X
সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
৩ আষাঢ় ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে হার না মানা ভ্যানচালক জায়দা বেগম

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
০৮ মার্চ ২০১৭, ০০:০৭আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৭, ০৯:৩৫

ভ্যান চালাচ্ছেন জায়দা বেগম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা জায়দা বেগম। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই নারী জীবিকার তাগিদে ধরেছেন ভ্যানের হ্যান্ডেল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দু-মুঠো ভাতের জন্য উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান তিনি।
জায়দা বেগমের জন্ম দরিদ্র পরিবারে। চেহারা কালো বলে কেউ বিয়ে করতে চায়নি তাকে। ৩০ বছর বয়সে এসে তার বিয়ে হয় শাহা জামাল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। বছরখানেক সংসার করেন। কিন্তু জায়দার গর্ভে সন্তান রেখেই তাকে ছেড়ে চলে যান স্বামী। নিরুপায় হয়ে পড়েন জায়দা। তখন জীবন-জীবিকার তাগিদে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে চলতেন তিনি। এর মধ্যে জন্ম নেয় পুত্রসন্তান।

অভাবের সংসারে ভারতের সীমান্তবর্তী পদ্মার দুর্গম বাংলাবাজার চর ছেড়ে ছেলে জায়দুল হককে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২০ বছর আগে জায়দা বেগম চলে আসেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামে। এখানে ৫ কাঠা জমি কিনে শুরু করেন নতুন জীবন। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার তাগিদে কোনও পেশাকে ছোট করে দেখেননি তিনি। এভাবেই কেটে গেছে তার জীবনের ৫০ বছর।

আড়াই মাস আগে স্থানীয় এক এনজিও থেকে কিস্তিতে ৩২ হাজার টাকা নিয়ে একটি যন্ত্রচালিত ভ্যান কেনেন জায়দা বেগম। নিজ এলাকায় কয়েকদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের রাস্তায় চালকের আসনে নেমে পড়েন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জোতকাদিরপুর-নারায়নপুর-বাঘা সড়কে ভ্যান চালান তিনি।

যাত্রী পরিবহন করে প্রতিদিন জায়দার আয় হয় প্রায় ২৫০-৩৫০ টাকা। ব্যাটারি চার্জ হিসেবে খরচ হয় ২০ টাকা। সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দিতে এখন তার কোনও অসুবিধা হয় না। প্রতিদিনের খরচবাদে বাড়তি কিছু টাকাও জমা করতে পারেন তিনি।

বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে মোটামুটি ভালোই আছেন জায়দা। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলেকে লেখাপাড়া করাচ্ছেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছেলে জায়দুল হকের বয়স ১৫ বছর। বর্তমানে সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জায়দা নিজে লেখাপড়া জানেন না। তার ইচ্ছা ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা।

ভ্যান চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে জায়দা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও কাজকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। নারীরা অনেক সময় চক্ষুলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে চান না। কিন্তু অন্যদের কু-কথায় নারীদের থেমে থাকলে চলবে না। পুরুষদের পাশাপাশি নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে হবে।’

সমাজে পুরুষের পাশাপাশি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই ভ্যান চালাচ্ছেন বলে জানালেন জায়দা বেগম। তিনি মনে করেন, দেশে বিভিন্ন যানবাহনে পেশাদার নারী চালক আরও দরকার। কারণ নারীদের জন্য পরিবহনের বিশেষ কোনও সুবিধা নেই। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে নারী চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা তার।

এ প্রসঙ্গে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপাধ্যক্ষ নছিম উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারীরা সহজে ধৈর্যহারা হয় না। তাদের মধ্যে ওভারটেক করার প্রবণতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে নারীরা ভ্যানচালকের আসনে বসলে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে। আমি মনে করি, গাড়িচালক হিসেবে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি নিরাপদ। এতে সড়কে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।’

স্থানীয় বেসরকারি স্ব-উন্নয়নের প্রকল্প কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিকীও একই অভিমত ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেছেন, ‘খামখেয়ালি স্বভাব আর অকারণে ধৈর্যহারা হওয়ার প্রবণতা নারীদের তুলনায় পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাই গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের ওপর নারীর হাতই বেশি নিরাপদ।’

আবু বাক্কার সিদ্দিকীর মন্তব্য, ‘গ্রামীণ নারীরা আগের চেয়ে উন্নত হলেও সার্বিকভাবে তারা এখনও প্রান্তিক পর্যায়েই রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। যে কোনও সাহসী পেশায় নারীরা যেন এগিয়ে আসতে পারে সেজন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।’

/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেমাই কিনতে যাওয়ার পথে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
সেমাই কিনতে যাওয়ার পথে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
ঘরে থাকা মসলায় বিফ চাপ
ঘরে থাকা মসলায় বিফ চাপ
২৪ ঘণ্টার আগেই পশুর বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
২৪ ঘণ্টার আগেই পশুর বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
জাপান যাওয়ার পথে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিমান ভেঙে পড়েছে
জাপান যাওয়ার পথে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিমান ভেঙে পড়েছে
সর্বাধিক পঠিত
পারমাণবিক কর্মসূচি বৃদ্ধি নিয়ে জি-৭ এর বিবৃতির জবাবে যা বললো ইরান
পারমাণবিক কর্মসূচি বৃদ্ধি নিয়ে জি-৭ এর বিবৃতির জবাবে যা বললো ইরান
গাজায় কৌশলগত বিরতি ঘোষণা ইসরায়েলের
গাজায় কৌশলগত বিরতি ঘোষণা ইসরায়েলের
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: শান্তি সম্মেলন শেষে চূড়ান্ত ঘোষণায় যা বললো সুইজারল্যান্ড
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: শান্তি সম্মেলন শেষে চূড়ান্ত ঘোষণায় যা বললো সুইজারল্যান্ড
ছাগলেই স্বস্তি!
ছাগলেই স্বস্তি!
নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ
নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ