বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শপথের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলো নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ি পৌরসভার এই নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। প্রভাব খাটিয়ে ভোট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি পৌরসভার মোট ভোটার ১০ হাজার ১১৭ জন। এর মধ্যে পাহাড়ি ভোটার রয়েছে এক হাজার ৭০০ জন। তিন মেয়র প্রার্থীর সবাই গুরুত্ব দিচ্ছেন পাহাড়ি ভোটারদের প্রতি। তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাফর আলী নৌকা প্রতীক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রার্থী ও দলটির উপজেলা কমিটির সভাপতি ওমর আলী ধানের শীষ প্রতীকে এবং ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান আজিজ মোবাইল ফোন প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে তিন প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তারা জানান, ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বাঘাইছড়িতে অবস্থান করছেন। তারা নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ভোট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই দুই প্রার্থী। নির্বাচনে বিজিবি মোতায়নের দাবি জানান তারা।
তবে দুই মেয়র প্রার্থীর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন বলছে, কোনও প্রকার বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপি প্রার্থী ওমর আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থী পৌর এলাকার বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এনে জড়ো করেছেন। তারা নির্বাচনের দিন ভোট ছিনতাই করতে পারে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা আইন-শৃঙ্খলা সভায় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্বাচনের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে এবং মোবাইল টিমও রাখা হবে। তাদের কথায় আমরা ভরসা রাখতে চাই। সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকদের আওয়ামী লীগের লোকেরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের দলীয় অনেক নেতাকে বলতে শুনেছি, তারা নাকি ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করতে পারে। এছাড়া পৌর এলাকায় বসবাস করে না, এমন লোকের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে। এদের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করানো হতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা সভায় সব প্রার্থীকে আইন মেনে চলার অনুরোধ করেছে প্রশাসন। আশা করছি, ভোটের দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার জয় নিশ্চিত।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাফর আলী তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের সরকার উন্নয়ন করেছে। কিন্তু আগের মেয়র সেই উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগাতে পারেননি আমাদের বাঘাইছড়ি পৌরসভায়। এখানকার মানুষ পৌরসভার উন্নয়ন চায়। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকায় বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি হাজি মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বারবার কেন্দ্র থেকে দলীয় সরকারের অধীনস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার অভিযোগও রয়েছে। আমি ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচন দেখেছি, কীভাবে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করা হয়। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম কিছুই করার ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আমাদের মতো চেয়ে চেয়ে দেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় তেমন কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু আমাদের কর্মীদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। সেই বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায় অবহিত করা হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন এই পৌরসভায়। আমরা মনে করি, বাঘাইছড়ি নির্বাচন তাদের জন্য একটি টেস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই পরীবর্তীতে তাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।’
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বর বলেন, ‘বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনে আবোল-তাবোল বকছে। সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে জনগণ বুঝে গেছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে দিয়ে হবে। তাছাড়া বাঘাইছড়ির লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন।’
রাঙামাটি জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি’র (সনাক) সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘নতুন ইসি দায়িত্ব নিতে নিতেই এই নির্বাচন। আমরা আশা করি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হবে এখানে।’
এদিকে, বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৯টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তথ্য জানিয়ে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘১৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের পর কোনও বহিরাগত বাঘাইছড়িতে অবস্থান করতে পারবে না।’
এই নির্বাচন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরেই কাজ করছি। কোথাও কোনও অনিয়ম দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ভূমিকা পালন করবে।’
/এফএস/ এপিএইচ/
আরও পড়ুন-
রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু
ভূমিহীনদের ফাঁসিয়ে ঋণ তুলে ফেরারি আ.লীগের দুই নেতা!
