X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েও স্বীকৃতি মেলেনি শমসের আলীর

নাটোর প্রতিনিধি
৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৯:৫০আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৪৫

মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস।  পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে ট্রেনিং এর জন্য রাজশাহী যান নাটোরের শমসের আলী ও তার ভাই আক্তার হোসেন। রাজশাহী রেডিও সেন্টারের পাশের মাঠেই ট্রেনিং চলছিল। এরইমধ্যে মার্চে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। একদিন তারা দুই ভাই চাকরিস্থল থেকে রাজশাহী পদ্মার পাড়ে পৌঁছালে পাকিস্তান বাহিনী সেখানে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। শমসের পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু মুক্তিপাগল যুবকদের সঙ্গে পদ্মা পাড় হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।  সেখান থেকে পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। তবে ৪৫ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে শমসের আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যার আপন ভাই  যুবক অবস্থায় শহীদ হয়েছেন, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন সেই মুক্তিযোদ্ধার বৃদ্ধ বয়সে এখন দিন কাটছে খড়ি বিক্রি আর ছোট দোকান চালিয়ে।’

মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলীর (৭২) বসবাস নাটোর শহরের চকরামপুর এলাকায়। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম পেশায় অটোরিকশা চালক। আর ছোট ছেলে সিরাজ যানবাহনের বডিমিস্ত্রী। চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। দুই ছেলে বিয়ে করে পৃথক সংসার গড়েছে। আর মেয়েদের বিয়ের সময় নিজের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় ওই এলাকায় খাস জমির ওপর বসবাস করছেন শমসের আলী। ছেলে-মেয়েরা খোঁজ না নেওয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি একটি ছোট দোকান আর খড়ি বিক্রির ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। প্রতিদিন কুঠার হাতে গাছের গুঁড়ি থেকে খড়ি তৈরি করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা শমসের আলী জানান, ভারতের শিকারপুরে তার সঙ্গে সাক্ষাত হয় মুক্তিযোদ্ধা এজের আলীর। এজের আলী তার দলে শমসেরকে অন্তর্ভুক্ত করেন।

শমসের আলীর জীবন্ত সাক্ষী-সহযোদ্ধা এজের আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে তিনি নাটোরের দত্তপাড়া এলাকার ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা।

বাংলা ট্রিবিউনকে এজের আলী বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমি ও আমার চাচাত ভাইসহ ১৪ জন ভারতের শিকারপুর গিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হই। এতে সহায়তা করেন কুষ্টিয়ার বোয়ালিয়া গ্রামের মজিবরের ছেলে চেয়ারম্যান আ. লতিফ । ১০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আমরা কড়ইগাছী চলে যাই। সেখানে আবারও টাঙ্গাইল জেলার আ. সাত্তার হাবিলদার এক  মাস প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে কল্যাণ ট্রাস্ট ( রেস ময়দানে) ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষক ছিলেন মেজর কর্নেল এমএজি ওসমানী। প্রশিক্ষণ শেষে পুনরায় শিকারপুরে ফিরে আসলে আমাদের অস্ত্র দেওয়া হয়। আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করব এমন সময় শমসের আলীর সঙ্গে পরিচয় হয়। শমসের আলী পুলিশ সদস্য হওয়ায় কোনও ট্রেনিং ছাড়াই কমান্ডার মহির উদ্দিন ও নূরুল হুদাসহ অন্যান্যদের সম্মতিতে তাকে আমাদের সঙ্গে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধে নিয়ে যাই। আমরা পরাগপুর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। ব্যাঙ্গারীর মাঠে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আমাদের প্রথম যুদ্ধ হয়। পরে আমরা মেহেরপুরের দিকে এগোতে থাকি। মুজিবনগর মুক্ত করতে আমাদের সাতদিন সময় লেগে যায়। সর্বশেষ আমাদের কুষ্টিয়ার ছাইবাড়ী বিলের পশ্চিমে পাক-বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে এজের আলী দাবী করেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি শমসের আলীকে আমার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাই। এক-দেড় মাস পরে তাকে নাটোরে পাঠাই। এরপর ১৯৭৩ সালে বিবাহ সূত্রে আমি নাটোরে স্থায়ী বসতি স্থাপন করি।

শমসের আলী বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে দেখি পাক বাহিনী আমাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার মা শরজান বেগম হালসা-লক্ষীপুর পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কিছুদিন পর খেজুর গাছ থেকে পড়ে আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ অন্যান্য বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে ১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর থেকে পরিচালিত ইতিহাস ভিত্তিক প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ শিরোনামে প্রমান্য গ্রন্থ রচনার জন্য তথ্য সংগ্রহে পুলিশ সদর দফতর থেকে আমাকে চিঠি দিয়েছিল। আমি উত্তরও দিয়েছিলাম। কিছুদিন পর ঢাকায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ সদর দফতরের অফিস ফার্মগেট থেকে পল্টনে নেওয়া হয়েছে। ঢাকার পথঘাট ঠিকমত চেনা না থাকায় আর পল্টন অফিসে যাওয়া হয়নি।’

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো চিঠি
তিনি জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে তিনি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বা সম্মানি পান না।

মুক্তিযোদ্ধা এজের আলী বলেন, ‘শমসের আলী আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আমরা এখন মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা সনদ ও ভাতা পাচ্ছি, কিন্তু শমসের পাচ্ছেন না।’ তিনি অতিসত্তর শমসের আলীকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানান।

/বিটি/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’