সুন্দরবনে পর্যটকদের কাছ থেকে রশিদ ছাড়াই অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ফলে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পূর্ব বন বিভাগর চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকার করমজলে এ চিত্র বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেখানে টিকিটের নির্ধারিত কাউন্টার থাকলেও তা ব্যবহার করা হয় না।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পূর্ব) মো. সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রশিদ ছাড়া পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া গুরুতর অপরাধ। তবে আমাদের কাছে এখনও কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, করমজল ক্যাম্পে ঘুরতে আসা দেশি পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২৩ টাকা এবং ভিডিও ক্যামেরার নেওয়ার জন্য ২৩০ টাকা জমা দিতে হয়।
গত ১২ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল তিনটার দিকে করমজল ক্যাম্পের টিকিট কাউন্টারের প্রবেশপথে ৪/৫ জন দর্শনার্থী নিরাপত্তা প্রহরী ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিছুক্ষণ পর মংলা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুটি লঞ্চ ঘাটে আসতেই এগিয়ে যায় আবু হানিফ, তারেকুল ও রাসেল নামের দালাল চক্র। পরে চুক্তি অনুযায়ী লঞ্চ থেকে দুই জন নেমে দালালদের হাতে টাকা তুলে দেন। দালালরা টাকা পকেটে রাখলেও তাদের কোনও রশিদ দেননি। এরপর টিকিট ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করানো হলেও নিরাপত্তা প্রহরীরা বাঁধা দেননি।
একই দিন কাউন্টারের পূর্বদিকে শিক্ষার্থীদের অপর একটি লঞ্চ আসলে বনবিভাগের কর্মচারি, নৈশ প্রহরী এবং আবু হানিফ নামের এক দালাল ওই দলের শিক্ষকের কাছ থেকে প্রবশেমূল্য গ্রহণ করলেও রশিদ দেননি।
করমজলে ঘুরতে আসা খুলনার ফুলবাড়িগেট এলাকার খানজাহান আলী বিএম কলেজের প্রভাষক আবু ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৭০ জনের জন্য ক্যাম্পে প্রবেশ মূল্যের বিল হয় তিন হাজার ৯১০ টাকা। কিন্তু দুই হাজার ৫শ’ টাকা পরিশোধ করায় তারা আমাদের কোনও রশিদ দেন নি।’
করমজল ক্যাম্প ইনচার্চ মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সরকারি কাজে আমি ক্যাম্পের বাইরে থাকায় কয়েকজন অবৈধ সুযোগ নিয়ে থাকতে পারেন। তবে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, বনের মধ্যে কাঠের তৈরি সাকো সংস্কার না করায় নড়বড়ে এবং দুর্বল হয়ে গেছে। এমনকি কয়েকটি জায়গায় সাকোর কাঠ খুলে যাওয়ায় বাঁশ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। ভাঙ্গা সাকো দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিন অনেকেই আহত হন। আর যেখানে মেরামত করা সম্ভব হয়নি সেখানে গাছপালা ফেলে সাকোটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
মাহমুদুল হাসান নামে এক পর্যটক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বন্ধুদের সঙ্গে একবার এসেছিলাম। কিন্তু এখন করমজল ক্যাম্পের ভেতরের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক শোচনীয়।’
খানজাহান আলী বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ বিশ্বাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কাঠের সাকোগুলো ভাঙা থাকলেও মেরামত করা হয় না।’
সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পূর্ব) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টিতে সাকোগুলো নষ্ট হয়। প্রতি বছরই এগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি বরাদ্ধ না থাকায় সংস্কার করা সম্ভব হয় না।’
/এসএনএইচ/