদের কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেখে মনে হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার সাক্ষীদের কেউ কেউ এখন আর বেঁচে নেই। কল্পনার মা এ ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তিনি মারা গেছেন। স্থানীয় এক ইউপি সদস্য এ ঘটনা জানতেন, তিনিও মারা গেছেন।’ মামলার প্রাণ হলো সাক্ষী।

উল্লেখ্য, আগামী ১৯ আক্টোবর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ সামস্ উদ্দিনের আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।

/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
নোয়াখালীতে সনি স্মার্ট-এর শোরুম উদ্বোধন
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের