X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ ৭৪ জেলে পরিবারে কান্নার রোল

আব্দুল আজিজ, কক্সবাজার
০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৯আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৪৬

সাগরে গিয়ে নাডা’র কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জেলেদের স্বজনদের আহাজারি

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া কক্সবাজারের নিখোঁজ ৭৪ জন জেলে পরিবারে চলছে  শোকের মাতম। কেউ আদরের সন্তানকে হারিয়ে, আবার কেউবা প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে  নির্বাক। এসব পরিবারে প্রতিদিনই চলছে আহাজারি। তাদের বুকফাটা  কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শোকার্ত পরিবারগুলোর পাশাপাশি অঝোরে কাঁদছে তাদের প্রতিবেশীরাও। পুরো এলাকা জুড়ে এখন শুধুই কান্নার রোল।  

তবে দীর্ঘ এক মাস ধরে অপেক্ষায় থাকা এসব জেলে পরিবারের হতাশ সদস্যদের  মনে একটু হলেও আশার আলো জ্বালিয়েছে, ২৪ দিন পর ফিরে আসা ভাসমান তিন জেলে। গভীর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরা উখিয়ার সোনারপাড়া গ্রামের হোছন মাঝি, আব্দুল্লাহ ও শফিউল করিম জানান, ইঞ্জিন বিকল হয়ে আরও তিনটি ট্রলারে বেঁচে থাকা অন্যান্য জেলেরা এখনও পানিতে ভাসছেন। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তারা। এদের মধ্যে স্থানীয় মোক্তার মাঝি, নুরুল বশর, মিন্টু, আরমান, মামুন ও শাহিনসহ ৭৪ নিখোঁজ জেলে এখনও ভাসছেন বঙ্গোপসাগরের অথৈ পানিতে। গত ৩ নভেম্বর এরা প্রত্যেকেই এফবি সাজ্জাদ, এফবি রেশমি, এফবি জায়েদ এবং এফবি আল্লাহর দান ফিশিং ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ৬ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় নাডা’র কবলে পড়ে ফিরতে পারেননি কেউ। সেই থেকে তারা এখনও নিখোঁজ।

সাগরে গিয়ে নাডা’র কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জেলেদের স্বজনদের আহাজারি

১ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়া ও সমিতিপাড়া এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এফবি সাজ্জাদ ফিশিং ট্রলারের ছৈয়দ মাঝি ও জামাল মাঝির নেতৃত্বে ২৯ জন, এফবি জায়েদ ফিশিং ট্রলারের মোক্তার মাঝি ও রুবেলের নেতৃত্বে ১৬ জন, এফবি সুমি ফিশিং ট্রলারের মিনহাজ মাঝি ও মানিক মাঝির নেতৃত্বে ২৬ জন এবং এফবি আল্লাহর দান ট্রলারে ৬ জন জেলে বঙ্গোসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে আর ফিরতে পারেননি।

দীর্ঘ ২৪ দিন পর ফিরে আসা জেলে হোছন মাঝি ও আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে খুব কাছাকাছি মাছ ধরছিলাম আমরা। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়ি। বাতাসের গতিবেগ এত বেশি ছিল যে তীরে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।’ এরপর কূল-কিনারা হারিয়ে ভাসতে থাকেন জেলেরা। গভীর সাগরে কিছু মালবাহী জাহাজ চলাচলের দৃশ্য চোখে পড়েছিল তাদের। কিন্তু লাল কাপড়ের সংকেত দেওয়ার পরও তাদের উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেননি।

দীর্ঘ ২৪দিন পর ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার উপকূলে ওঠেন তিন জেলে। এরপর ওই দেশের দু’জন জেলের সহযোগিতায় তারা ফিরে আসেন পরিবারের সদস্যদের কাছে।তারা জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে আরো তিনটি ট্রলারকে ভাসতে দেখা গেছে। ওই ট্রলারগুলোই কক্সবাজারের কুতুবদিয়াপাড়ার ভেসে যাওয়া নিখোঁজ জেলেদের।

কুতুবদিয়াপাড়া থেকে নিখোঁজ জেলে মিন্টুর বাবা ছালেহ আহমদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দীর্ঘ একমাস পর ফিরে আসা জেলেদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমার ছেলেসহ নিখোঁজ জেলেরা এখনো বেঁচে আছে।’ নিজের ছেলেসহ ভাসমান জেলেদের উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরো বলেন, ‘এ ব্যাপারে ট্রলার মালিকদের কাছে বার বার সহযোগিতা চেয়েও সাড়া পাচ্ছি না।’ কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে নিখোঁজদের পরিবারে বেড়ে গেছে আহাজারি।

সাগরে গিয়ে নাডা’র কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া জেলেদের স্বজনদের আহাজারি

কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস আই আক্তার কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একই এলাকা থেকে একই দিনে ৭৪ জন জেলে নিখোঁজ হওয়ার পর দীর্ঘ একমাস ধরে তাদের উদ্ধার না হওয়া সত্যি দুঃখজনক। আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমার এলাকার ৭৪ জন জেলের নিখোঁজের ঘটনায় তাদের পরিবারের মতো আমিও হতবাক।’

নিখোঁজ জেলেদের তালিকা: গত ৬ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় নাডা’র কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাওয়া নিখোঁজ জেলেরা হলেন স্থানীয় আবুল হোসেন বহদ্দারের মালিকানাধীন এফবি সুমি আকতার রেশমী ফিশিং ট্রলারে থাকা মিনহাজ উদ্দিন মাঝি, মানিক, আলী হোসেন, নুরুল ইসলাম, নুর বাদশা, আতা এলাহী, আনোয়ার, আমির হোসেন, মোহাম্মদ উল্লাহ, ইলিয়াছ, নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেন, আব্দুল আমিন, নুরুল আলম, মজিবুর রহমান, এরফান, নুরুজ্জামান, ছিদ্দিক, লোকমান, মাহবুব আলম, রবি আলম, মো: হোসেন, সাইফুল, মামুন, আবুল কালাম, মকছুদ। এফবি সাজ্জাদ ফিশিং ট্রলারে থাকা মাঝিমাল্লারা হলেন ছৈয়দ মাঝি, জামাল, নুরুল বশর, আরফান, আতিকুর রহমান, মামুন, শাহিন, ছৈয়দ, আব্দু শুক্কুর, মো: গুন্নু, আজম, দুদুমিয়া, মিন্টু, সেলিম, এরশাদ,মো: নুর, মুসলেহ উদ্দিন, মন্জুর, বাবু মিয়া, আব্দুল মজিদ, শাহাদাতুল করিম, সোনা মিয়া, হারুন, ইসমাইল, ইউনুচ, নুর কাদের ও দেলোয়ার। এফবি জায়েদ ফিশিং ট্রলারে থাকা জেলেরা হলেন মোক্তার মাঝি, মোহাম্মদ রুবেল, আবু হানিফ, আব্দুর রহিম, শফি আলম, মো: লেডু, সিরাজ, ছাদেক, আক্তার, রুহুল আমিন, আজিজুল হক মো: হামিদ, সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও করিম। এদের প্রত্যেকের বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে।

/এএআর/আপ- এপিএইচ/
আরও পড়ুন: 
বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি: দুর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃত এখনও নিশ্চিত নয়

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
দুই ভাইয়ের হাতাহাতিতে প্রাণ গেলো বড় ভাইয়ের
দুই ভাইয়ের হাতাহাতিতে প্রাণ গেলো বড় ভাইয়ের
বিখ্যাত চমচমের কারিগর শংকর সাহা মারা গেছেন
বিখ্যাত চমচমের কারিগর শংকর সাহা মারা গেছেন
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট