ছেলের জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও ফাঁসির আদেশের খবরে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও হত্যা মামলার পলাতক আসামি আহসান উল্লাহ আনছারী ওরফে বিপ্লব আনছারীর বাবা আব্দুল হামিদ আনছারী ও মা নূরজাহান বেগম। তবে তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কোনও আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন আনছারীর বাবা আব্দুল হামিদ আনছারী। ছেলে বেঁচে আছে কিনা বা কোথায় আছে সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার পর আনছারীর পৈতৃক নিবাস কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের রাজমাল্লীরহাট গ্রামে গেলে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসব কথা বলেন আহসান উল্লাহর বাবা-মা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ আনছারী বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী আহসান কেমন করে কার প্ররোচনায় জঙ্গিদের সংস্পর্শে আসলো আমরা কেউ তার কিছুই জানি না। আমরা আজও বিশ্বাস করতে পারি না সে জঙ্গি হয়েছে। সে কোথায় আছে, কেমন আছে তাও আমরা জানি না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল হামিদ আনছারী আরও বলেন, ‘ছেলে আমার হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত অবস্থায় নিখোঁজ হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার কোনও খোঁজ নেই। সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও আমরা জানি না।’
ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে কিনা তাই জানি না। তাহলে কার জন্য, কিসের জন্য উচ্চ আদালতে যাব!’
এদিকে, ছেলের ফাঁসির রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন আহসান উল্লাহর মা নূরজাহান বেগম। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসার জন্য টাকা নিতে এক বছর আগে সর্বশেষ সে বাড়িতে আসছিল। তার বাবা চিকিৎসার টাকাও দিতে পারে নাই। এখন ছেলে বাঁচি আছে না মরি গেইছে তাও জানি না বাবা।’
ছেলের জঙ্গি হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে নূরজাহান বেগম বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পাওয়া আমার ছেলে কেমন আছিল তা তার শিক্ষকরাই ভালো জানে। কীভাবে সে জঙ্গি কাজে জড়িত হইছেল কবার পারি না বাবা, মানুষে নিয়া গিয়া ওর মাথা শ্যাষ করি দিছে।’
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে ২০১২ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক ভর্তি হয় আহসান উল্লাহ আনছারী। সর্বশেষ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সে গ্রামের বাড়িতে। তারপর থেকে সে নিখোঁজ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারী গ্রামে জাপানি নাগরিক ওসি কুনিও রিকশায় তার ঘাসের খামারে যাওয়ার সময় জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় কাউনিয়া থানার তৎকালীন ওসি রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত চলাকালে মাসুদ রানা নামে এক জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। সে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করে। জবানবন্দিতে সে তার সহযোগী জঙ্গিদের নামও প্রকাশ করে। এরপর জঙ্গি এছাহাক আলী ও লিটন গ্রেফতার হলে তারাও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তদন্ত শেষে গত বছরের ৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী আট জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এদের মধ্যে মাসুদ রানা, এছাহাক আলী, লিটন, সাখাওয়াত ও আবু সাঈদ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক আছে। বাকি তিন আসামির মধ্যে নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান ও সাদ্দাম হোসেন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। অপর আসামি আহসান উল্লাহ আনছারী পলাতক রয়েছে। মোট ৬০ কার্য দিবসে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়। একজনকে খালাস দেওয়া হয়।
/এফএস/
আরও পড়ুন-
এসপি বাবুল সম্পর্কে যা বললেন শ্বশুর-শাশুড়ি