X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি রসরাজের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:২৩আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০৬

রসরাজ দাস (মাঝখানে)

ফেসবুকে বিতর্কিত ছবি পোস্টকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় রসরাজ দাসকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রায় আড়াইমাস কারাগারে থেকে গত ১৬ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে ভয় আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রথমে নিজের বাড়িতে না ফিরে চলে যান হবিগঞ্জের মাধবপুরেবোনের শ্বশুর বাড়িতে। সম্প্রতি তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তবে এখনও তার আতঙ্ক কাটেনি। ফিরে পাননি স্বাভাবিক জীবন। ভয়ে জাল নিয়ে মাছ ধরতেও বের হন না। মা-বাবা আর কাছের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেই সময় কাটছে তার।      

রসরাজের বড় ভাই দয়াময় দাস জানান, গত বছর ২৯ অক্টোবর  ফেসবুকে বিতর্কিত ছবি পোস্টের অভিযোগে  একদল লোক রসরাজকে  মারধর করে  পুলিশে দেয়। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ১৬ জানুয়ারি জেল থেকে বের হয় রসরাজ । কারাগারে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলেও তার কোনও চিকিৎসা হয়নি।  মুক্তির পাওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি জানান, রসরাজ এখন  আর জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায় না। মা-বাবা আর পাশের বাজারে বসে সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটায়। আসলে তার মধ্যে এখনও ভয় কাজ করছে।
স্থানীয় গৌর মন্দিরের অনুষ্ঠানে রসরাজ (সোয়েটার পরা, বসা) বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রসরাজ দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয় বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের। এ সময় রসরাজ বলেন, ‘জেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে  শারীরিক অসুস্থতা পিছু ছাড়ছে না। আগে  জাল লইয়া গেলে (মাছ ধরতে গেলে) দিনে ৩শ টাকা করে পাইতাম। অহন তো জালে যাইতে পারতাছি না, শইলে দেয় না। অহন বাজারো বইয়া আড্ডা দেই। কী আর করমু!’

তিনি জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নাসিরনগর গৌর মন্দিরে মহোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে দেখার জন্য এলাকার উৎসুক লোকজন জড়ো হয়।

রসরাজ দাস বলেন, ‘এলাকার মানুষ বুঝতে পারছে ফেসবুকের ঘটনায় আমি জড়িত আছিলাম না। অনেকেই আমারে কইছে, তরে অযথা এই ঘটনাত নিয়া ফালাইছে।’ 
মাছ ধরছেন না,তাহলে এখন কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রসরাজ দাস জানান, ‘লেখাপড়া জানি না। জানলে তো কোনও না কোনও চাকরি কইরা খাইতাম। আমারে কেডা চাকরি দেবো? ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, আমি যেন আগের মতো ভালো আর সুস্থভাবে চলতে পারি। শইলডা সুস্থ অইলে আবারও কাম কাইজে লাগমু।’

গৌর মন্দিরের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে রসরাজ দাস বলেন, ‘শুনছি আমারে ধইরা নেওয়ার পর হেরা মন্দিরটার ওপর হামলা করেছে। মূর্তিগুলো ভাঙছে। অহন আবার সরকার নতুন কইরা বানাই দিসে, দেইখা বালা লাগতাছে। গৌর মন্দিরে যাওয়ার পর  এলাকার মানুষও আমারে নানা কথা কইয়া সান্ত্বনা দিছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রসরাজ জানান, ওই ঘটনার কথা মনে হলে এখনও তিনি ভয় পান। আতঙ্ক কাজ করে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে  ধর্ম অবমাননার অভিযোগে  নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামের রসরাজ দাসকে এলাকার একদল লোক মারধর করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। এ ঘটনার পরের দিন ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  তবে পুলিশের দেওয়া  ফরেনসিক রিপোর্টে রসরাজের  মোবাইল থেকে ধর্ম অবমাননার ছবি আপলোডের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপনের পর জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন পুলিশের পরবর্তী  তিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন।

রসরাজকে পুলিশে দেওয়ার দিনই নাসিরনগর উপজেলা সদরে একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০টি মন্দিরসহ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর নাসিরনগর থানায় মোট আটটি মামলা হয়। এসব মামলায় কয়েক হাজার লোককে আসামি করা হয়।  পুলিশ এ ঘটনায়  শতাধিক লোককে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে।

এদিকে নাসিরসগর থানার ওসি আবু জাফর জানিয়েছেন, শিগগিরই হরিপুর গ্রামে রসরাজের বাড়ির আশেপাশে থেকে পুলিশ প্রহরা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। রসরাজের ওপর হামলার পর থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ।   

/এফএস/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের