X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ দেশেই ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৩আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৪২

 

রোহিঙ্গা শুমারি নোয়াখালী হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে নয়, নিজ দেশেই ফিরতে চান কক্সবাজারে অবস্থানরত শরণার্থী রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক শক্তিশালী সংস্থা ও দেশের সহযোগিতায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তারা। আর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর আরও চাপ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।  কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলা ট্রিবিউনের মাধ্য তারা এই আহ্বান জানান।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউনুছ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুনেছি নোয়াখালীর হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর খুব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।  আমরা সেখানে যেতে চাই না। ওখানকার চেয়ে আমাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।’

ঠেঙ্গার চর ঝুঁকিপূর্ণ নয়—প্রতিবেদকের এমন কথার জবাবে মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘এরপরও আমরা ঠেঙ্গার চরে যাব না। তার চেয়ে আমাদের মিয়ানমারের আরকানের কোনও নির্ধারিত এলাকায় জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে রাখা হোক।’

উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে যাব না, তার চেয়ে আমাদের নাফ নদীতে ডুবিয়ে মারলে ভালো হয়। কারণ, আমরা এই ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবস্থান করছি শুধু একটি ন্যায় বিচারের অপেক্ষায়।’

টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান দুদু মিয়া বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এই দেশের অনেক ক্ষতি করে ফেলছি। এ কারণে বাংলাদেশের ঋণ আমরা রক্ত দিয়েও শোধ করতে পারবো না। তাই আমাদের একটাই দাবি, মানবিক বিবেচনা করে আমাদের হাতিয়ায় না নিয়ে আইনি-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।’

ওই ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘লেদা ক্যাম্পে আমরা চার হাজার ৮৬৬টি পুরনো পরিবার এবং নতুন করে এক হাজার ৫৮০ পরিবার রয়েছি। এসব রোহিঙ্গা পরিবারের একজনের মুখ থেকেও শুনি নেই যে, তারা হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে যাবে। তাই সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের যেকোনও মূল্যে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। মিয়ানমারে মরলেই আমরা শান্তি পাব।’

এদিকে, সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আজ কক্সবাজারসহ দেশে এত অশান্তি। রোহিঙ্গারাই দেশে খুন, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। একের পর এক বনভূমি দখল করে গড়ে উঠছে রোহিঙ্গা বসতি। তাই, দীর্ঘদিন পর হলেও রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় কক্সবাজারবাসী আনন্দিত।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে তিনি কিছুই জানেন না। লিখিত নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের অবস্থান করার কারণে আইন -শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা ও শামলাপুরের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছেন। এর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক শরণার্থী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে এসব রোহিঙ্গার জন্য  উন্নত বসবাসের ব্যবস্থা করে সেখানে নতুন করে শেল্টার, স্কুল, হসপিটাল, মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনা বানানোও পরিকল্পনা করা হয়। এরপর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গার চরে তাদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, এরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।  জাতিসংঘ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার অভিযোগ এনেছে।  রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ, হত্যাসহ নানা নির্যাতনের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

 আরও পড়ুন:  নাফে বাংলাদেশি জেলেকে হত্যা: মিয়ানমারকে তীব্র প্রতিবাদ

/বিটি/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক