বরিশালের মেঘনা, তেঁতুলিয়াসহ দক্ষিণের বিভিন্ন নদীতে অবাধে মশারি জাল, বিহিন্দী ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে চিংড়ির রেণু পোনা (গলদা চিংড়ি) নিধনের মহোৎসব চলছে। চিংড়ির রেণু পোনা ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের রেণু পোনাও ধ্বংস হচ্ছে প্রতিদিন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব নিষিদ্ধ রেণু পোনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সড়ক ও নদী পথ দিয়ে বড় বড় ড্রাম কিংবা পাতিল ভর্তি করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান করছে একটি প্রভাবশালী দালাল চক্র। ফলে নদীগুলোতে জলজ প্রাণির সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘নদী থেকে চিংড়ির রেণু ধরায় মৎস্য ভাণ্ডার বিরাট হুমকির মুখে পরেছে। বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে সতর্ক করা হলেও এ বিষয়ে কার্যকরী কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নদী থেকে চিংড়ির রেণু ধরা আজও বন্ধ হয়নি। এজন্য এখনই কৃত্রিম উপায়ে (হ্যাচারি পদ্ধতি) চিংড়ির রেণু উৎপাদন করা হলে নদী থেকে চিংড়ির রেণু ধরা অনেকটাই বন্ধ হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা মৎস্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, একটি চিংড়ির রেণু পোনা ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেণু পোনা ও বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণী প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। সরকার বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেণু পোনা আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও তা মানছে না কেউই। এ কারণে দক্ষিণের নদীতে অন্য প্রজাতির মাছ ও অনান্য জলজপ্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বরিশালের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা মশারি জাল ও বিহিন্দী জাল দিয়ে রেণু পোনা (গলদা চিংড়ি) ধরছে। প্রতিবার জাল ফেলে সাত থেকে আটটি চিংড়ির রেণু পোনা পেলেও তার সঙ্গে উঠে আসছে টেংরা, পোয়া, তপসিসহ অসংখ্য প্রজাতির মাছের পোনা। চিংড়ি পোনা আলাদা করে মাটি ও অন্যান্য পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙায় অথবা চরে ফেলে দেওয়ায় সেগুলো মারা যাচ্ছে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, নেহালগঞ্জ ফেরীঘাট, লাহারহাট ফেরিঘাট, গোমা ফেরিঘাটসহ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী দালাল চক্রের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে রেণু পোনা ক্রয় করে তা বড় বড় ড্রাম ভর্তি করে প্রতিদিন ১৮টি ট্রাকে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশালের একাধিক রেণু ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিন ট্রাকভেদে ১৮ থেকে ৩০টি ড্রাম বহন করা হয়। একেকটি ড্রামে ১০ হাজার করে রেণু বহন করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাকে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ পোনা বহন করা হয়। এছাড়া নদীপথে ট্রলারে পাতিল ভর্তি করে নেওয়া হয় আরও কমপক্ষে ৪০ লাখ রেণু পোনা।’
রেণু ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পাতিল কিংবা ড্রাম প্রতি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই ট্রাক ভর্তি করে রেণু পোনা পাচার করা হয়। টাকা দিতে বিলম্ব হলেই অভিযানের নামে মৎস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রেণু পোনা ভর্তি ট্রাক আটক করে থাকে।
তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজিজুল হক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় রেণু পোনা আটক ও পাচারকারীদের ধরার জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিপণন বন্ধ করা না গেলে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সফল হওয়া দুষ্কর ও সময়সাপেক্ষ।’
/এমও/