সুন্দরবন থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করলেও পর্যটন খাতের উন্নয়নে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বনের আকর্ষণীয় বেশিরভাগ এলাকায় যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নামার সুব্যবস্থা নেই। মাঝ নদীতে লঞ্চ থামিয়ে দর্শনার্থীদের ট্রলারে করে তীরে নিয়ে যেতে হয়। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নানান সমস্যায় পড়তে হয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের লীলাভূমি সুন্দরবন। শুধু দেশেই নয়, বিদেশিদের কাছেও অন্যতম আকর্ষণীয় এলাকার মধ্যে এটি অন্যতম। সুন্দরবন ভ্রমণে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়লেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাঠামোগত সুযোগ কম থাকায় এখানে পর্যটন শিল্পে বিকাশ হচ্ছে না।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের যুগ্ম সমন্বকারী ও এভারগ্রিন ট্যুরস এর মালিক জে এম কচি বলেন, ‘বনবিভাগের অসহযোগিতার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। হিরণপয়েন্টে নব্যতা সমস্যায় ভোগান্তি বাড়ে। এছাড়া কটকায় ওয়াচ টাওয়ারটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এটি যে কোনও সময় ভেঙে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করমজলে পর্যটকদের যাতায়াত বেশি। সেখানে থাকা কাঠের সেতুটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বনবিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে থাকে। এখানে বন কর্মকর্তরা রশিদ ছাড়া অর্থ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেন।’
সুন্দরবনে যাওয়া লঞ্চ এমভি বোগদাদিয়া ৬-এর মাস্টার মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘হিরণপয়েন্টে ওঠা-নামায় সমস্যা প্রকট। পন্টুনের অবস্থা খুবই খারাপ। কচিখালীর নদীর পাড়ের সিঁড়ি কোনও কাজে আসছে না। এখানে যান ও মালের নিরাপত্তায় লঞ্চে পর্যাপ্ত প্রহরী পাওয়া যায় না। এছাড়া রুটে বয়া, বিকন ও মার্কাও পর্যাপ্ত নেই, অধিকাংশই অকেজো রয়েছে।’
সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া রেলের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বলেন, ‘হিরণপয়েন্ট, আলোকোল পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি। এসব স্থানে পর্যাপ্ত রেস্ট হাউজ নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো না।’
এভারগ্রিন ট্যুরসের গাইড সালেহ আল মামুন চঞ্চল বলেন, ‘হিরণপয়েন্টের ওয়াচ টাওয়ার ব্যবহার হয় না। কটকার টাইগার পয়েন্টের ওয়াচ টাওয়ারটি ব্যবহার করা হলেও ৮ জনের বেশি উঠতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ও গাইডদের জন্য কোনও সুবিধা নেই। নির্ধারিত স্থানগুলোতে জেটি নেই। এক কিলোমিটার দূরে লঞ্চ দাঁড় করে ট্রলারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে হয়। এতে সময় ৩/৪ ঘণ্টা বেশি লাগে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য দুজন সশস্ত্র গার্ড দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।’
সুন্দরবন বিভাগের বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) মো. সাইদ আলী বলেন, ‘সুন্দরবনে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। খাবার, খাবারের প্যাকেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী নদী বা জঙ্গলে ফেলা নিষেধ থাকলেও তা মানা হয় না। এছাড়া অনেকেই লঞ্চে সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে যাওয়ায় শব্দ দূষণের কারণে বন্য প্রাণীর মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এ মৌসুমে পশ্চিম বিভাগের আওতায় ৪২ জনের কাছ থেকে ৪২ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় ৪টি টিমের মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধ করার প্রচেষ্টা চলছে।’
এদিকে পর্যটন খাতের উন্নয়নে সরকারের কোনও পদক্ষেপ না থাকলেও সুন্দরবনে দর্শনার্থী আগমন থেকে রাজস্ব আয় বাড়ছে।
২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে প্রায় ৩০ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ২৭ লাখ, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে প্রায় ৪৪ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৬৪ লাখ, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ৮৬ লাখ, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সোয়া এক কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছর দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। চলতি অর্থ বছরে এ পর্যন্ত সোয়া এক কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। এ মৌসুমের এখনও ২ মাস হাতে রয়েছে।
/এআর/এসটি/