এক সময়ে দালালদের কব্জায় বন্দী থাকা সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের চিত্র এখন পাল্টে গেছে। এক বছরের প্রচেষ্টায় অনেক কমেছে দালালদের দৌরাত্ম্য, বেড়েছে গ্রাহক সেবার মান। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ফাতেমা বেগম। যোগদানের পর থেকেই অফিসের অনিয়ম, দালালদের তৎপড়তা বন্ধ ও গ্রাহক বিড়ম্বনার অবসান এবং সেবার মানও উন্নত করতে তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার বাস্তবমুখী নানা পদক্ষেপে পাসপোর্ট অফিসের চিত্রও বদলে যেতে থাকে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে গ্রাহক ও অফিস স্টাফদের সঙ্গে কথা বললে এ চিত্র উঠে আছে।
গ্রাহকেরা পাসপোর্ট অফিসের পরিবর্তন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে উল্লাপাড়া থেকে আসা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জামিল বলেন, ‘এক বছরেই পাসপোর্ট অফিসের চিত্র পাল্টে গেছে। এখন আর দালালদের টাকা দিতে হয় না। ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া ছাড়া আর বাড়তি খরচ নেই।’
এদিকে পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে শহরের কাজিপুর মোড় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সিরাজগঞ্জে পাসপোর্ট অফিস। পরে সেখানে দালালদের দৌরাত্মের বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ ও সমালোচনা করে আসছিলেন। অফিস স্টাফ থেকে শুরু করে দালাল সকলেই গ্রাহকদের বেকায়দায় ফেলে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে চলে আসছিল এ অফিসটির কার্যক্রম। পরবর্তীতে মালশাপাড়া কবরস্থানের সামনে স্থানান্তরিত হলেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছিল না এ অফিসটি। এখানেও গত এক বছর আগে দালালদের দখলে থাকায় পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। পরবর্তীতে শহরের থানা রোডে আরশিনগর আবাসিক এলাকায় পাসপোর্ট অফিসের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর হয়।
পরে সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন ও পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদের সহযোগীতায় দালালমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন সহকারী পরিচালক ফাতেমা বেগম।
সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী এহসান জানান, ‘দালাল নির্মূলের লক্ষ্যে অফিস চত্বরে অবাঞ্চিতদের প্রবেশ নিষেধ, অফিসের নীচতলায় অনুসন্ধান, তথ্যকেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক স্থাপন, নিয়মকানুনের নোটিশবোর্ড স্থাপন, গেটের ভেতরে ও বাইরে সিটিজেন চার্টার স্থাপন, অভিযোগ বক্স স্থাপন, দালালদের কাছে যেতে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন স্থাপন করা হয়। এছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে আগতদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে অফিসের বিভিন্ন স্থানে ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়।’
পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কোনও দালালদের পাসপোর্ট অফিসে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। গ্রাহকরা যাতে সঠিক সেবা নিতে পারেন তার জন্য যা প্রয়োজন সেটাই করা হবে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর মাধ্যমে পাসপোর্ট অফিসের অবাঞ্চিত লোকদের প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।’
/এসএনএইচ/