বরগুনায় সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘরের টিন, চাল ও বেড়াসহ মেঝের ইট পর্যন্ত তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি সুলতান মৃধার বিরুদ্ধে। বরগুনার বেতাগী উপজেলার সড়িষামুরি ইউনিয়নের ভোড়া গ্রামের আবাসন প্রকল্পে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই চক্রের নির্যাতনে ৩৪টি ঘরের বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০০৭ সালে ঘুর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বেতাগী উপজেলার ভোড়া গ্রামে আবাসন নির্মাণ করা হয়। পরে সেই আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় নেয় স্থানীয় ৪০টি পরিবার। ভূমিহীন ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ পরিবারগুলো দিনের বেলায় দূর দূরান্তে কাজ করতে যায়। এই সুযোগে জমির মালিকানা দাবি করেন স্থানীয় প্রভাবশালী সুলতান মৃধা। তিনি পরিবারগুলোকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিলে ভয়ে ৩৪টি পরিবার ঘর ছেড়ে চলে যায়। এ সুযোগে তিনি টিন,বেড়া,দরজা জানালা ও মেঝের ইটগুলো পর্যন্ত লুট করে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। এসময় তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। বর্তমানে এ আবাসনে ৬-৭টি পরিবার রয়েছে। তারাও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সুলতান মৃধা আবাসনের মালামাল লুটে নিয়ে নিজে ব্যাবহার করছেন এবং এলাকায় বিক্রি করেছেন। এছাড়া নিজে মেয়ের জামাইকেও দিয়েছেন জানা যায়।
ওই আবাসনে বসবাসরত মো. জাকির হোসেন জানান, এখানে ৪০টি পরিবার ছিল। নানা রকম ঝুঁকির মধ্যেও আমরা ৬-৭টি পরিবার এখনো বসবাস করছি। আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী একই অভিযোগ করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘরের বেড়ার ও চালের টিন খুলে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে দরজা,জানালা ও বাথরুমের দরজাসহ ইট তুলে নিয়েছে। গ্রামের বেশির ভাগ ঘরেই রয়েছে আবাসন ঘরের টিন, দরজা, জানালা। সুলতান মৃধার মেয়ের জামাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান মৃধা এ লুটপাটের পিছনে কাজ করছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছে।
ভোরা গ্রামের মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘আমি সুলতান মৃধার কাছ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের টিন ও ইট কিনেছি। ১ হাজার ৫০০ টাকা বান্ডিল দরে টিন কিনেছি। আমি একা নয় এ গ্রামের অনেকেই কিনেছেন।’
সড়িষামুরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শিপন জমাদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের মালামাল কেউ আত্মসাত করুক এটা আমি চাই না। এ বিষয়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
অভিযুক্ত সুলতান মৃধা ও তার স্ত্রী সরকারি আবাসনের মালামাল নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কেউ নেই তাই মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোকজন এসব খুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাই জমিদাতা হিসেবে এসব মালামাল নেওয়ার অধিকার আমাদেরও রয়েছে। তারপরও সরকার যদি মালামাল নিয়ে যায় তাহলে তা দিয়ে দিব।’
এ ব্যাপারে বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সরকারি স্থাপনা কোনও ব্যক্তির আত্মসাত করার সুযোগ নাই।’
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: পিরোজপুরে শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা