X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধান পেলেও সাঁওতালদের চাষ করা মাছের কী হবে?

তাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা
০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৭:৫৫আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৪৬

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের পাঁচ পুকুরের একটি যাতে মাছ চাষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাঁওতালরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ৪৫ দশমিক ৫০ একর জমিতে চাষ করা মোট ৫৫০ বস্তা আমন ধান সাঁওতালদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই খামারের পাঁচটি পুকুরে সাঁওতালদের চাষ করা মাছ এখনও তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। খামারের বসতভূমি থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এখন ওই মাছের কী হবে?’।

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির কোষাধ্যক্ষ রাফায়েল হাঁসদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শুকানো হচ্ছে। এসব ধান যেহেতু যৌথভাবে চাষ করা হয়েছে সেজন্য কমিটির সভায় আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধান তো পেলাম, কিন্তু খামারের পাঁচটি পুকুরে আমাদের চাষ করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছগুলোর কী হবে? চিনিকল কর্তৃপক্ষ তো ওই মাছ বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়া সরিষা, কলাই, শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল, যা চিনিকল কতৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?’

তবে এ প্রসঙ্গে রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল আউয়ালের দাবি, ‘সাঁওতাল জনগোষ্ঠী ওই পাঁচ পুকুরে কোনও মাছ চাষ করেনি। মিল কর্তৃপক্ষই পুকুরে মাছ চাষ করেছে। এছাড়া উচ্ছেদের পর খামারের কোনও জমিতে পাট, সরিষা, কলাই ও শাক-সবজিসহ অন্য কোনও ফসলের চিহ্ন ছিল না।’

তিনি আরও জানান, ‘সাঁওতালদের চাষ করা সম্পূর্ণ জমির ধান কাটা শেষ। ধানগুলো সাঁওতালদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই জমিতে পর্যায়ক্রমে ইক্ষু বীজ রোপণ করা হবে।’  

প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে গোবিন্দগঞ্জের ওই এলাকায় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়। এ কারণে চিনিকলের বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রায় দুই বছর আগে সাঁওতাল ও স্থানীয় বাঙালি জনগণের একাংশ জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা চলতি বছরের ১ জুলাই ওই ইক্ষু খামারে বসতি স্থাপন করে একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট এবং পাঁচটি পুকুরে মাছ চাষ করে। বাকি জমিতে ছিল মিলের ইক্ষু ক্ষেত।

গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের ওই খামারের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারিদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন চারজন। নয় পুলিশ সদস্য তীরবিদ্ধ হন। এছাড়া উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাঁওতালদের ওই জমির বসতি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সে সময় তাদের বসত-ঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পরে শত শত সাঁওতাল পরিবার। ওই পরিবারগুলোর কেউ কেউ খামারের পাশে সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গির্জার সামনের মাঠে কলাগাছের পাতা দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট কুঠুরি বানিয়ে, আবার কেউ কেউ ত্রাণে পাওয়া তাঁবু টানিয়ে কোনও রকমে ঠাঁই নিয়ে আছেন। অনেকে থাকছেন পরিত্যক্ত স্কুলঘরে খড় বিছিয়ে। ঘটনার দিনই গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন গৃহস্থালী দ্রব্যাদি ও তাদের চাষ করা প্রায় আটশ একর জমির মাস কালাই, সরিষা ও পাটের একাংশ লুট হয়। মিল কতৃপক্ষ বাকি সরিষা, মাস কলাই, শাক-সবজি ও অন্য ফসল ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে মিশিয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে, এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ১১ নভেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই জমিতে সাঁওতালদের চাষের ধান তাদের কাটতে দিতে অথবা চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ধান কেটে সাঁওতালদের বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।

সেই মোতাবেক চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন ওই ধান কেটে মাড়াইয়ের পর দুই মণ ওজনের ৫৫০ বস্তা ধান দুই দফায় সাঁওতালদের বুঝিয়ে দেয়। প্রথম দফায় গত ২৪ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয় ৩৯৭ বস্তা। দ্বিতীয় দফায় গত ৩ ডিসেম্বর দেওয়া হয় ১৫৩ বস্তা। কিছু জমির ধান না পাকায় মাঝে এই কয়েকদিন ধান কাটা বন্ধ ছিল। এতে মোট ধানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার একশ’ মণ।

৬ নভেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে তিনশ’ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ চারজন সাঁওতালকে গ্রেফতার করেছে। তারা জামিনে এখন মুক্ত আছেন।

৫৫০ বস্তা আমন ধান বুঝে পাওয়ার পর সাঁওতালরা তা শুকোচ্ছে

অপরদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদ ঘটনায় গত ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমু নামে এক আদিবাসী বাদী হয়ে ৬শ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা করেন। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।

এরপর গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ থোমাস হেমরম বাদী হয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫/৬শ’ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন আছে। 

/এসএনএইচ/এসএ/আপ-এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ