X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
৭ মাসে ৫ রাবি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অপমৃত্যু

লিপু হত্যার সূত্র খুঁজছে পুলিশ

রাজশাহী প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৩৮আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৩৯

মোতালেব হোসেন লিপু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার সবুজ চত্বরে গত সাত মাসে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গিদের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়ে খুন হয়েছেন নিরীহ অধ্যাপক, শয়নকক্ষে মিলেছে রাবি শিক্ষিকার লাশ, গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের ও ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ছাত্রীর। এসব মৃত্যুর রক্তের দাগ না শুকোতেই বৃহস্পতিবার (২০) মতিহার চত্বরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর লাশ উদ্ধার করা হলো। তবে লিপুর মৃত্যু হত্যা মামলার পর থেকে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ, এমনটাই জানালেন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলাম থানায় রাখা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু সঠিক কোনও তথ্য এখনও দিতে পারছে না। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমরা থানায় এনে রেখেছি। কারণ তিনি তার রুমমেট। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য বের হবেই। তবে আমরা এ ঘটনার কোনও লিংক এখন পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছি না। তবে তার বন্ধু প্রদীপসহ হলের অন্য দুই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় বাসা থেকে মাত্র ১৫০ গজ দূরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। এ ঘটনার ছয় মাস পেরোলেও এ হত্যা মামলায় এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ।

গাছ থেকে পড়ে আহত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ মে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জারজিস হোসেনের।

গত ২৮ আগস্ট বিকেলে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সান্ত্বনা বসাকের।

এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনের একটি কক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষিকা আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায় বিষপানে মৃত্যু হয়েছে জলির। ওই রাতে আকতার জাহানের কক্ষে পাওয়া এক চিঠি থেকে জানা যায়, শারীরিক ও মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেন তিনি। এ ঘটনায় প্ররোচণার অভিযোগ ওঠে আকতার জাহানের সাবেক স্বামী এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদ। ঘটনার পরদিন আকতার জাহানের ভাই বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তের উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে আকতার জাহান জলির রক্তের দাগ না শুকোতেই বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব আব্দুল লতিফ হলের পেছনের নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হলো একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোতালেব হোসেন লিপুর রক্তাক্ত- প্রায় বিবস্ত্র লাশ। লিপুর বন্ধুদের সন্দেহ, জালিয়াত চক্রের খপ্পরে পড়ে একটি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে লিপু । প্রক্সির টাকা নিয়ে ওই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দরকষাকষি চলছিল লিপুর। টাকা পয়সার লেনদেন কিংবা চক্রের সদস্যদের পরিচয় ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় ঘটতে পারে এ হত্যাকাণ্ড। এমনটা দাবি করে নিজে বাদী হয়ে চাচা বশির মোল্লা নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদেরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

সম্প্রতি এক নিয়োগ পরীক্ষায় বডি পরিবর্তন করে পরীক্ষায় দিতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের (রাবি) নিহত শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু। পরে এই ঘটনায় সাজাও পেয়েছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনার পর থেকে ওই পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের কে বা কারা তাকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানান নিহত লিপুর সেজো চাচা মো. বশির মোল্লা।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে লিপুর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু থানার মকিমপুর গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়। লিপুর গ্রামের বন্ধু ও বাড়ির আশেপাশের আত্মীয়স্বজন লিপুর কারো সাথে দ্বন্দ্ব ছিলো বলে ধারণা করতে পারছেন না।

পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের কে বা কারা তাকে নিয়মিত হুমকি দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, লিপুর মোবাইল ফোনটা পাওয়া যায়নি। এতে করে আরেকটু সমস্যা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে কারও জিজ্ঞাসাবাদ করেও তেমন কিছু পাচ্ছি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি।

রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এরকম অপমৃত্যু বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান বলেন, একের পর এক এভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অপমৃত্যু মেনে নেওয়া আমাদের সকলের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যাতে করে এই ধরনের ঘটনাগুলো এড়িয়ে চলা যায়।

/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং দ্বৈরথ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে