X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় মায়ের সঙ্গে ইটভাটায় সহস্রাধিক শিক্ষাবঞ্চিত শিশু

খুলনা প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৫আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৫

নাসরিন বেগম, বয়স ২০। কাজ করছেন খুলনার আঠারোবেকি নদীর চরের খান ব্রিকসে। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে ৩ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এখানে কাজ করছেন। তার ৩ সন্তান হলো- দ্বীন ইসলাম (৯), আফরিন শারমিন (৪) ও নূর ইসলাম (১৩ মাস)। এর মধ্যে দ্বীন ইসলামের এখন স্কুলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে ইটভাটায় অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করেই সময় পার করছে। খুলনায় মায়ের সঙ্গে ইটভাটায় সহস্রাধিক শিক্ষাবঞ্চিত শিশু

দ্বীন ইসলামের মত সহস্রাধিক শিশুদের ইটভাটায় এভাবে সময় পার হচ্ছে। তারা বা তাদের অভিভাবক কেউ তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা ভাবছে না। অভিভাবকরা সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করার চেয়ে জীবন জীবিকাকে প্রধান্য দিচ্ছেন।

নাসরিন বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি বাগেরহাট সদরের ডেমা এলাকায় থাকেন। স্বামী রাহুল গাজী ছিলেন রাজমিস্ত্রির জোগালে। তিন বছর আগে ৩ তলা ভবনের ছাদে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে কোমড়ে আঘাত পায়। এরপর থেকে তার স্বামী রাহুল আর কাজ করতে পারে না। বাধ্য হয়ে সংসারের প্রয়োজনে ইটভাটায় ২ বছর ধরে কাজ করছি। এখানে সন্তানদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।

জানা গেছে, রূপসার আঠারোবেকি নদীর চরে প্রায় ৬০টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটাতেই পরিবারের সঙ্গে ২৫ থেকে ৩০টি শিশু রয়েছে। যাদের দুই তৃতীয়াংশের বয়স ৫ বছরের ওপর। প্রায় প্রতিটি ইটভাটাতে পরিবারসহ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কোনও ইটভাটাতে শিশুদের জন্য শিক্ষার হাতে খড়ির কোনও ব্যবস্থা নেই।

বাগেরহাটের মংলা উপজেলার কচুবুনিয়া এলাকা থেকে ৫ বছরের শিশু আব্দুল্লাহসহ কাজ করতে খান ব্রিকসে এসেছেন আসমা বেগম (১৮)। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জীবন জীবিকার টানে তিনি এখানে কাজ করতে এসেছেন। ছেলেকে স্কুলে দেওযার সময় হলেও প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এ নিয়ে তার ভাবার সময় নেই। এখানে তার ছেলের মত আরও অনেক ছেলে মেয়ে রয়েছে। ভাটা মালিক শিক্ষক রেখে এদেরকে হাতেখড়ির ব্যবস্থা করলেও শিশুরা অক্ষর সম্পর্কে ধারণা পেত।

তিনি আরও জানান, ভাটার কাজ শেষ হতে এপ্রিল মাস হয়ে যায়। তখন স্কুলে ভর্তি নেয় না। আর অক্ষর জ্ঞান না থাকলে তো স্কুলে ভর্তি নেবে না।

শরিফুল (১১) ও তারিকুল (৭) আপন দুই ভাই। মা রেক্সেনা বেগমের সঙ্গে খান ব্রিকসে অবস্থান করছে। বাগেরহাট সদরের ডেমা থেকে এসেছেন। রেক্সেনা বেগমের স্বামী হাফিজুর রহমানও এই ইটভাটায় কাজ করছেন।

খুলনার পাইকগাছার গড়ই খালী এলাকা থেকে জাহিদসহ (৮) ২ শিশু নিয়ে পরিবারের মোট ৯ সদস্য নিয়ে খান ব্রিকসে কাজ করতে এসেছেন মো. আবু সাঈদ গাজী।

তিনি জানান, কার্তিক মাসের শুরুতে তারা এ ভাটায় এসেছেন। ফিরবেন চৈত্র মাসের শেষে। এলাকায় জমি নেই। জঙ্গলেও যাওয়া বন্ধ। নদ-নদী, খাল বিলেও মাছ পাওয়া যায় না। বিকল্প কোনও কাজ না পাওয়ায় কাজের জন্য তাকে এ ইটাভাটায় অবস্থান করতে হচ্ছে। ৯ জনের পরিবারের ৪ জন এ ভাটায় কাজ করেন। সপ্তাহে ৮’শ টাকা হিসেবে ৪ জনের আয় ৩ হাজার ২০০ টাকা। যা দিয়ে কোনওমতে তাদের নয়জনের চলে যায়।

খান ব্রিকসের মালিক ও রূপসা আঠারোবেকি ও চরেরহাট ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি কালাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৬০টি ইটভাটায় পরিবারের সঙ্গে কিছু শিশু থাকলেও তারা ইটভাটায় কাজ করে না। শিশুদের থাকার জন্য একটু ভালো ব্যবস্থা থাকার কারণে অনেকে পরিবারসহ ভাটাগুলোতে কাজ করতে আসে। অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ চলার সময় শিশুসহ আসা পরিবারের সদস্যরা যাওয়া আসার মধ্যে থাকে। ফলে এখানে আসা শিশুদের নিয়ে আলাদাভাবে কিছু ভাবার সুযোগ থাকে না।

/আরএইচ/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’