X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজনে অভুক্ত থাকেন, তবু আত্মসম্মান খুইয়ে কিছু চান না মন্টু গোপাল

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০১

বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টু গোপাল

মন্টু গোপাল বাবু। ঝিনাইদহের বুকে সবার পরিচিত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এখনও মাইক হাতে নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখতে পারেন। দেখে কে বলবে, স্বাধীনতার সময় প্রতিরোধ ও সম্মুখযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া এ মুক্তিযোদ্ধার জীবন প্রদীপ জ্বলছে নিভুনিভু? আত্মসম্মান হারানোর ভয়ে না খেয়ে থাকলেও কাউকে তিনি বলেন না কিছুই। বুঝতে দেন না যে তার সংসার আর চলছে না। জমিজমা-বাড়িঘর, সহায় সম্বল কিছুই নেই তার। আশ্রয়হীন মানুষটি থাকেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার কলেজ পাড়া এলাকার এক ভাড়া বাড়িতে। দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতেই তাকে হিমসিম খেতে হয়। মুখে বলেন, তবু তার কোনও দুঃখ নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে পেরেছেন, এতেই আত্মতৃপ্তি। জানালেন, সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই তার। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন যে বীর, যুদ্ধের পর পরিচিত অনেকে সাগ্রহে সনদ নিলেও তিনি নেননি। তার মুক্তিযোদ্ধা আইডি নম্বর ০৪০৪০১০০৩১ ও মুক্তি বার্তা নম্বর (লাল বই) ০৪০৯০১০৩২৩।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য একাত্তরের বীর মন্টু গোপাল বাবু। কালীগঞ্জ উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের নগেন্দ্রনাথ ও মা যমুনা বালার সন্তান তিনি। দু’সন্তানের জনক। ছেলে কৌশিক কুমার নিলয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আর মেয়ে সুনামী সোমা কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের বিপণন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

মন্টু গোপাল জানান, তিনি যুদ্ধ করেছেন ৮ নং সেক্টরে। ভারতের বনগাঁ’র বয়রা থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ছিল তাদের যুদ্ধ করার জন্য নির্ধারিত এলাকা। এরিয়া। তিনি আরও জানান, ভারতের চাপাবাড়ীয়া টালিখোলা থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ঠিকভাবে বলতে  না পারলেও তিনি জানান, ক্যাপ্টেন মুখার্জী বাবুর তত্ত্বাবধানে ওস্তাদ আবুল হোসেন, মইনুদ্দীন মিয়া, ডাক্তার শুকুর আলীর কাছে তারা গেরিলা প্রশিক্ষণের কলাকৌশল ও অস্ত্র চালানোর দীক্ষা নেন। প্রশিক্ষণের মধ্যে যা যা ছিল- হঠাৎ শত্রুদের আক্রমণ করে পালিয়ে যাওয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেন আসতে না পারে সে জন্য সেতু উড়িয়ে দেওয়া, পাকিস্তানিদের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করা, শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য করে তাদের আশ্রয়স্থান চিহ্নিত করা, ভারতের মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অপারেশনে অংশ নেওয়া।

মুক্তিযোদ্ধা মন্টু গোপাল জানান, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিলের কথা। সেদিন কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়া নামক স্থানে পাঞ্জাবি সেনাদের সঙ্গে দুই ঘন্টাব্যাপী তাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা। যশোরের দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ ও ভারী অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন শত্রুদের হাতে মারা যান কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের  মুজিবর রহমানের ছেলে মহাসিন আলী ও ফয়লা গ্রামের মহর আলী। এরপর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালীর সম্মুখযুদ্ধে মারা যান কালীগঞ্জের বলিদাপাড়ার আনোয়ারুল ইকবাল ওরফে ফকির ধনী ছেলে মোস্তফা ও একই গ্রামের আলেকজেন্ডার। সে সময়কার স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে। মন বিমর্ষ হয়ে ওঠে।

জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, সনদ নেননি কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু গোপাল বলেন, দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে স্বাধীন করেছি। লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে আমার। সনদ দিয়ে কি করব?

পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে, পাকিস্থানের অখন্ডতা রক্ষার স্বার্থে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের পথ বেছে নিয়েছিল রাজাকার,আলবদর ও আল শামসরা। দীর্ঘদিন পর হলেও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে বর্তমান সরকার তাদের যে বিচার করেছে তাতে মুক্তিযোদ্ধা মন্টু গোপাল খুবই আনন্দিত। তিনি মনে করেন, বাংলার ইতিহাসকে কলঙ্কমুক্ত করতে কাজটি আরও অনেক আগেই করা উচিৎ ছিল। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা থাকতে পারে না। দেশব্যাপী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এর অংশ হিসেবে বিভাগীয় জেলাভিত্তিক কিছু কিছু রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এখনও অনেক রাজাকার, আলবদর  আলশামস সমাজের অনাচে কানাচে রয়ে গেছে। যাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ উত্থাপন করেননি কেউ। তবে আশার কথা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে রাজাকারদের যথার্থ তালিকাটি রয়ে গেছে।

যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এবং যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তার কতোখানি বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু গোপাল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় আমরা এবার আলোর মুখ দেখছি। কোনও বিচার না হওয়ায় একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরাই  আজ এ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখনও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ে পাকিস্তানিদের দোসররা অনেক প্রভাবশালীর ছাতার নীচে থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’

আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শোষণমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, প্রতিহিংসামুক্ত একটি  সুন্দর সমাজ গঠন, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। এই সরকার আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করছে, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। মাসে ১০ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিচ্ছে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্টু গোপাল জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য এ সরকারের কাছে আরও সুযোগ সুবিধার  প্রত্যাশা করেন বলে জানান।’

/এইচকে/

 

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন