X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০
আদালতের পর্যবেক্ষণ

‘নূর হোসেন ও নজরুলের দ্বন্দ্বেই সাত খুন’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৪১আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১৫

নূর হোসেন ও নজরুল ইসলাম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর নূর হোসেন ও নজরুল ইসলামের মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্বের জেরেই সাত খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এখানে ‘সুশৃঙ্খল’ বাহিনী র‌্যাবের উচ্চভিলাষী কয়েকজন জনতার সঙ্গে মিশে ঘৃণ্যভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। যেখানে শুধু নজরুল একক টার্গেট থাকলেও প্রাণ হারাতে হয়েছে নিরীহ ছয় জনকে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকর্তাদের নিয়োগে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার পর্যালোচনায় বিচারক এসব উল্লেখ করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন।

রবিবার সকাল ১১টায় তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এদিন সাত খুনের মামলার দুটি মামলার রায় হাইকোর্টে পাঠানো হয়। প্রতিটি মামলার রায়ে রয়েছে ১৬৩ পাতা ও ১১ হাজার করে লাইন। গত ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলার রায় দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আরও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘এটি একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি তথা সন্ত্রাসীদের কাজ। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদুস্য। অপরজন (নজরুল) সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর নূর হোসেন ও নজরুল ইসলামের মধ্যকার বিরোধ ও দ্বন্দ্বেই সাত খুনের ঘটনা ঘটেছে। দুই জনেই সন্ত্রাসী ছিলেন, দুজনের ছিল বিশাল বাহিনী। দুজনেই এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন। নূর হোসেনের প্রধান টার্গেট ছিলেন নজরুল। কিন্তু এখানে একজন নজরুলকে হত্যা করতে গিয়ে নূর হোসেন বাহিনী ও র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে নিরীহ আরও ছয় জনকে।’

দুপুর দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক ও নাজির আবদুল বাতেন মোড়লের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি দল কঠোর পুলিশ প্রহরায় মামলার এসব সংশ্লিষ্ট নথি হাইকোর্টে দাখিল করতে রওনা দেন।

পিপি বলেন, ‘সাত খুন মামলার রায় সর্বকালের সর্বোচ্চ সাজার একটি। চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রত্যাশিত রায় হয়েছে। এখন এ মামলার রায় ও জুডিশিয়াল রেকর্ড উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডেথ রেফারেন্সে শুনানি হবে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে নিম্ন আদালতের রায় হাইকোর্টেও বহাল থাকবে।’

পিপি আরও জানান, সাত খুনের দুটি মামলা দায়ের করা হয়। একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি। এ মামলার ভিকটিম ছিলেন পাঁচ জন। অপর মামলাটির বাদী নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। এ মামলায় ভিকটিম ছিলেন  দুই জন। দুটি মামলার রায় আলাদা আলাদা ঘোষণা করা হয়েছে এবং দুটি মামলায় অনুরূপ সাজা ভোগ করতে হবে। একই দিন থেকে সাজা ভোগ শুরু হবে। যারা পলাতক (১২ জন) আছেন তারা যেদিন আত্মসমর্পণ করবেন কিংবা গ্রেফতার হবেন সেদিন থেকেই সাজা শুরু হবে।

পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ‘র‌্যাব একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। দেশের ক্রান্তিলগ্ন থেকে শুরু করে জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল এসব কাজে র‌্যাবের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। র‌্যাব একটি প্রশংসিত বাহিনী। র‌্যাবের উচ্চাভিলাষী কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে পাবলিকের সঙ্গে মিশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এর দায় পুরো বাহিনীর ওপর না। যারা ঘটিয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত দায়। এর পেছনে তাদের ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, উচ্চভিলাষী ঘৃণ্য কাজেই ঘটনাটি ঘটেছে। এ সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সামাজিক মর্যাদা কিছুটা নষ্ট হলেও সামগ্রিকভাবে র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি।’

পিপি আরও জানান, ‘বিচারক রায়ের পর্যালোচনায় র‌্যাবের যেমন প্রশংসা করেছেন তেমনি কিছুটা তিরষ্কারও করেছেন। যেন ভবিষ্যতে র‌্যাব বাহিনীতে এ ধরনের ব্যক্তি লোভ-লালসা ও উচ্চাভিলাষী বাসনায় যে কোনও ঘৃণ্য কাজ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকা। তিরষ্কার মানে ভবিষ্যতে যাতে এ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তাছাড়া যারা আছেন তারাও যেন সতর্ক হয়ে যান। বিচারক এটাকেই তিরষ্কার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।’

পিপি আরও জানান, অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকায় আদালত ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আর অপহরণে সহযোগিতায় সাত জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড সঙ্গে আরও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও ৭ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্তদের ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল  ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। এর ৩ দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে ছয়জনের লাশ। পরদিন আরও একজনের লাশ ভেসে ওঠে নদীতে। নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকার ছাড়া বাকিরা নিহতরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এরপর স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।

/এফএস/টিএন/

আরও পড়ুন: ‘সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য
স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও ভূতের ভয়ে সরকারের ঘুম আসে না: গয়েশ্বর
স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও ভূতের ভয়ে সরকারের ঘুম আসে না: গয়েশ্বর
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
অবন্তিকার আত্মহত্যা: প্রশাসনকে লালকার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার