ফেনী মডেল থানার প্রবেশদ্বারে লাগানো উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলার পরদিন পৌরসভার নয় পরিছন্নতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে থানার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই ফলক ভাঙার ঘটনায় যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, মামলার এজাহারে তাদের কাউকেই আসামি করা হয়নি। এজাহারভুক্ত কোনও আসামিকে গ্রেফতারও করতে পারেনি পুলিশ। মামলার বাদী ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ফেনী মডেল থানার নবনির্মিত প্রবেশদ্বার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন ফেনীর পুলিশ সুপার রেজাউল হক পিপিএম।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে ফেনী পৌর মেয়র আলাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ট্রাংক রোডের মডেল থানা ফটকের সামনে হাজির হন। এসময় তারা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে উদ্বোধনী ফটকটি ভেঙে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর তারা চলে যান। থানার সিসিটিভি থেকেও এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়।
এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার রেজাউল হক পিপিএম থানায় এলে সিসিটিভি থেকে প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ থেকে ফলক ভাঙচুরে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ মঙ্গলবার কোনও মামলা দায়ের করেনি।
ঘটনার পরদিন বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাদী ফলক ভাঙার মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে চিহ্নিত কারও নাম আসামি হিসেবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।
জানা গেছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফেনী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ সুপার রেজাউল হক পিপিএম। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৈঠকের পর পুলিশ সুপার এ ঘটনার জন্য সরাসরি কাউকে দায়ী না করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা আপনারা ভিডিও ফুটেজ দেখলেই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ খাঁন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ফেনী পৌরসভা মেয়র হাজি আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যক্তি ফলক ভাঙার কাজটি করেছে। এটা নিয়ে কোনও আপত্তি থাকলে তা অফিসিয়ালি জানানো যেত। এভাবে ভাঙচুর করার কোনও কারণ থাকতে পারে না।’
এ বিষয়ে ফেনী পৌর মেয়র আলাউদ্দিন মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেনী মডেল থানার গেটসহ থানা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পৌরসভা নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে উদ্বোধন করার কোনও নৈতিক ভিত্তি পুলিশ সুপারের নেই। এ কারণে পৌরসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হলে পুনরায় ফলক স্থাপন করা হবে।’ এই ঘটনায় পৌরসভার নিরীহ নয় কর্মচারিকে আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলে অভিহিত করেন তিনি।
মামলার বাদী এসআই নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জড়িতদের নাম ও পরিচয় খুঁজে বের করাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার কারণে মামলাটি দায়ের করতে দেরি হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উদ্বোধনী ফলক ভাঙার ভিডিওটি দেখুন নিচে-
আরও পড়ুন-
বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে গ্রেফতার: আইজিপি
টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত
/টিআর/