X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রত্যাশিত রায় পাইনি’

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
৩০ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:৪৪আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ২১:০৩

সাংবাদিক মানিক সাহা প্রায় এক যুগ আগে খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার রায়ে ৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১৪ আসামির মধ্যে ৩ জন আগেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। বাকি ১১ জনের মধ্যে ২ জনকে বুধবার খালাস দেওয়া হয়েছে। আর সাজাপ্রাপ্ত ৯ জনের মধ্যে ৪ জন জেল হাজতে ও ৫ জন পলাতক রয়েছেন। আসামিদের সবাই ছিলেন চরমপন্থি দলের সদস্য। রায়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী, সাংবাদিক ও নিহতের স্বজনরা।  

খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার বুধবার বেলা দেড়টার দিকে জনাকীর্ণ আদালতে মানিক সাহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে বিচারক সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় বলেন, ‘এই মামলায় সাংবাদিক, পরিবার বা আপনজনের সাক্ষ্য তেমন একটা সহায়ক ছিল না। মামলার নথি পর্যালোচনা করেই রায় দেওয়া হচ্ছে।’ এই মামলার বিস্ফোরক অংশের ১০ আসামির সবাই খালাস পান। মানিক সাহা হত্যা মামলার আসামি

খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘আমরা এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু বিচারক যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। এ সাজা প্রতাশিত না হলেও আমরা অখুশী নই। এ সাজার মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার ও আইনের কঠোর অবস্থানের একটি বার্তা অপরাধীদের কাছে যাবে।’

মানিক সাহা হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার হত্যা অংশে ৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৯ জনের এবং বিস্ফোরক অংশে ১৬ জনের মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা আদালতের অতিরিক্ত পিপি এম এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ যথাযথ না হওয়ার কারণে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় এমন রায় হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ আরও ভালো হতে পারতো। আর নিহতের পরিবার ও স্বজনরা ঠিকমত সাক্ষ্য দিলে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়া সম্ভব ছিল।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী মামুনর রশীদ জানান, তিনি দুই আসামির পক্ষে ছিলেন। এর মধ্যে আব্দুল হাই কচি খালাস পেয়েছেন। আর আকরাম হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আকরামের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষীই সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। এ অবস্থায় আকরাম হোসেনের পক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মানিক সাহা হত্যা মামলার আসামি

খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। এখন আমরা রায়ের পূর্ণ কপি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করার পরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবো।’

সাংবাদিক মানিক সাহার ভাই প্রদীপ সাহা বলেন, ‘মানিক সাহাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে যাবজ্জীবন সাজায় সস্তুষ্টি আসবে না। সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। আর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তি ও নেপথ্যের নায়কদেরও চিহ্নিত করার দাবি ছিল। কিন্তু প্রকৃত আরও অপরাধী ও নেপথ্যের নায়করা বাইরেই রয়ে গেছে। মামলার বাদী রাষ্ট্র। তাই রাষ্ট্রকেই এগুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’

উল্লেখ্য ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে রিকশায় করে খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন সাংবাদিক মানিক সাহা ও হুমায়ুন কবীর বালু। এরপরই তার পরিচিত এক ব্যক্তি ক্লাবে আসেন এবং মানিক সাহার সঙ্গে একান্তে কথা বলে বেরিয়ে যান। এ আলাপচারিতা শেষে মানিক সাহা বাসায় ফেরার লক্ষ্যে আবার রিকশায় উঠে রওনা হন। প্রেসক্লাবের অদূরে ছোট মির্জাপুরে প্রবেশের মুখে সড়কে পৌঁছানোর পর ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার আঘাতে মানিক সাহার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়। ধরহীন দেহটি রাস্তার পাশে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিকরা ছুটে আসেন এবং পড়নের কাপড় দেখে মানিক সাহার মরদেহটি শনাক্ত করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পর ১৭ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। খুলনা সদর থানার এসআই রনজিৎ কুমার দাস বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ২০ জুন খুলনা থানার তৎকালীন ওসি মোশাররফ হোসেন ৫ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে কেএমপির ডিবির পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর অধিকতর তদন্তের পর ১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। মানিক সাহা হত্যা মামলার রায়

এদিকে ২০০৪ সালের ১৯ মার্চ অপর তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান ফরাজী বিস্ফোরক অংশের চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশ দুই দফা তদন্ত শেষে (অধিকতর তদন্তসহ) ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে হত্যা মামলায় এতে শুধুমাত্র আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এক যুগ ধরে চলে এ মামলার হত্যা ও বিস্ফোরক দুই অংশের কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, সাক্ষীরা যথাসময়ে সাক্ষ্য প্রদান না করায় এ মামলাটি গতি হারায়। মানিক সাহার কন্যা মৌমিতা বিদেশে অবস্থান করায় এবং প্রবীণ সাংবাদিক সাহাবুদ্দিন আহমেদ খুলনায় না থাকায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এনামুল হক, আসামিপক্ষে পারভেজ আলম খান, মঞ্জুর আহমেদ, আহসান হাবিব মঞ্জু, সেলিনা বেগম এবং পলাতক ৬ আসামির পক্ষে এম ইলিয়াস খান মামলাটি পরিচালনা করেন।

আরও পড়ুন- 

/এফএস/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া