X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২ সন্তান ও নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন!

আশরাফুল ইসলাম, মেহেরপুর
২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০৭আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:১৩

নাতি ও দুই ছেলেসহ তোফাজ্জেল দম্পতি ‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ নামের এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত আবদুস সবুর (২৪), রায়হান (১৩) ও সৌরভ (৯)। তাদের চিকিৎসায় স্থাবর, অস্থাবর প্রায় সব সম্পদই নিঃশেষ হয়ে গেছে। পরিবারের প্রধান জানতে পেরেছেন, এ রোগের কোনও ওষুধ নেই, নেই কোনও চিকিৎসা। পর্যায়ক্রমে পঙ্গুত্ব বরণ আর সবশেষে মৃত্যুই এই রোগের পরিণতি।
দুই সন্তান সবুর ও রায়হান এবং নাতি সৌরভের এই কষ্ট আর দুর্দশা মেনে নিতে পারছেন না মেহেরপুরের তোফাজ্জেল হোসেন। এ কারণে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন, রাষ্ট্র যেন এই তিন জনের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্যথায় তাদের মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) তিনি এই আবেদনপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন।
তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়ি মেহেরপুর শহরের বেড়পাড়ায়। তার বড় সন্তান আবদুস সবুর যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র, তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম সবুরের রোগটি ‘ডুশিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ হিসেবে শনাক্ত করেন। ভারতের কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গৌরাঙ্গ মণ্ডল ও তপন কুমার বিশ্বাস, ভারতের কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ ড.স্বপন মুখার্জিও সবুরের মল-মূত্র, রক্ত, কফ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তিনি এই দুরারোগ্য রোগেই আক্রান্ত।
শহরের বড় বাজারের পৌর মার্কেটে তোফাজ্জেলের একটি পান, বিড়ি ও মৌসুমি ফলের দোকান ছিল। ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে সেটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। পরে একে একে তার ছোট ছেলে রায়হান এবং নাতি (মেয়ের ছেলে) সৌরভও একই রোগে আক্রান্ত হয়। সবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চিত সব অর্থ ও সম্পদই বিক্রি করে দেন তোফাজ্জেল। কিন্তু তিন জনের কেউই সুস্থ হননি। সবুর এখন শয্যাগত। সৌরভ এখনও চলাফেরা করতে পারে, কিন্তু রায়হানও চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তোফাজ্জেলের স্ত্রী শিরিনা বেগম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
সব মিলিয়ে তোফাজ্জেল হোসেন আর সামলে উঠতে পারছেন না পরিস্থিতি। আর সে কারণেই বাধ্য হয়েছেন জেলা প্রশাসক বরাবরে নাতিসহ সন্তানদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে।
দুই সন্তান ও নাতির চিকিৎসার জন্য তোফাজ্জেল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসেও যোগাযোগ করেছেন। ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাসে যোগাযোগ করলে তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, এ রোগের কোনও ওষুধ নেই। শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ রোগে আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন অঙ্গের মাংসপেশী ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে যায়। এক সময় রোগী চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে। এবং এ রোগের পরিণতি মৃত্যু।
মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে ডিসির কাছে আবেদন সর্বশেষ ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির চিকিৎসকরা তোফাজ্জেল হোসেনকে জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা সম্ভব এ রোগ। কিন্তু এখন তোফাজ্জেলের আর কোনও সহায়-সম্পদ নেই, যা দিয়ে তিনি তিন রোগীকে শেষ আশা হিসেবে ভারতে চিকিৎসার জন্য নিতে পারেন।এতদিন ধরে তিন জনের চিকিৎসায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন ৩০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। এটাও তার প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই সামান্য।
তোফাজ্জেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসা করাতে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণও করতে হয়েছে। সেগুলোই শোধ করতে পারিনি। এখন শেষ আশা ভারতের ওই হাসপাতাল। কিন্তু তার জন্য টাকা পাবো কোথায়? তাই ছেলে-নাতির মৃত্যু চাওয়া ছাড়া আর কী করার আছে! চোখের সামনে ওদের এই যন্ত্রণা কেমন করে সহ্য করব!’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডেপুটি সেক্রেটারি) খায়রুল হাসান তোফাজ্জেলের আবেদনের খবর নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ডিডিএলজি খায়রুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবেদনটি পড়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমরা বিভিন্নভাবে তাকে সাহায্য করতে চাই। আমরাও চাই, তার দুই সন্তান ও নাতি সুস্থ হয়ে উঠুক।’

আরও পড়ুন-

জিপটি দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড়

বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার আসে না: কাদের

দিনাজপুরে ওষুধ ব্যবসায়ীদের টানা ধর্মঘটে ভোগান্তি

/টিআর/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!