X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি-অনিয়মে জর্জরিত চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৩২আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৩৫





চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অভ্যন্তরে দুর্নীতি-অনিয়মের যেন শেষ নেই। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে যেমনি লাখ লাখ টাকার অর্থ বাণিজ্য করা হয়েছে তেমনি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কলেজ অধ্যক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও জামায়াত-বিএনপির অনেককেই। এছাড়া কলেজটি জাতীয়করণের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকার ওপরে। এক শিক্ষক দেশের বাইরে থাকলেও তার নামে তোলা হয়েছে মাসের পর মাস সরকারি বেতন। কলেজের আরেক শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজটি জাতীয়করণের সম্ভাব্য তালিকায় থাকলেও ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন ফুঁসছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ। কলেজটি ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এখানে ১০৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর সমন্বয়ে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। তবে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি আর অনিয়মে বাসা বেঁধেছে। আর এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মূলে রয়েছে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। তিনি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯৮৩ সালে প্রভাষক পদে যোগদান করলেও ২০০৭ সালের ১৪ জুন অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। সেসময় আদালত কর্তৃক আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা সত্ত্বেও আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। অভিযোগ আছে তিনি ওই সময় কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। ফলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং পরিচালনা পর্ষদের কতিপয় বিএনপি দলীয় সদস্যের সহযোগিতার মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজসহ ২২টি কলেজ সরকারিকরণের বিষয়ে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মাউশি চিঠি দেয়। এছাড়া ওই বছরের ১৬ জুন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় রয়েছে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ম্যানেজ করে এ পর্যন্ত ৩৩ শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন।
অভিযোগ রয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং প্রতি কর্মচারীর কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রভাষক সোহেল রানা অধ্যক্ষের ছোট জামাই, প্রধান সহকারী সহিদুল ইসলাম ভাতিজা, অফিস সহকারী খালিদ হোসেন ফুফাতো ভাই ও অফিস সহায়ক শাহজাহান আলী চাচাতো ভাই। এ চারজনই জামায়াত সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মাহবুব আলম একই সঙ্গে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। গত ৪ বছর ধরে চুয়াডাঙ্গাস্থ ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় তিনি আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ক্লাস নেননি। কিন্তু অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দুই প্রতিষ্ঠানেরই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
এছাড়া দর্শন বিভাগের প্রভাষক আবদুর রাজ্জাক বর্তমানে সুইডেনে অবস্থান করছেন। তিনি এক বছরের ছুটি নিয়ে ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সুইডেনে যান। কিন্তু দুবছর সেখানে থেকে ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর দেশে ফেরেন এবং অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে ৩ বছরের বকেয়া বেতনভাতা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ সুইডেনে যেয়ে এক বছর পর ২০১৪ সালের ২ মার্চ ফিরে আসেন। পরে মাত্র ২৪ দিন পর ২৬ মার্চ পুনরায় সুইডেনে যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। কিন্তু সুইডেনে যাওয়ার এক বছর পরও ২০১৫ সালের মে, জুন ও জুলাই মাসের হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর দেখা যায়। অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ওই শিক্ষকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিজের কাছে রেখে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়।

কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫০-৫৫ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে। পরবর্তীতে কলেজটি সরকারিকরণ না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের দেওয়া টাকা অধ্যক্ষ কর্তৃক আত্মসাতের অভিযোগ তুলছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুব আলম যিনি একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রভাষক মাহবুব আলমের দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়েছি। আর সুইডেন প্রবাসী শিক্ষক আবদুর রাজ্জাককে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!