র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরের ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার পর সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেফতারের পর নিহত হন আবু মো. হানিফ মৃধা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা জিডি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওই জিডি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ওই জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত ৪ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হলেও ১৫ দিনেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারনি পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, তারা জিডির ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। আর ওসি জানিয়েছেন, জিডির ফাইল আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজে দেখা হচ্ছে। ফলে জিডি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রবিবার রাতে জিডির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে গেলে পুলিশের এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়।
র্যাবের দাবি অনুযায়ী, গত ১৭ মার্চ দুপুরে আশকোনায় নির্মাণাধীন র্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা চালায় এক জঙ্গি। এ সময় র্যাবের দুই সদস্য আহত হন। সেদিন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তিকে তখন আটকের খবর জানায়নি র্যাব। এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে এক ব্যক্তির লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায় র্যাব। ওই সময় র্যাব জানায়, র্যাব সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলার ঘটনার পর আশকোনার মুনমুন কাবাব ঘরের পেছন থেকে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার নাম আবু হানিফ মৃধা। ধরা পড়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
এদিকে, নিহতের পরিবারের দাবি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় হানিফকে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই আবদুল হালিম মৃধা বাদী হয়ে গত ৪ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। জিডির নাম্বার ১৩৫। পরে জিডি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) মোহাম্মদ রাসেলকে।
এ ব্যাপারে ররিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে ওসি ও এস আই রাসেল প্রথমে কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তারা সরাসরি থানায় গিয়ে কথা বলতে বলেন। রাত ৯টায় এস আই রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হ্যাঁ, একটি জিডি হয়েছে। সেটার তদন্ত করছি আমি। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। জিডির কপি আমার কাছে আছে তবে সেটা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কাউকে দেওয়া সম্ভব না।’
অন্যদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফত উল্লাহ বলেন, ‘জিডির ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। বিকেল থেকে বিভিন্ন ফোন পেয়ে দুইজন অফিসার এ জিডির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। ফাইল পেলে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবো।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হানিফের নিখোঁজের ঘটনায় জিডির প্রাথমিক তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এর বেশি আগায়নি। এর মধ্যে শনিবার নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় পড়ে। তখনই মূলত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকে পুলিশ।
জিডিতে আবদুল হালিম অভিযোগ করেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হানিফ ও তার বন্ধু সোহেল বরিশালে চরমোনাই পীরের মাহফিল থেকে লঞ্চে কাঁচপুর সেতুর কাছে নামে। সেখান থেকেই তাদের ডিবি পরিচয়ে তুলে জুয়েল নামের এক চালকের মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। এরপর তারা জুয়েলকে মারধর করে পূর্বাচলে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। পরে জুয়েলের কাছ থেকে সব জানতে পেরে গত ৪ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করা হয়।
/এসএনএইচ/