X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘাইছড়ি পৌর নির্বাচন: আ. লীগ প্রার্থীর বিজয়ের নেপথ্যে

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:৩৮আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:৩৮

মো. জাফর আলী দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির দুর্গম পৌরসভা বাঘাইছড়ি বিএনপি দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখানে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকারের উন্নয়ন যাত্রার সুফল ভোগ করতেই পৌরবাসী দলটির প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছেন বলে মন্তব্য বিশিষ্টজনদের। তবে পরাজিত প্রার্থীরা এই নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ এনেছে।

নির্বাচনে মেয়র পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে জিতেছেন আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাফর আলী। দ্বিতীয় হয়েছেন মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান আজিজ। বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও দলটির মনোনীত প্রার্থী উপজেলা কমিটির সভাপতি ওমর আলী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হয়েছেন তৃতীয়।

বিএনপি’র ভরাডুবির পেছনে উন্নয়নের প্রয়োজনেই মানুষ সরকার দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সাংবাদিক মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘ একযুগ হলো এই পৌরসভায় চোখে পড়ার মতো কোনও উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু তারপরও ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়েছিল পৌরবাসীকে। যেহেতু এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তাই এ দলের প্রার্থী মেয়র হলে এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত বলে মনে করেছেন ভোটাররা।’

রাঙামাটি জজ কোর্টের আইনজীবী ও বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. শফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং আছে, এ কারণে ভোট কাটাকাটি হয়েছে। আর আঞ্চলিতার কারণে চট্টগ্রামের সব মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেয়। এই দলের প্রার্থী জাফর আলী খান তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও বর্তমানে কার্বারি সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সরকারি দলের উন্নয়নে অংশীদার হতেই ভোটাররা তাকে বেছে নিয়েছে।’

নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধিনে এটি ছিল প্রথম নির্বাচন। নতুন নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেওয়ার চারদিনের মাথায় শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হলো এই নির্বাচন। তাই অনেকেই এটাকে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছিল। কিন্তু কারচুপির অভিযোগ ওঠায় তারা কতোটা সফল তা নিয়ে প্রশ্ন দেখছেন অনেকে।

যদিও নির্বাচনের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ ছিল না। প্রার্থীরা প্রত্যেকে বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত যদি এমনভাবে ভোট চলতে থাকে সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। শেষ হাসি হেসেছেন মো. জাফর আলী। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের উন্নয়ন যাত্রায় পৌরবাসী নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য আমাকে ভোট দিয়েছে। আমিও তাদেরকে হতাশ করবো না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের মহাসড়কে এই পৌরবাসীকে সঙ্গে নেবো। আমার প্রথম কাজ গত ১২ বছরে পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়নি এবার তা দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা। এছাগা এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যও কাজ করে যাবো। সম্প্রীতিই পারে উন্নয়নের পথকে এগিয়ে নিতে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাস্তা-ঘাট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোর কাজ আগে হাতে নেবো।’

এদিকে পরাজয়ের পেছনে নিজের দলের মানুষকেই দায়ী করেছেন বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী ওমর আলী। তার অভিযোগ, ‘আমার দলের অনেক মানুষ টাকার কাছে কেনাবেচা হয়েছে। দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন বাহারি দলের মনোনয়ন চেয়েছিল, আমিও চেয়েছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা ও মনোনয়ন বঞ্চিতরা আমার বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কেন্দ্রে দেখেছিলাম পোলিং এজেন্টরা পুরো ব্যালট পেপারে আগেই সিল মেরে রাখছে এবং দলীয় ভোটাররা গেলে ২-৩টি করে ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছে। এমন না হলো ভোটের এতো ব্যবধান হতো না।’

নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপি হয়েছে অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান (আজিজ) বলেন, ‘নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা লোকজনরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে যোগসাজশ করে আগেই প্রায় দুই হাজার ব্যালট পেপার দিয়েছে। দলীয় কর্মীরা ভোট দেওয়ার সময় প্রত্যেকে পাঁচটি করে সিল মেরে বাক্সে ভরেছে। আর প্রশাসন বাইরে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখিয়েছে। আমরা দেখেছি বাইরে সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু তারা ভেতরে এমন কাজ করেছে তা তো কেউ জানে না।’

পরাজিত প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কতোটুকু স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে তা সবাই দেখেছে। আমরা শুধু রেফারির দায়িত্ব পালন করেছি। যদি নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে লিখিতভাবে দিলে আমরা অবশ্যই তা যাচাই করে দেখবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া। আমরা শুধু সেটাই চেষ্টা করেছি। পৌরবাসী আমাদের এই কাজটি করতে সহযোগিতা করেছে, তাই তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন