X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

নূর হোসেনের সহযোগীরা এখনও সক্রিয়!

তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৮আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৩৯

 

নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীরা এখনও সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে তার কয়েকজন সহযোগী এবার নির্বাচিতও হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সহযোগীদের কেউ কেউ দাপটের সঙ্গে এলাকায় অবস্থান এবং চাঁদাবাজিসহ অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে।

সাত খুনের  আগে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিসহ, মাদক ব্যবসা, জুয়া ও  অশ্লীল নৃত্য পরিচালনা করতো নূর হোসেন। এই অবৈধ উপার্জন থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন সংস্থাকে উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হতো। সাত খুন মামলার আসামিদের জবানবন্দি ও চার্জশিটে উঠে এসেছে এসব তথ্য। নূর হোসেনের যেসব অনুসারী এই সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো,তারা পুনরায় নিজ নিজ এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে ।

আগামী ১৬ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে আলোচিত সাত খুন মামলার রায়। এ মামলায় নূর হোসেনসহ ২৩ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১২জন পলাতক। গ্রেফতার ২৩ আসামির মধ্যে নূর হোসেনের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা হলো- নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালনাকারী রহম আলী ও মিজানুর রহমান।

সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হলেও চার্জশিটভুক্ত না হওয়ায় নূর হোসেনের যে ১০ সহযোগী ছাড়া পায়, তারা হলো- বডিগার্ড মহিবুল্লাহ, তানভীর, ইয়াসিন, আলমগীর, গাড়িচালক সোনা মিয়া, জুয়েল আহম্মেদ, মিজান, আবদুর রহিম, আরিফুজ্জামান ও  রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া এজাহারভুক্ত কিন্তু চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরও পাঁচ জন হলো- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, ইকবাল, হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও আনোয়ার।

কাউন্সিলর ও জেলা পরিষদের মেম্বার পদে নূর হোসেনের সহযোগীরা

নূর হোসেনের শ্যালক নূরে আলম খান পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী। গত বছর রাজধানীর মহাখালীতে নূর হোসেনের (লাইসেন্স বাতিলকৃত) পিস্তলসহ ধরা পড়ার পরও  চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে পালিয়ে যায়। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে সে ৯ নম্বর ওয়ার্ড  (জামপুর ইউনিয়ন, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন, কাঁচপুর ইউনিয়ন ও সাদিপুর ইউনিয়ন) থেকে  ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে।

নাসিক নির্বাচনে দুই নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নিহত সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। তিনি সাত খুন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামি ইকবাল হোসেনের কাছে হেরেছেন। ইকবাল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। ২০১৪ সালে নজরুলের মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে কাউন্সিলর হয়েছিলেন বিউটি। ওই সময় নূর হোসেনের অনেক সহযোগী ছিল পলাতক। তবে এবার তারা এলাকায় বীরদর্পে  কাজ করেছে ইকবালের পক্ষে এবং বিউটির বিরুদ্ধে। সাত খুন মামলার এজাহারে ইকবাল ছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিনকে আসামি করেছিলেন বিউটি।

তিন নম্বর ওয়ার্ডে এবারও জিতেছে নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল। সাত খুনের পর সে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এলাকায় ফিরে এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে সে জামিনে মুক্তি পায়।

চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নূর হোসেনের ক্যাশিয়ার আরিফুল হক হাসান জিতেছে। গত বছরের ২৮ এপ্রিল মদসহ আরিফুলকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছিল।

ছয় নম্বর ওয়ার্ডে থানা যুবলীগের আহ্বায়ক  মতিউর রহমান জিতেছে। সাত খুনের পর সেও অনেক দিন পলাতক ছিল।  নূর হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

সাত খুনের ঘটনায় নজরুলের সঙ্গে নিহত স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান খান রিপন সাত নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করে হেরেছেন। এখানে জিতেছে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ আলী হোসেন আলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নূর হোসেনের ভাই নুরুজ্জামান জজ এলাকায় ফিরেই কাঁচপুর সেতুর ঢালে ‘মেসার্স জেরিন ট্রেডার্স’ নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বালুর ব্যবসা শুরু করেছে। শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালটির নিয়ন্ত্রণ ছিল মনিরের ভাই ছোট নজরুলের হাতে। কাউন্সিলর আরিফুল ও কাউন্সিলর বাদল এখন ট্রাক স্ট্যান্ডটি নিয়ন্ত্রণ করছে। নূর হোসেনের ভাতিজা আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু এলাকায় ফিরে লেগুনা ও টেম্পুস্ট্যান্ড দখলে নিয়েছে। সেখানে ৩০০ লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। নূর হোসেনের ভগ্নিপতি রতন মোল্লা পরিবহন সেক্টরের দখল নিয়েছে।

সাত খুন মামলার বাদী ও নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি অভিযোগ করেন, ‘মামলার কারণে এবার হাজী ইয়াছিন তার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সে কারণেই নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন।’ বিউটি বলেন, ‘ এখন আমাদের উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফত উল্লাহ জানান, ‘কেউ কাউকে হুমকি দিচ্ছে, কিংবা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন কোনও অভিযোগ কেউ করেনি। করলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এপিএইচ/আপ-এফএস/ 

আরও পড়ুন- 


যেভাবে তামিমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাজীব গান্ধীর

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়