X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ লাশ নিয়ে যাওয়া সেই ৩ ট্রলারচালক কোথায়?

উদিসা ইসলাম ও তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:০৯আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫৩

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার লাশগুলো ট্রলারে করে শীতলক্ষ্যার মোহনায় ফেলতে যাওয়া তিন ট্রলার চালক মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন। তারা এখনও চাকরিতে বহাল আছেন।

সাতখুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সেই রাতে ট্রলারে লাশ ওঠানোর সময়ে আঁতকে উঠেছিলেন তারা। ট্রলার চালকদের সেদিন টহল ডিউটির কথা বলে আনা হয়েছিল। হঠাৎ  ট্রলারে সাতটি লাশ ওঠাতে দেখে প্রতিবাদ করলে র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন (ইতোমধ্যে মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ও  চাকরিচ্যুত) তাদের ধমক দিয়ে ‘যা বলছি শোনার’ পরামর্শ দেন।পরবর্তীতে এদের সাক্ষীতেই বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। গত ৬ জুন আদালতে তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

ওই তিনজন ট্রলারচালক হলেন ঘটনার সময়ে কর্মরত র‌্যাব-১১ এর লিডিং সী ম্যান ডিএডি আব্দুস সামাদ, ট্রলারচালক ল্যান্স নায়েক আজম আলী ও ট্রলারচালক নায়েক আব্দুর রাজ্জাক।এ তিনজনই মূলত লাশগুলো ট্রলারে ওঠানো থেকে নদীতে ফেলা দেওয়া পর্যন্ত ছিলেন।

তাদের মধ্যে ল্যান্স নায়েক মো. আজম আলী বর্তমানে  খাগড়াছড়ি ৩১ আনসার ব্যাটালিয়নে, ট্রলারচালক নায়েক আবদুর রাজ্জাক এখন ঢাকাতে পুলিশের এপিবিএন-এ এবং ডিএডি আব্দুস সামাদ বর্তমানে রংপুরে র‌্যাব-১৩ এ কর্মরত আছেন। চার্জশিটে যে ১২৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল তাদের মধ্যে এ তিনজনও ছিলেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল অপরহণের পর ওই রাতেই সাত জনকে হত্যা করে লাশ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যার মোহনায়। আর লাশগুলো ট্রলারে ওঠানো  হয় কাঁচপুর সেতুর নিচে থেকে।

প্যাকেটে লাশ আছে সেটি কখন দেখতে পেলেন প্রশ্নে তারা জবানবন্দিতে বলেন, ল্যান্ডিং স্টেশনে গিয়ে কিছুলোক ও মাইক্রোবাস দেখতে পাই। মেজর আরিফ স্যারের সঙ্গে সাদা পোশাকে থাকা লোকজন প্লাস্টিকের ১২-১৪টি ভারী বস্তা ট্রলারে তোলে। এরপর তারা একে একে সাতটি লাশ ট্রলারে তোলে। লাশ দেখে ট্রলারে থাকা আমরা তিন জনই প্রতিবাদ করি, স্যার আমাদের টহল ডিউটি করতে আনছেন,লাশ কেন? এটাতো ঠিক না। কিন্তু আরিফ স্যার আমাদের তিন জনকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলেন, ‘অ্যাই বেটা চুপ কর, যা বলি তাই কর।’ পরে তিনি ট্রলারটি মুন্সীগঞ্জের মোহনায় নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন ।

এরপরের ঘটনা সম্পর্কে তারা আরও বলেন, ধমকের পর তারা ট্রলার নিয়ে রওনা দেন এবং রাত আড়াইটার দিকে মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় পৌঁছান। সেখানে প্রতিটি লাশের সঙ্গে দুটি করে ইটের বস্তা বাঁধা হয়। এরপর র‌্যাবের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় মেজর আরিফ চাকু দিয়ে নিহতদের পেট ফুটো করে মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় লাশগুলো ফেলে দেন।

ট্রলারচালকরা সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন,ফিরে আসার সময় এসআই পুর্নেন্দু বালা নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড ভেঙে নদীতে ফেলে দেন। রাত ৩ টা ৩০ মিনিটের দিকে ট্রলারটি নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত থাকা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ সকল র‌্যাব সদস্যদের নির্দেশ দেন ঘটনাটি যাতে কেউ জানতে না পারে ।

২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার চার্জশিট দাখিল করেন ওই সময়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল। চার্জশিটে তিনি ট্রলারে লাশ ওঠানো ও নদীতে ফেলে দেওয়া প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল রাতে শহরের কালির বাজারে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশনাল কোম্পানির ইনচার্জ লে. কমান্ডার (বরখাস্ত) এম এম রানার নির্দেশে র‌্যাব সদস্য ট্রলারচালক এল এস সামাদ, আজম ও রাজ্জাক  নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে কাঁচপুর বিআইডব্লিউটিএ’র ল্যান্ডিং ঘাটে ট্রলার নিয়ে যান।

কাকে কী দায়িত্ব পালন করতে দেখেছিলেন জানাতে গিয়ে সাক্ষীরা বলেন, এজাহারনামীয় এক নম্বর আসামি নূর হোসেনের পাঠানো আসামি শাহজাহান, রহম আলী, আলী মোহাম্মদ, মর্তুজা জামান চার্চিল, বাসার, জামাল, সেলিম, রিয়াজ, মিজানদের দিয়ে কাঁচপুর বিআইডব্লিউটিএ এর ল্যান্ডিং ঘাটের আশেপাশে যাতে কোনও লোক যেতে না পারে, এজন্য পাহারা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। র‌্যাব সদস্যদের ব্যবহৃত দুটি মাইক্রোবাসে থাকা ভিকটিম নজরুলসহ সাত জনের মুখে পলিথিন দিয়ে ও গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামি মেজর আরিফ, এসআই পুর্নেন্দু বালা, হীরা মিয়া, তৈয়ব, আল আমিন, মহিউদ্দিন, আলীম, শিহাব ও র‌্যাবের অন্য সদস্যরা লাশগুলো ট্রলারে ওঠান। এরপর মেজর আরিফ, হীরা, বেলাল, তৈয়ব, পুর্নেন্দু বালা, শিহাব, আল আমিন, এবি আরিফ, তাজুল, আলীম, মহিউদ্দিন মুন্সি, এনামুল ট্রলারে ওঠেন।

ইউআই / এপিএইচ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা