X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষাশহীদ রফিকের নামে জাদুঘরের বেহাল দশা

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:০৪আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:২৭

Manikganj-Rafik

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধরা ইউনিয়নের পারিল গ্রামেই জন্ম হয়েছে ভাষাশহীদ রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিকের। ৫২ ভাষা আন্দোলনের শুরুতে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রফিকেই প্রথম শহীদ হয়েছিলেন ।

শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে তার গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। আর মূল ফটকের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে রফিকের ম্যুরাল। তবে স্থাপিত ম্যুরালের সঙ্গে রফিকের ছবির কোনও মিল নেই।

পাঠাগার ও জাদুঘর সম্পর্কে লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন জানান, রফিকের স্মৃতির অবশিষ্টটুকুও সংরক্ষণে নেই এই জাদু ঘরে।আর পাঠাগারে ভাষা আন্দোলনের উপর পর্যাপ্ত বই নেই।

জেলা পরিষদ ২০০৮ সালে ৩৪ শতাংশ জমির উপর নির্মাণ  করে এই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। ২০০০ সালে রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রশিকার নিজস্ব অর্থায়নে তার পরিবারকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। সেখানেই বসবাস করেন শহীদ রফিকের পরিবারের একাংশ। রফিকের নামে গড়া স্মৃতি জাদুঘরে রফিকের শৈশবের কোনও স্মৃতিচিহ্ন না থাকলেও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে। আর ২০১৬ সালে শহীদ রফিকের বাড়ির আঙিনায় বৃহৎ পরিসরে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। রফিকের পৈতৃকভিটায় আছেন তার বড় ভাই আব্দুল খালেকের স্ত্রী গোলেনূর বেগম (৭০), ভাতিজা শাহজালাল বাবু ও তার স্ত্রী।

রফিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে গোলেনূর বেগম বলেন, রফিকের একমাত্র জীবিত ভাই খোরশেদ আলম মানিকগঞ্জ সদরে সরকারের বরাদ্দকৃত বাড়িতে থাকেন। রফিক যখন শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বৎসর। বছরে সরকারিভাবে বরাদ্দ ৬০ হাজার টাকা ভাতা তিনিই নেন। এছাড়া অন্যরা ঢাকায় থাকেন। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সবার তাদের কথা মনে পড়ে বলে অভিযোগ করেন গোলেনূর বেগম।

ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এলাকাবাসী তার সম্মানে পারিল গ্রামের নামকরণ করেন রফিকনগর।আর সেখানেই নির্মাণ করা হয় ভাষাশহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ স্মৃতি পাঠাগার ও জাদুঘর।

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ভাষাশহীদ রফিকের ম্যুরালের ছবির সঙ্গে সাদৃশ্য না থাকালে বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনে আরেকটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে।’

ফিরে দেখা একুশে ফেব্রুয়ারি:

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ রফিক মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের ২২ শেডের সামনের বারান্দাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

রফিকের আত্মপরিচয়:

রফিক ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। রফিকের দাদার নাম মো. মকিম এবং বাবার নাম আব্দুল লতিফ, মায়ের নাম রাফিজা খাতুন। বাল্যকাল থেকেই রফিক ছিলেন চঞ্চল ও প্রাণোচ্ছল। তিনি সিংগাইরের বায়রা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর দেবেন্দ্র কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। দ্বিতীয় বর্ষে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবারও ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালেই তিনি শহীদ হন।

ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ:

শতভাগ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটা মোটমুটি নিশ্চিত যে রফিকই ছিলেন ৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে পুলিশের গুলিতে তার মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল।‘ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনার’ গ্রন্থে ড. রফিকুল ইসলাম ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকায় অবস্থানরত শহীদ রফিকের ভগ্নিপতি মোবারক আলী খানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তার কথায় প্রমাণিত হয়েছে যে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল এবং সেইই ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ।

রফিকের লাশ সনাক্ত এবং আড়ালে থাকা কিছু তথ্য:

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শহীদ রফিকের মৃতদেহ সনাক্ত করেন তার ভগ্নিপতি মোবারক আলী খান। সময় ছিল রাত ৯টার মত। সে সময় রফিকের পরনে ছিল হালকা নীল রঙের সার্ট, শাদা ফুলপ্যান্ট, নেভিব্লু রঙের মোজা, চকচকে কালি করা পুরনো ইংলিশ সু। আর ছিল একটি সেফার্স কলম। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়ুলাহ’র উপস্থিতিতে শহীদ রফিকের জানাজা পড়ান হাফেজ আব্দুল গফুর। পরে তাকে রাত ৩টায় আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়।

শহীদ রফিক হত্যা মামলা:

১৯৫২ সালের ২৮ মার্চ রফিকের মামাতো ভাই মোশাররফ হোসেন খান ঢাকার সদর মহকুমা হাকিম এন.আহমদের এজলাসে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিচারক ফৌজদারি দণ্ড বিধির ১৩৭ এবং ১৩২ ধারার কথা বলে মামলা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন ।

বিয়ের পিড়িতে আর বসা হয়নি রফিকের:

১৯৫১ সালের নভেম্বরে নিজ গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে পানু বিবির সঙ্গে রফিকের বিয়ের কথা পাকা হয়। কিন্তু বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার আগেই রফিক শহীদ হন।

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন : শহীদদের জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদে দোয়া

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক