X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শত্রুমুক্ত হয় শেরপুর

শেরপুর প্রতিনিধি
০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৭:১০আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৭:২৬

শত্রুমুক্ত শেরপুরে বিজয়োল্লাস ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করেন। এদিন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে এক সম্বর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা দেন। এ সম্বর্ধনা সভাতেই মুক্ত শেরপুরে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩০-৪০টি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এসব যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৩৯ জন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ৪১ জনসহ মুক্তিকামী বহু মানুষ শহীদ হন।
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী ব্যাপক শেলিংয়ের মাধ্যমে শেরপুর শহরে প্রবেশ করে বিভিন্নস্থানে ঘাঁটি গড়ে তোলে। এসব ঘাঁটিতে রাজাকার, আলবদর আর দালালদের যোগসাজসে হানাদাররা চালাতে থাকে নরহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের নৃশংস ঘটনা। জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্নস্থানে চলে তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
এর মধ্যেই অল্প সময় প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকে শত্রু শিবিরে। শেরপুর মুক্ত হওয়ার আগে রাঙামাটি গ্রাম, সূর্যদী, নালিতাবাড়ী, ফরেস্ট ক্যাম্প, তন্তর, বারোমারী, নন্নী, ঝিনাইগাতী, নাচনমহুরী, নকশী, শ্রীবরদী, কর্ণঝোরা, কামালপুর, টিকারকান্দা, নারায়ণখোলা, বড়ইতার, নকলাসহ আরও অনেক জায়গায় পাক হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে শত্রুরা। ১১ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাই ঢাকায় প্রথম প্রবেশ করেন। এই সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল তাহের বেশ কয়েকবার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান। তাতে শত্রুদের পরাজিত করা না গেলে ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য হামলা করা হয় এই ঘাঁটিতে। ১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এ ঘাঁটির পতন হয়। মোট ২২০ জন পাক সেনা ও তাদের সহযোগীরা বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন।
কামালপুর মুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাক বাহিনীর সব ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে যায়। এর আগেই ৩ ডিসেম্বর শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী সীমান্ত ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা তাদের ঘাঁটিগুলোতে রাজাকার-আলবদরদের রেখে দ্রুত পালিয়ে যেতে থাকে জামালপুরের দিকে। ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী উপজেলা ও ৬ ডিসেম্বর শ্রীবরদী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
নালিতাবাড়ীতে টানা দু’দিন যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে নালিতাবাড়ী ও শেরপুরে প্রবেশ করেন। আর ৮ ডিসেম্বর প্রবেশ করেন নকলায়। ৫ ডিসেম্বর থেকে পাকসেনারা কামালপুর-বকশীগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা হয়ে শেরপুর শহর দিয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হন। ৬ ডিসেম্বর রাতে তারা ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখায় জেলার শহীদ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররমকে বীর বিক্রম এবং কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী ও ডা. মাহমুদুর রহমানকে বীর প্রতিক উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

আরও পড়ুন-




গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস আজ
এখনও অরক্ষিত কমলগঞ্জের ৫টি বধ্যভূমি

 

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!