অনুকূল আবহাওয়া, ভালোমানের বীজ ও কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এবার রাজশাহীতে আলু ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে জমি থেকে ৭১ ভাগ আলু তোলা হয়ে গেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের আলু চাষের লক্ষ্য ছিল ৩২ হাজার ৫৩৫ এবং স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু দুই জাতের আলু চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে যেসব জমি থেকে আলু তোলা হয়েছে তাতে উৎপাদনের গড় হার হেক্টর প্রতি ২২ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন। আর চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।
রাজশাহীর ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর উৎপাদন হয় বাগমারা, মোহনপুর, তানোর, পুঠিয়া ও বাঘায়। অন্য উপজেলাগুলোয় আলুর উৎপাদন হলে তা তুলনামূলকভাবে কম। চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন ও দাম নিয়ে কৃষকরা জানান, এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে আলুর দাম কম আছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) কেজেএম আবদুল আউয়াল জানান, উত্তোলনকৃত আলুর ফলনের হার হেক্টরপ্রতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বর্তমান মৌসুমে আলুর ফলন শতকরা ২২ ভাগ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তবে দাম নিয়ে কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন কৃষক। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে একশ কেজির বস্তাতে প্রায় ২০০ টাকা করে আলুর দাম কমেছে। তবে সামনে রমজান মাসের মধ্যে আলুর দাম বেড়ে যাবে। ফলে কৃষকরা আলুচাষ করে লোকসানের যে আশঙ্কা করছিল, তার সম্ভাবনা থাকবে না।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শিকদাড়ি এলাকার আলুচাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাণিজ্যিকভাবে আলুচাষ করি। এবছর প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে আলুর দাম ছিল ১০০ কেজির বস্তা এক হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বস্তাপ্রতি দাম কমে ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
আরেক আলু চাষী খোকন তালুকদার বলেন, ‘ক্ষুদ্র আলু চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লোকসানের মুখে পড়বে না। এজন্য কৃষকদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। সামনে রমজান মাসে আলুর দাম বেড়ে যাবে। তাই লাভবান হবার জন্য কৃষকদের কোল্ডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করতে হবে। আর আলু সংরক্ষণ করলেই কৃষকদের লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।’
রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত আলু চাষী পবা উপজেলার বড়গাছির রহিমুদ্দিন সরকার জানান, এবার তিনি ও তার ছেলেরা মিলে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভাল হয়েছে। তার এলাকার অন্য চাষিদের আবাদও এবার ভাল হয়েছে এবং উৎপাদন বেশি পাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কিছু কৃষক ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় আলুর গাছ দুর্বল ও আলুতে বিষক্রিয়া দেখা দেওয়ায় ওইসব ক্ষেতে উৎপাদন কম হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজগুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি আলু এখানে উৎপাদন হচ্ছে। তাই স্টোরে জায়গা না পাওয়ায় অনেককে অন্য জেলায় আলু বিক্রি করে দিতে হয়। তিনি রাজশাহীতে কোল্ড স্টোরেজের সংখ্যা আরও বাড়ানোর দাবি জানান।
রাজশাহীতে কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে ২৮টি। এগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন।
রাজশাহী অঞ্চলে আলুচাষ সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, পদ্মা নদীর অববাহিকায় পলি পড়ার কারণে এ অঞ্চলের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আর এ উর্বর মাটি আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আর চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই।
/এসটি/