X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের আলু চাষিরা

সি এম তানজিল হাসান ও ইব্রাহিম রনি
১৩ মার্চ ২০১৭, ০১:৪০আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৭, ০১:৪০

অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিরা টানা তিনদিন বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের আলু চাষিরা।এই দুই জেলায় বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতে আলু ভাসতে দেখা গেছে। ক্ষেত থেকে আলু উঠানোর ঠিক আগ মুহূর্তে অতিবৃষ্টির কারণে আলু পচে গিয়ে কৃষকদের সর্বশান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ

অতিবৃষ্টিতে মুন্সীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতে হয়েছে চর এলাকার আলু ক্ষেতে। অপেক্ষাকৃত নিচু এই জমি সমান নয়।তাই সহজে সেখানে বৃষ্টির পানি আটকে গেছে। আজ রবিবার (১২ মার্চ) বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা মাঠে নেমে ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি সরাতে ব্যস্ত ছিল। তবে,এতে ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। কৃষকরা বলছেন, কমপক্ষে চার ভাগের এক ভাগ আলু পচে যাবে। এতে করে লোকসান গুণতে হবে।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, এবার ১৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জেলার প্রায় ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে আলু উত্তোলিত হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির। বাকি ৩০ হাজার ৫০ হেক্টর জমির আলু এখনও উত্তোলন করা হয়নি। সে হিসাবে মোট আবাদের চার ভাগের তিন ভাগ জমির আলু উত্তোলন বাকি আছে।
প্রায় ৭ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন টঙ্গিবাড়ির বালিগাওয়ের আরিফ হোসেন। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে সব কৃষকেরই কমবেশি ক্ষতি হবে। তবে যাদের জমি অপেক্ষাকৃত নিচু, যেখানে পানি আটকে গেছে তাদের আলু প্রায় সব পচে যাবে। আবার যারা সুদে টাকা নিয়ে অথবা আলু অগ্রীম বিক্রি করে টাকা এনে আলু চাষ করেছে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ আলু পচে যাবে।
লৌহজং উপজেলার ক্ষিদিরপাড়ার কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৯৮৪, ১৯৮৯ ও ১৯৯৪ সালের পর এইবার বৃষ্টির কারণে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষিদিরপাড়া প্রায় ১ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে যার প্রায় সবটাই এখন পানির নিচে। পানি সরিয়ে ফসল রক্ষা করতে পারবে বলে আশা করছেন না কৃষকরা। অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের আলু চাষিরা
জেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন,‘জেলার প্রায় ৭৮ হাজার কৃষক প্রত্যক্ষভাবে আলু চাষের সঙ্গে জড়িত। অতিবৃষ্টির কারণে সবাই কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে আমাদের কাছে যে খবর আছে তাতে লৌহজং উপজেলার ক্ষিদিরপাড়া ইউনিয়নের আলু চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে পানি আটকে গেছে এবং সরানোর কোনও উপায় নেই। তবে কৃষকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, যতো দ্রুত সম্ভব আলু উঠিয়ে ফেলা।’
আলুচাষিরা বলছেন এই অবস্থায় আলু তুলে ফেললেও তা হিমাগারে সংরক্ষণ করা যাবে না। যদি বৃষ্টিভেজা আলু সংরক্ষণ করা হয় তাহলে পুরো আলুই পচে যাবে। এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আলু সংরক্ষণ করা যাবে কিনা তা এখনই বলা যাবে না। মাঠ থেকে আলু তোলার পর আলুর অবস্থা বুঝে সেটা বলা যাবে।’

চাঁদপুর প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ

টানা তিনদিন বৃষ্টির কারণে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আলু ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাষিরা জানিয়েছেন, বেশিরাভাগ আলুই নষ্ট হয়ে গেছে। যা এখন তোলা হচ্ছে তাতে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করাও কঠিন হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে আলু

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় আলু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ২১৫০ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১৩২০, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১৫০, কচুয়া উপজেলায় ৪০২০, মতলব উত্তর উপজেলায় ৮০০, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৪৫২৫, শাহরাস্তিতে ৫৫ এবং হাইমচর উপজেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার একটি বিশাল বিলের পুরোটাতেই চাষ করা হয়েছে আলু। ভালো ফলন হলেও এখন তা মিশে আছে বৃষ্টির পানি আর কাদা মাটিতে। এখানকার বেশিরভাগ জমিতেই জমে আছে বৃষ্টির পানি। এর মধ্যেই কোনও কোনও চাষি আলু তুলতে শুরু করেছেন।
চাষি হান্নান কাজী বলেন, আমি ৫০ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। ভালো ফলনও হয়েছিল। ভেবেছিলাম আগামী সপ্তাহে আলু তোলার কাজ শুরু করবো। কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। আমার জমির অধিকাংশ আলুই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দ্রুত আলু তোলার জন্য জামালপুর থেকে শ্রমিক এনেছি। যা তোলা হচ্ছে এসব আলু হিমাগারেও সংরক্ষণ করা যাবে না। আলু তোলার কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তা বিক্রির করে তাও পরিশোধ করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের আলু চাষিরা
জমির পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চাষি জসিম। তিনি বলেন,আমার সব শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ২০ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম, সব নষ্ট হয়ে গেছে।গত সপ্তাহয়েও ভালো ফলন দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন কী হবে? আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। কৃষি ব্যাংকে ঋণও আছে।
মহামায়া এলাকার মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমি ১২০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন জমিতে গিয়ে দেখি আলু সব পচে গেছে। এছাড়া কুমড়া, টমেটো, মরিচসহ আরও বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি অফিস জানায়, মূলত এ সপ্তাহেই কৃষকরা আলু ঘরে তুলতো। বৃষ্টির কবলে পড়ে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ ও কচুয়াতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে পুরো জেলায় কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা দু-একদিন পর জানা যাবে।
/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!