X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনা: গণশুনানিতে রিফাতসহ ১৯ জনের সাক্ষ্য

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:১৪আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৯:১৪

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার ঘটনায় একজন বিচারকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির গণশুনানির প্রথম দিন নির্যাতনের শিকার দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাতসহ ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত স্কুলে ওই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে দ্বিতীয় দফায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনা: গণশুনানিতে রিফাতসহ ১৯ জনের সাক্ষ্য

জানা গেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গত ১৩ মে স্কুলে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানে ধরে ওঠবস করান স্থানীয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান। ওই ঘটনায় আদালত পরে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে তদন্ত করতে ঢাকা সিএমএম আদালতে একজন বিচারককে নির্দেশ দেন।

সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা সিএমএম আদালতের চিফ ম্যাজিস্ট্র্রেট হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি স্কুল মাঠে এসে উপস্থিত হন। সঙ্গে থাকা অপর দুইজন হলেন- ঢাকা মেট্রোপলিট্রন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম ও গোলাম নবী।

গণশুনানির শুরুতেই তদন্ত কমিটি নির্যাতনের শিকার দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। দীর্ঘ প্রায় ১ঘণ্টা সময় নিয়ে তদন্ত কমিটি রিফাত হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এরপরই সাক্ষ্য দিতে যান রিফাতের মা রীনা বেগম। এরপর একে একে সাক্ষ্য দেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ফারুকুল ইসলাম টগর, ইংরেজি শিক্ষক উত্তম কুমার গুহ, গণিতের শিক্ষক মোশারফ হোসেন, বাংলা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রানা, রূপন্তী, ধর্ম শিক্ষক বোরহানুল ইসলাম, ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী মৃদুল, স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মাহমুদুল ইসলাম, মুয়াজ্জিন আবদুল হাই, ইংরেজি শিক্ষক মাসুম মিয়া, ১০ম শ্রেণির ছাত্রী আখি আক্তার, হামিদুল, মাকসুদ, রূপম প্রমুখ।

গণশুনানি শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় তদন্ত টিম বের হয়ে যান। তখন এলাকাবাসী স্মারকলিপি দিতে চাইলে সেটা গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত কমিটির কেউ গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে পরবর্তী শুনানি হবে।

এদিকে গণশুনানি গণবিক্ষোভে পরিণত হয়। শুনানি শুরু হওয়ার আগেই সকাল থেকে এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ শ্যামল কান্তির বিচার দাবি করে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে স্কুল মাঠে জড়ো হয়। তারা শ্যামল কান্তি ভক্তের বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে প্রতিদিনের মত পুলিশি নিরাপত্তায় স্কুলে এসে উপস্থিত হন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। তাছাড়া সেখানে জড়ো হওয়া লোকজনদের বেশিরভাগই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছিল।

এদিকে রিফাতের মা তার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রিফাতের সহপাঠীদের লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে দাখিল করতে চাইলে তদন্ত কমিটি তা গ্রহণ করেনি।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া লোকজন জানান, ৮ মে স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাতকে মারধর করে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। ওই সময়ে শিক্ষক আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেন অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার জের ধরে ১৩ মে শুক্রবার সকাল ১১টায় এলাকার কয়েক হাজার ধর্মভীরু নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে স্কুলের ভেতরে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় উত্তেজিতরা শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দিয়ে তার শরীরের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে। পরে বিকাল ৪টায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান। এ সময় স্থানীয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে মুচলেকা দেন।

ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে এলে হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়। রুল হওয়ার পর ২৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা দায়সারা বলে অসন্তোষ জানিয়েছিল আদালত। এরপর ৮ জুন জেলা প্রশাসক নতুন করে প্রতিবেদন দেন হাই কোর্টে। ওই ঘটনার করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে অগ্রগতি আছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসি ৬০ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তখন স্কুলশিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় করা জিডির তদন্তে আসা ফল হলফনামা আকারে ৪ আগস্ট আদালতে দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়। গত ৭ আগস্ট পুলিশের সেই প্রতিবেদন হাই কোর্টে পড়ে শোনায় রাষ্ট্রপক্ষ। সেদিন আদালত ওই প্রতিবেদনের আলোকে একজন বিচারককে তদন্ত করতে নির্দেশনা দেন। হাইকোর্টে আগামী ৪ নভেম্বর ওই মামলার শুনানি হবে।

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’