X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন প্রকাশে কুড়িগ্রামে হতদরিদ্ররা পেল রেশন কার্ড

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২১ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৫১আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ০৯:৫৪

রেশন পেয়ে উচ্ছ্বসিত নাওডাঙ্গের গুচ্ছগ্রামবাসী

‘হামার চেয়ে গরিব কাই? হামরায় যদি চাউল না পাই তাইলে পাইবে কাই?’ ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের দুইটি ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নে একটি সরকারি ভাবে গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) প্রায় দুই শতাধিক ভূমিহীন পরিবার ১০টাকা কেজি দরে চালের কার্ড না পেয়ে নিজেদের আকুলতা এভাবেই ব্যক্ত করে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।

‘কুড়িগ্রামে সচ্ছলদের হাতে কার্ড, হতদরিদ্ররা বঞ্চিত’ শিরোনামে এ নিয়ে ১৩ অক্টোবর বাংলা ট্রিবিউনসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অবশেষে উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) সকল ভূমিহীন পরিবার ১০টাকা কেজি দরে চালের কার্ড পাচ্ছেন। এরমধ্যে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পের সকল পরিবার কার্ড হাতে পেয়েছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী মুসা বাংলা ট্রিবিউনকে আবাসন প্রকল্পে বসবাসরত ভূমিহীনদের কার্ড পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের এই জনপ্রতিনিধি জানান, আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের কার্ড না পাওয়া নিয়ে আপনার সঙ্গে (প্রতিবেদন লেখার সময়) কথা বলার পর একদিন রাতের বেলা গিয়ে আমি আবাসনের সকল পরিবারের সদস্যদের আইডি কার্ড নিয়ে আসি। এরপর তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে বুধবার তাদের হাতে রেশন কার্ড তুলে দিয়েছি। বাড়িতে না থাকার কারণে  দু’এক জন  কার্ড পায়নি। তাদেরও শিগগিরই কার্ড দেওয়া হবে এবং আবাসনের কেউই বাদ যাবেনা।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে গোরকমন্ডল বস্তিতে বসবাস করে এমন ৬২ পরিবারের মধ্যে ৫৭ টি পরিবার কার্ড পেয়েছে।  এর আগে সেখানে কার্ড পেয়েছিলেন মাত্র তিনটি পরিবার। চর গোরকমন্ডল গুচ্ছ গ্রামে বসবাস করে ৩৫ পরিবার । সেখানে পেয়েছিলেন ২৬ পরিবার। এখন এই ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পের প্রায় সব পরিবার ১০ টাকা কেজি চালের রেশন কার্ড পেয়েছেন।

কার্ড পেয়ে আবাসনের বাসিন্দারা এখন মহাখুশি। প্রধানমন্ত্রীর ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ চাল পাবে জেনে তারা এখন অনেকটাই দুঃচিন্তামুক্ত। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে গোরকমন্ডল বস্তি বাসিন্দা খৈমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে আমি কার্ড পাই নাই। আপনারা খবর ছাপার পর চেয়ারম্যান আমারে কার্ড দিয়া গেছে। তিনটা বাচ্চা নিয়া এলা খাবারের কষ্ট আর থাকপ্যার নয়।’

খৈমন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই উপকারের কথা হামরা গুচ্ছ গ্রামের মানুষ ভুলবার নই।’

আবাসনের বাসিন্দা বজলা, রফিকুল, ফাতেমা, নাছিমা এবং জামিলা এই প্রতিবেদককে জানান, চালের কার্ড নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লুকোচুরি খেলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের অপকৌশল ব্যর্থ হয়েছে, উচ্চ মহলের চাপে এখন তাদের কার্ড দিতে বাধ্য হয়েছে।

নতুন করে কার্ড পাওয়া এই বাসিন্দারা বলেন, ‘সরকার আমাগো অভাব দূর করার জন্যে চাউলের কার্ড দিছে। হামার আর অভাব থাকপ্যার নয়। হামরা দোয়া করি আল্লাহ্ হাসিনার(প্রধানমন্ত্রীর) য্যান ভাল করে।’

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বস্তি গোরকমন্ডল আবাসনের বাসিন্দা বিধবা সবিজন (৬০) জানান, কখনও কাজ করে আবার কখনও ভিক্ষা করে তার দিন চলে। এখন অন্তত মানুষের বাড়িতে তার আর ভিক্ষা করতে হবে না।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বস্তি গোরকমন্ডল আবাসনের সভাপতি মোন্নাফ হোসেন আবাসনের সকলের কার্ড পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, আমাদের তো জায়গা জমি নেই জন্য সরকার থাকার ব্যবস্থা করে দিছে। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা এই আবাসনবাসিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

অন্যদিকে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নে সরকারী ভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্প ফুলসাগড় গুচ্ছ গ্রামে বসবাসরত ১১৮ পরিবারের কেউই রেশন কার্ড পাননি। তবে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে  তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল হক।

তিনি বলেন, আবাসনে ১১৮ পরিবারের নাম থাকলেও সেখানে বাস করে ৭৫ টি পরিবার। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইতোমধ্যে সেখানে বসবাসরত সকলের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত তালিকা করেছি। পরবর্তী বিতরণ কার্যক্রমে তারা সকলে চাল পাবেন।

আগের তালিকায় তাদের নাম না থাকার কারণ হিসেবে চেয়ারম্যান মইনুল হক জানান, আমাদের দেওয়া নাম অনুযায়ী তালিকা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ডিলার এবং ফুড অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ২০১১ সালের তালিকা অনুযায়ী  তালিকা করা হয়েছিল। বর্তমানে ১৭০টি স্পেশাল বরাদ্দের মাধ্যমে আবাসনের অধিবাসিদের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ ওঁরাও বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ রুট লেভেলে কিছুটা অনিয়ম হয়েছিল। আমি জানান পর সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের বলে দিয়েছি আবাসন প্রকল্পের সকলে যেন ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ সুবিধা পায়। এরই প্রেক্ষিতে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আবাসনের সকলে এই কর্মসূচির চাল পাবেন।’

উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ১২ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ৯২৯৮ জন কার্ডধারীর মাঝে নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওয়ায় ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের দুইটি ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নে একটি সরকারী ভাবে গড়ে উঠা আবাসন প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) প্রায় দুইশতাধিক ভূমিহীন পরিবার ১০টাকা কেজি দরে চালের কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়। সেই সাথে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আরো অনেক হতদরিদ্র পরিবার বাদ পড়ে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসনের। বর্তমানে আবাসন প্রকল্পের সব পরিবার ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।

/এইচকে/

পড়ুন: কুড়িগ্রামে সচ্ছলদের হাতে কার্ড, হতদরিদ্ররা বঞ্চিত

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন