X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবি সদস্যদের হামলার প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে শ্রীমঙ্গলে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
০৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৪আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৪

বিজিবি সদস্যদের হামলার প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে শ্রীমঙ্গলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ওপর বিজিবি সদস্যদের হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় শহরে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) ভোর থেকে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

শ্রীমঙ্গলের মালিক শ্রমিক সংগঠন ও ব্যবসায়ী সমিতি বৃহস্পতিবার রাতে শহরে মাইকিং করে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এক পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে বিজিবি কর্মকর্তার গাড়ি ওভারটেকিং নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনার সূত্রপাত। বাকবিতণ্ডার সূত্র ধরে রাতে বিজিবি ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে ৬ জন আহত হন। গুলিবিদ্ধরা হলেন- ব্যবসায়ী পবিত্র পাল, গাড়িচালক শাহ আলম, ব্যবসায়ী সুকুমার দাশ, ব্যবসায়ী ইকবাল মিয়া। অন্য দুইজনের নাম জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধরা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে শুক্রবার ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সভা চলাকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ব্যবসায়ীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিজিবি সদস্যদের হামলার প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে শ্রীমঙ্গলে

এদিকে রাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল হকসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীমঙ্গল কলেজ সড়কের মল্লিকা গিফট সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এনাম হোসেন চৌধুরী মামুন অভিযোগ করে বলেন, ‘পোশাকপরা অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ জন বিজিবি সদস্য অর্তকিত হামলা চালিয়ে আমাদের দোকান ভেঙে গেছে। আমাদের দোকান আক্রান্ত হয়েছে। লুটপাট হয়েছে। আমাদের গুলি করা হয়েছে। কী অপরাধ ছিল আমাদের প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। আমরা এর বিচার চাচ্ছি। প্রশাসনের ভাইদের বলবো, যারা আমাদের আঘাত করেছে তাদের চিহ্নিত করুন।’

শ্রীমঙ্গলে ৪৬ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার মেজর মাহমুদ বলেন, ‘এরিয়া থেকে শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের দিকে আমাদের ৫৫ বিজিবির একটা জিপ গাড়ি আসছিল । শায়েস্তাগঞ্জ-মিরপুরের কাছাকাছি আসার পর একটি সিভিল হাইয়েস মাইক্রোবাস পেট্রলপাম্প থেকে হঠাৎ করে আমাদের জিপ গাড়ির সামনে এসে মুখোমূখি অবস্থায় এক্সিডেন্টের পর্যায়ে চলে যায়। তখন আমাদের লোকেরা ওই মাইক্রোবাসের ড্রাইভারের লাইসেন্স আছে কি না জিজ্ঞেস করে। তারা জানতে পারে তার কোন লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স ছাড়া রাস্তার ওপর গাড়ি চালাচ্ছিল। ওই ড্রাইভারকে তারা ওখান থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওই ড্রাইভার বিজিবির গাড়ির আগে আগে এসে শ্রীমঙ্গল শহরের পানসি রেস্টুরেন্টের সামনে লাইটেস স্ট্যান্ড থেকে বেশ কিছু ড্রাইভারকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ’

বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের গাড়িটাকে দেখেই ওরা ৩/৪টি গাড়ি এনে সামনে দাঁড় করিয়ে আটকে রেখে আমাদের লোকজনকে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে পিটিয়ে সেক্টর হেডকোয়ার্টারের সিপাহী আমজাদকে মাথা ফাটিয়ে দেয়। সেখান থেকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। ওখানে বাকি বিজিবি সদস্যদেরও ড্রাইভাররা বেধরক পিটিয়েছে এবং স্ট্রান্ডের ড্রাইভাররা একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করেছে আমাদের গাড়িতে। ভাঙচুর করেছে ইউএনও, পুলিশের গাড়িতে। দোকানপাটে লাঠি সোটা নিয়ে আক্রমণ করেছে। রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়েছে। আমরা তাদের কাছে এধরনের আক্রমণ আশা করিনি।’

ঘটনার সময় সংঘর্ষে সাংবাদিকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও গুলি ছোড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমি এখন বলতে পারবো না। এসব বিষয়ে কমপ্লিট ইনফরমেশন আমি দিতে পারবো না। চৌমুহনা পর্যন্ত বিজিবি যায়নি। পানসি পর্যন্ত বিজিবি ছিল। পরে মিডিয়াকে আমরা বিস্তারিত জানাবো।’

শ্রীমঙ্গল লাইটেস ও কার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়না মিয়া বিজিবির অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, ‘বিজিবির একটি জিপ গাড়ি ওভারটেক করা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিজিবির সদস্যরা আমাদের ড্রাইভার শাহ আলমকে মারধর করে গুলিবিদ্ধ করেছে। তারা শতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। দোকান পাটের ব্যবসায়ী ,নিরীহ পথচারী ও টুরিস্ট, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান  এবং মানুষদের ওপর লাঠিচার্জ ও অর্তকিত হামলা চালায়।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইউএনও ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)। এ কমিটিকে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- 

‘আমাকে পুলিশ ধরেছিল, তবে নির্যাতনের ওই ছবি আমার না’ (ভিডিও)
সুন্দরগঞ্জের সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডেই জামায়াত জড়িত!

/এফএস/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ