X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
বিশ্ব পানি দিবস

পানি কমেছে পদ্মা-মহানন্দায়, বিরূপ প্রভাব পরিবেশে

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
২২ মার্চ ২০১৭, ১০:০০আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৯:৪৫

পানি কমে পদ্মার বুকে জেগে ওঠেছে চর

পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে শুষ্ক মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে পানি কমে যায়। ফলে নদীতে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। চরের কারণে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি কাজে। পানি না থাকায় লোকজন মহানন্দা হেঁটেই পার হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে মাছের উৎপাদনও কমেছে। বেকার হয়ে পড়েছে শত শত জেলে।

রাজশাহী নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান জানান, ‘নদীতে পানি কমে যাওয়ায় গরমের সময় খুব গরম পড়ে। আবার ঠাণ্ডাও বেশি দিন স্থায়ী থাকে না। পদ্মার বালুচরের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নদীগুলো ড্রেজিং করা প্রয়োজন। যাতে নদীতে সবসময় পানি থাকে।’

পানি কমেছে পদ্মা-মহানন্দায়, বিরূপ প্রভাব পরিবেশে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘পদ্মার উৎস মুখে পানির প্রবাহ সেই অর্থে নেই। উজানে বাঁধ দেওয়ায় পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে। ফলে বর্ষাকালে পানির সঙ্গে আসা পলি জমা হয়ে থেকে যাচ্ছে। তখন পানির প্রবাহ বেশি থাকে, তাই  বোঝা যায় না। পানির প্রবাহ কমে কমে গেলে পলি সরে না, এতে চর পড়ে। কিন্তু সব সময়ে বাঁধের গেট খোলা থাকলে পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে চর পড়তো না। এজন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হলে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা সম্ভব হতো।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর প্রায় ৪০ ভাগ এবং মহানন্দা নদীর ৮০ ভাগ অংশে পানি থাকে না। পদ্মা ও মহানন্দায় পানি কমে গেলে নদী সংলগ্ন এলাকায় নলকূপগুলোয় পানি কম উঠে। এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। প্রতি বছর ৫-১০ ফুট পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাবার পানির জন্য বসানো হস্তচালিত নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া যায় না। মে থেকে জুলাই এই মাস পর্যন্ত এ অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সংকট থাকে।

পানি কমেছে পদ্মা-মহানন্দায়, বিরূপ প্রভাব পরিবেশে

একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গোদাগাড়ী উপজেলার ৮০ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লিতে বসবাসকারী ৫০ হাজার মানুষের জন্য হস্তচালিত নলকূপ রয়েছে মাত্র ৩০টি। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের চৈতন্যপুর আদিবাসী পল্লিতে বসবাসকারী ৭০টি পরিবারের জন্য হস্তচালিত নলকূপ আছে মাত্র একটি। খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এসব নলকূপে পানি ওঠে কম। আর বর্ষাপড়া পল্লিতে ৬০ পরিবারের জন্য একটি নলকূপ থাকলেও তা গত ৭-৮ মাস ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

এই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন কর্নেল লুইস বলেন, ‘একটি হস্তচালিত নলকূপ থেকে বেশি মানুষ পানি সংগ্রহ করায় খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে নলকূপটি বারবার অকেজো হচ্ছে। কিন্তু তাদের পক্ষে নলকূপ মেরামত করা সম্ভব নয়। ইউনিয়ন পরিষদে থেকে সাহায্যে পাওয়ায় গেলে তখল নলকূপটি মেরামত করা হয়।’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশি গভীরতা দিয়ে হস্তচালিত নলকূপ বসানো গেলে পানি পাওয়া যাবে। কিন্তু আদিবাসীরা দারিদ্র হওয়ায় অর্থ খরচ করে বেশি গভীরতা দিয়ে নলকূপ বসাতে পারছে না।’

চর জেগে ওঠায় দূরে সরে গেছে নদী

ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করেই বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। তার সঙ্গে পদ্মা ও মহানন্দায় অস্বাভাবিকভাবে পানি কমে যাওয়ায় সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপগুলোয় পানি উঠছে কম। এজন্য কৃষকদের সেচ খরচ বেড়ে গেছে।

কৃষকেরা জানান, বৃষ্টি নির্ভর আমন ধান চাষ হয়। অথচ গত কয়েক বছর ধরে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমন চাষ।

পানি কমেছে পদ্মা-মহানন্দায়, বিরূপ প্রভাব পরিবেশে

এ প্রসঙ্গে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ইউডিপিএস নদী ও জীবন প্রকল্প ২ ফোকাল পারসন আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় নদীর দুই পাড় ভাঙছে। শুল্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নদীর দুই পাড়ে বিশাল চর জেগে উঠছে। নদীর গভীরতা কমে গেছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে ডেজিং করে গভীরতা ফিরিয়ে এনে পানি সংরক্ষণ করতে হবে। আর বরেন্দ্র অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন ঘটানো গেলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে। তখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পদ্মা ও মহানন্দা ছাড়াও তিস্তা, আত্রাই ও করতোয়া নদীতে পানি কমে যাওয়ায় উত্তারঞ্চলে নিরাপদ পানির উৎস কমে যাচ্ছে।

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
শিশুশিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট, মাদ্রাসাশিক্ষক আটক
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা